Dhaka , Friday, 27 June 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
দুর্গাপুর সীমান্ত এলাকা থেকে মালিকবিহীন ভারতীয় মদ জব্দ [ নলছিটিতে সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের দা’বিতে মা’নবব’ন্ধন ও মহাসড়ক অ’বরো’ধ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেই কা’টা হলো হাসপাতালের বি’দ্যুৎ! সৈয়দ নজরুল মে’ডিকেল কলেজ হা’সপাতা’লে ৩ ঘন্টা অ’চল স্বাস্থ্যসেবা দ্য স্কলারস ফোরাম ঢাকা’র বৃত্তি কার্যক্রম ২০২৫ এর শুভ উদ্বোধন এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ক’কটে’ল বি’স্ফোর’ণ: তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালো এনসিপি সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দু’র্ঘটনা’য় বাবা-মেয়ে নি’হত নোয়াখালীতে ১১ মা’দকসে’বীর কা’রাদ’ন্ড কৃষ্ণ হাজংয়ের সার্বিক খোঁ’জখবর নিতে হা’সপাতা’লে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রামগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হলেন  যু’বদ’ল নে’তা পলাশ নলছিটিতে তা’মাক নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরা’দ্দ ও বে’সরকা’রি সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা সভা প্রাথমিক স্তরের বৃত্তি ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করে ; সচিব কামরুজ্জামান রামগঞ্জে সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ই’য়া’বাস’হ এক মা’দক কা’রবা’রিকে গ্রে’প্তার করেছে ডিবি হাতিয়ার মেঘনা নদীতে স্পিডবোট ডুবি: ২৮ যাত্রী সবাই জী’বিত উ’দ্ধার মেহেরপুরে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত  কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘কাব কার্নিভাল ২০২৫ কোম্পানীগঞ্জে শিক্ষানুরাগী রমজান আলী রাজুর স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত বাবার মোটরসাইকেল থেকে প’ড়ে কলেজ ছাত্রীর মৃ’ত্যু আমাদের দেশপন্থী ও ভারতপন্থীদের যু’দ্ধ হবে’- মুফতী ফয়জুল করিম সোনাইমুড়ীতে দোকান দ’খল করে পাঠাগার, থা’নায় অভি’যোগ জামায়াত নেতাদের বি’রুদ্ধে লালমনিরহাটে জুলাই ওয়ারিয়র্সের বিক্ষোভ মি’ছিল ও স’মাবে’শ পঙ্কিল রা’জনী’তি বিশ্ববিদ্যালয় চ’ত্ত্বরে আনবেন না শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকতা জগতে ও মানবিক কল্যাণে ফররুখ আহমদ চৌধুরীর অবদান  পাবনয় ২৫ কেজি গাঁ’জা, প্রাইভেট কারসহ মা’দক ব্যবসায়ী গ্রে’প্তার মা’দকের আস্তানা ও অসা’মাজি’ক কার্যকলাপের অভিযোগে হি’জরা’র ঘরে আ’গুন কালিয়াকৈরে স্মরণকালের গণজমায়েত, বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন ফরম বিতরণ অনুষ্ঠান  লালমনিরহাটে ইসলাম ধ’র্ম ও মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির ঘ’টনা’য় মুসল্লিদের হাতে আ’টক ২ রূপগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে  প্র’তিব’ন্ধী’দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ  নলছিটিতে ইউপি চেয়ারম্যানের অ’পসা’রণ ও গ্রে’ফতা’রের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ নলছিটিতে পরকীয়া ও স্বর্ণ চু’রির মা’মলায় প্রবাসীর স্ত্রী ও প্রেমিক গ্রে’ফতা’র, কা’রাগা’রে প্রেরণ

ত্রিশালে আবুল মনসুর আহমদ-এর ১২৩ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 07:52:04 pm, Friday, 3 September 2021
  • 468 বার পড়া হয়েছে

ত্রিশালে আবুল মনসুর আহমদ-এর ১২৩ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল

 

মোঃ আসাদুল ইসলাম মিন্টু

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি।।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জন্মগ্রহণকারী উপমহাদেশের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিবীদ আবুল মনসুর আহমদ-এর ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সঞ্জীবন যুব সংস্থা ও আবুল মনসুর আহমদ পাঠাগার-এর আয়োজনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ০৩সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার বিকেলে ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আবুল মনসুর আহমদ-জন্মজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ আলমগীর কবীরের সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথি ছিলেন ত্রিশালের প্রবীণ রাজনীতিবিদ জনাব ফজলে রাব্বী।
প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বাকী বিল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ-এর নাতি ও ডেইলি স্টার পত্রিকার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রায়হান ফরাজী।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিদাতা সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ব্যাংকার জনাব আলতাব হোসেন , বিশিষ্ট কবি রিয়েল আব্দুল্লাহ , আবুল মনসুর আহমদ পাঠাগারের প্রধান উপদেষ্টা রঘুনাথ ভাস্কর , বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর , বিচ্যুতি বেপারীর বাড়ির বংশধর আব্দুল আউয়াল প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সঞ্জীবন যুব সংস্থার সভাপতি ফাহিম আহমেদ মন্ডল ।
আবুল মনসুর আহমদ-এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
(১৮৯৮-১৯৭৯) সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক। তাঁর জন্ম ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে। পিতার নাম আবদুর রহিম ফরায়জী এবং মাতার নাম মীর জাহান বেগম। তিনি ১৯১৭ সালে নাসিরাবাদ মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯১৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এরপর তিনি ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা রিপন ল’ কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বি.এল পাস করেন। এ বছরেই তিনি ময়মনসিংহে আইন পেশা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তাঁর পেশায় নিয়োজিত থাকেন।
আবুল মনসুর আহমদ একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি যে সকল সাময়িক পত্রিকায় কাজ করেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোলতান, মোহাম্মদী, দি মুসলমান, কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদ। তিনি সাপ্তাহিক সোলতান ও মোহাম্মদীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন (১৯২৩-১৯২৬)। তিনি দি মুসলমান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত।
আবুল মনসুর ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দৈনিক কৃষক পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসে নবযুগ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে চাকরি লাভ করেন।
এ ছাড়াও তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতিতেও আবুল মনসুর আহমদ এর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও তিনি এ আন্দোলনের বাস্তবতা সম্পর্কে বেশ সন্দিহান ছিলেন।
একটি অভারতীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে সর্বভারতীয় পর্যায়ে আন্দোলন এবং সে আন্দোলনে গান্ধীর অসহযোগ-এর ডাক ও স্বরাজ আদায়ের লক্ষ্য সম্পর্কে আবুল মনসুর আহমদ তেমন একটা খুশি ছিলেন না। তিনি গান্ধীর এ পদক্ষেপকে অবাস্তব মনে করেছেন।
কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নীতির বিরুদ্ধে। তিনি চিত্তরঞ্জন দাশ এর (১৮৭০-১৯২৫) স্বরাজ্য পার্টির রাজনীতি সমর্থন করেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট এর মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির যে প্রচেষ্টা চলে সে ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। এর পর ১৯২৯ সালে আবুল মনসুর বাংলার প্রজা পার্টিতে যোগ দেন এবং ময়মনসিংহ জেলায় দক্ষতার সঙ্গে কৃষক প্রজা সমিতি সংগঠনের কাজ করেন। একই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।
আবুল মনসুর বামপন্থি কংগ্রেস সমর্থিত ‘কিষাণ সভা’ ও ‘কিষাণ সমিতি’র কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। ১৯৩৭ সালে নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টি যথেষ্ট ভালো ফল করে এবং এ পার্টির নেতা একে ফজলুল হক আশা করেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৭৩-১৯৬২) বাংলায় একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনে সমর্থন পাওয়া যাবে। কিন্তু কংগ্রেস কৃষক প্রজা দলের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠনে রাজি হয়নি। তখন ফজলুল হক মুসলিম লীগের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে বাধ্য হন। কংগ্রেসের এ মনোভাবকে অনেকেই ভালোভাবে নিতে পারেননি। এ ঘটনার ফলে আবুল মনসুর আহমদ কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং মুসলিম লীগের রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে লাহোরে ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাস ভূমির দাবি করা হয়। আবুল মনসুর আহমদ এ দাবি যুক্তিসঙ্গত মনে করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির সম্মেলনে বলেন যে, সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতার কারণে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন যুক্তিসঙ্গত। তিনি ভারতে দু’অঞ্চলে দুইটি মুসলিম প্রধান অঞ্চল নিয়ে দুইটি পৃথক স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের সৃষ্টির দাবি সমর্থন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাঙালি সংস্কৃতির স্বতন্ত্রতার বিষয়টির উপর জোর দেন। ১৯৪৬-৪৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে একযোগে ‘স্বাধীন যুক্ত বাংলা’ সৃষ্টির দাবি তোলেন। সে দাবি বাস্তবতা লাভ করেনি এবং ১৯৪৭ সালে বাংলা প্রদেশও বিভক্ত হয়ে যায়। তখন তিনি কলকাতাকে পূর্ব বাংলায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন। কিন্তু সে দাবিও উপেক্ষিত হয়।
১৯৪৯ সালে আবুল মনসুর আহমদ আওয়ামী মুসলিম লীগ দল প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। এরপর তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
আবুল মনসুর আহমদ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকলেও বিদ্রুপাত্মক রচনার লেখক হিসেবেই তিনি সমাধিক পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত বিদ্রুপাত্মক রচনাগুলো হচ্ছে, আয়না (১৯৩৬-১৯৩৭) ও ফুড কনফারেন্স (১৯৪৪)। তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, সত্যমিথ্যা (১৯৫৩), জীবন ক্ষুধা (১৯৫৫) ও আবে-হায়াৎ (১৯৬৪)। আর স্মৃতিকথা, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯), শের-ই-বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২) এবং তাঁর আত্মচরিত হল আত্মকথা (১৯৭৮)। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), স্বাধীনতা পদক (১৯৭৯) ও নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ আবুল মনসুর আহমদ মৃত্যুবরণ করেন।
স্মরণ সভা শেষে আবুল মনসুর আহমদ-এর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

দুর্গাপুর সীমান্ত এলাকা থেকে মালিকবিহীন ভারতীয় মদ জব্দ [

ত্রিশালে আবুল মনসুর আহমদ-এর ১২৩ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল

আপডেট সময় : 07:52:04 pm, Friday, 3 September 2021

 

মোঃ আসাদুল ইসলাম মিন্টু

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি।।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জন্মগ্রহণকারী উপমহাদেশের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিবীদ আবুল মনসুর আহমদ-এর ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সঞ্জীবন যুব সংস্থা ও আবুল মনসুর আহমদ পাঠাগার-এর আয়োজনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ০৩সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার বিকেলে ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আবুল মনসুর আহমদ-জন্মজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ আলমগীর কবীরের সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথি ছিলেন ত্রিশালের প্রবীণ রাজনীতিবিদ জনাব ফজলে রাব্বী।
প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বাকী বিল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ-এর নাতি ও ডেইলি স্টার পত্রিকার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রায়হান ফরাজী।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিদাতা সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ব্যাংকার জনাব আলতাব হোসেন , বিশিষ্ট কবি রিয়েল আব্দুল্লাহ , আবুল মনসুর আহমদ পাঠাগারের প্রধান উপদেষ্টা রঘুনাথ ভাস্কর , বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর , বিচ্যুতি বেপারীর বাড়ির বংশধর আব্দুল আউয়াল প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সঞ্জীবন যুব সংস্থার সভাপতি ফাহিম আহমেদ মন্ডল ।
আবুল মনসুর আহমদ-এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
(১৮৯৮-১৯৭৯) সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক। তাঁর জন্ম ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে। পিতার নাম আবদুর রহিম ফরায়জী এবং মাতার নাম মীর জাহান বেগম। তিনি ১৯১৭ সালে নাসিরাবাদ মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯১৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এরপর তিনি ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা রিপন ল’ কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বি.এল পাস করেন। এ বছরেই তিনি ময়মনসিংহে আইন পেশা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তাঁর পেশায় নিয়োজিত থাকেন।
আবুল মনসুর আহমদ একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি যে সকল সাময়িক পত্রিকায় কাজ করেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোলতান, মোহাম্মদী, দি মুসলমান, কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদ। তিনি সাপ্তাহিক সোলতান ও মোহাম্মদীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন (১৯২৩-১৯২৬)। তিনি দি মুসলমান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত।
আবুল মনসুর ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দৈনিক কৃষক পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসে নবযুগ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে চাকরি লাভ করেন।
এ ছাড়াও তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতিতেও আবুল মনসুর আহমদ এর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও তিনি এ আন্দোলনের বাস্তবতা সম্পর্কে বেশ সন্দিহান ছিলেন।
একটি অভারতীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে সর্বভারতীয় পর্যায়ে আন্দোলন এবং সে আন্দোলনে গান্ধীর অসহযোগ-এর ডাক ও স্বরাজ আদায়ের লক্ষ্য সম্পর্কে আবুল মনসুর আহমদ তেমন একটা খুশি ছিলেন না। তিনি গান্ধীর এ পদক্ষেপকে অবাস্তব মনে করেছেন।
কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নীতির বিরুদ্ধে। তিনি চিত্তরঞ্জন দাশ এর (১৮৭০-১৯২৫) স্বরাজ্য পার্টির রাজনীতি সমর্থন করেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট এর মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির যে প্রচেষ্টা চলে সে ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। এর পর ১৯২৯ সালে আবুল মনসুর বাংলার প্রজা পার্টিতে যোগ দেন এবং ময়মনসিংহ জেলায় দক্ষতার সঙ্গে কৃষক প্রজা সমিতি সংগঠনের কাজ করেন। একই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।
আবুল মনসুর বামপন্থি কংগ্রেস সমর্থিত ‘কিষাণ সভা’ ও ‘কিষাণ সমিতি’র কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। ১৯৩৭ সালে নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টি যথেষ্ট ভালো ফল করে এবং এ পার্টির নেতা একে ফজলুল হক আশা করেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৭৩-১৯৬২) বাংলায় একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনে সমর্থন পাওয়া যাবে। কিন্তু কংগ্রেস কৃষক প্রজা দলের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠনে রাজি হয়নি। তখন ফজলুল হক মুসলিম লীগের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে বাধ্য হন। কংগ্রেসের এ মনোভাবকে অনেকেই ভালোভাবে নিতে পারেননি। এ ঘটনার ফলে আবুল মনসুর আহমদ কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং মুসলিম লীগের রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে লাহোরে ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাস ভূমির দাবি করা হয়। আবুল মনসুর আহমদ এ দাবি যুক্তিসঙ্গত মনে করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির সম্মেলনে বলেন যে, সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতার কারণে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন যুক্তিসঙ্গত। তিনি ভারতে দু’অঞ্চলে দুইটি মুসলিম প্রধান অঞ্চল নিয়ে দুইটি পৃথক স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের সৃষ্টির দাবি সমর্থন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাঙালি সংস্কৃতির স্বতন্ত্রতার বিষয়টির উপর জোর দেন। ১৯৪৬-৪৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে একযোগে ‘স্বাধীন যুক্ত বাংলা’ সৃষ্টির দাবি তোলেন। সে দাবি বাস্তবতা লাভ করেনি এবং ১৯৪৭ সালে বাংলা প্রদেশও বিভক্ত হয়ে যায়। তখন তিনি কলকাতাকে পূর্ব বাংলায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন। কিন্তু সে দাবিও উপেক্ষিত হয়।
১৯৪৯ সালে আবুল মনসুর আহমদ আওয়ামী মুসলিম লীগ দল প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। এরপর তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
আবুল মনসুর আহমদ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকলেও বিদ্রুপাত্মক রচনার লেখক হিসেবেই তিনি সমাধিক পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত বিদ্রুপাত্মক রচনাগুলো হচ্ছে, আয়না (১৯৩৬-১৯৩৭) ও ফুড কনফারেন্স (১৯৪৪)। তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, সত্যমিথ্যা (১৯৫৩), জীবন ক্ষুধা (১৯৫৫) ও আবে-হায়াৎ (১৯৬৪)। আর স্মৃতিকথা, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯), শের-ই-বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২) এবং তাঁর আত্মচরিত হল আত্মকথা (১৯৭৮)। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), স্বাধীনতা পদক (১৯৭৯) ও নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ আবুল মনসুর আহমদ মৃত্যুবরণ করেন।
স্মরণ সভা শেষে আবুল মনসুর আহমদ-এর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।