
আমিরুল হক, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি ।।
নীলফামারীতে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে চলতি মৌসুমের বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলায় বোরোর চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং চারা হলুদ হয়ে দুর্বল হওয়াসহ ক্ষতির শঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে বোরোর চারা রক্ষায় সাদা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশকিছু পরামর্শ কৃষকদের দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর ও ডিমলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেকেই বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এতে করে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে বিশ্বাস করছেন তারা। গত সপ্তাহ জুড়ে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা সর্বনি¤œ ১০ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। এ সময়েই তীব্র শীতের সাথে মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিক। এ অবস্থায় জেলার কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা নষ্টের আশংকা করছেন।
নীলফামারী জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, চারার বৃদ্ধিতে নিম্ম তাপমাত্রার প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতের সময়ে বোরো ধানের বীজতলা সকাল ১০টা থেকে সাদা পলিথিন শিট দিয়ে ঢেকে রেখে সন্ধ্যার আগে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় পানি সেচ দিয়ে বীজতলার চারা ডুবিয়ে দিতে হবে এবং সকালে সেই পানি বের করে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে দড়ি বা কঞ্চি টেনে বীজতলার চারায় জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী জানান, শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো ধানের বীজতলার চারা হলদে হয়ে গেলে প্রতি শতক জমিতে ২৮০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। এছাড়া ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম পটাশ ও ৬০ গ্রাম জিপসাম সার মিশিয়ে বীজতলায় স্প্রে করতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, অতিরিক্ত শীতে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পঁচা রোগ দেখা গেলে ব্যাভিস্টিন বা মেনকোজেব গ্রæপের যেকোনও একটি ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। যতদিন শৈত্যপ্রবাহ থাকে ততদিন এ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আশানুরুপ ফল পাওয়া যাবে।
সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, এ বছরও তিনি বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। তীব্র শীত ও কুয়াশায় চারাগুলো হলুদ রং ধারন করেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজতলা পরিচর্যা করছি কিন্তু চারাগুলি বড় হচ্ছে না। এ অবস্থায় শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেলে চারাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে আশঙ্কা করছি।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, কৃষি বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার তেমন একটা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বিভিন্ন পরিচর্যার পদ্ধতি অনুসরন করায় কৃষকদের প্রশংসা করে জানান, বড় কোন প্রকিৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মত বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে নিশ্চিত।
প্রসঙ্গত, এ বছর নীলফামারীতে বোরো বীজতলার জন্য ৪ হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও বীজতলা করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে, বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৮১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন ধান।