রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
ঢাকা রাজধানীর কাছ দিয়েই বয়ে গেছে বালুনদী। উত্তর-প‚র্ব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী, বর্ষা মৌসুমে বালু নদী শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের পানি বহন করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সময়োচিত নদী ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের অভাবে বালু নদীটি বর্তমানে মরা নদীতে ও সরু খালে পরিণত হয়েছে।
খরস্রোতা এই নদীটিতে বর্ষা ব্যথিত সারা বছরই পানিশ‚ন্যতা বিরাজ করছে। নদীতে পানি কম থাকায় দু’দিন ধরে বালুবাহী জাহাজ আটকে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পণ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। কাচামাল পঁেচ যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মায়ের দোয়া জাহাজের কর্মচারী আজিম খান বলেন, নদীতে পানি কম। বড় জাহাজ আটকে যাওয়ায় এবং সারি সারি জাহাজগুলো নোঙ্গও করায় নদী পথে যাতায়াত একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো নৌযান বাহনই এখন চলতে পারছে না।
জোয়ার আসলে যদি পানি বাড়ে তবে জাহাজগুলো ভাসলে নদীপথ আবার স্বাভাবিক হবে। মোবারক মিয়া। ইছাপুরা থেকে কাচামাল নিয়ে বালুনদী পথে যাত্রা করেন মাদারটেকের উদ্দেশ্যে। তার মালবাহী ট্রলারও নব্যতা সঙ্কটে আটকে আছে। তিনি বলেন, এখন জোয়ারই ভরসা। দ্রæত নদীতে ড্রেজিং না করলে এ অবস্থা সহজে সারবে না।
শুধু তাই নয়, এ নদীর শাখা-প্রশাখাগুলো উৎসে পানির সঙ্কট, দখল, দ‚ষণ ও নাব্যতা সঙ্কটে ভুগছে। দ‚ষণের কারণে পচা গন্ধে পরিবেশ হুমকির মুখে। এতে মৎস্যসম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে। জানা যায়, বালু নদীর উৎসমুখ শ্রীপুর উপজেলার মার্টা ইউনিয়নের প্রহলাদপুর মৌজায় সৃতী ও পারুলী নদী মিলিত হয়েছে। এই মিলিত ধারা বালু নাম নিয়ে গাজীপুর ও ঢাকার মধ্যে দিয়ে রূপগঞ্জ হয়ে ডেমরার শীতলক্ষ্যা নদীতে মিলিত হয়েছে। পুবাইলে অপর গুরুত্বপ‚র্ণ উপনদী চেলাই ও টঙ্গীতে টঙ্গীরখালে মিলিত হয়েছে। বালু নদীর দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার ও প্রশস্থ ১০০ মিটার। এই নদীর গতিপথে দু’টি পানির লেভেল পরিমাপক স্টেশন একটি পুবাইল ও অন্যটি ডেমরায় এবং একটি প্রবাহ পরিমাপক স্টেশন আছে ডেমরায়। ৫৪ স্থানে দখল, ২৩ স্থানে দ‚ষণ, তিন স্থানে ডুবোচর, তিন স্থানে প্রায় ২৫০০ মিটার ভাঙন ও ৩০টি ব্রিজ আছে। প্রায় ৪০টি খাল ও ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটি বিলের নদীর সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
এএনডি ট্রাউজার ফ্যাক্টরির বর্জ্য আবর্জনার স্ত‚প ও ময়লার পাইপ সরাসরি নদীতে ফেলছে। টঙ্গী সার্কেলে বাবু গার্মেন্ট, আজমেরি গার্মেন্ট, নীলা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, এলইডি স্টার ফ্যাক্টরির বর্জ্যও সরাসরি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। কোনাে প্রকার ইটিপি প্লান ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান নদী দ‚ষণ করছে। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের পর্শি এলাকায় ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বর্জ্য ও ময়লার স্ত‚প বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। বালু নদীর দুই পাড়ে বসবাসরত স্থানীয় জনগণও বর্জ্য ও ময়লার স্ত‚প সরাসরি ফেলছে। এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই।
নদী রক্ষা কমিশন সুত্রে জানা যায়, বালু নদীর শুষ্ক মৌসুমের প্রবাহ ৬০ ঘনমিটার ও বর্ষা মৌসুমে ৭৪৪ ঘনমিটার। এর গভীরতা রূপগঞ্জ ও ডেমড়া পয়েন্টে ৫.৮৫ মিটার থেকে ৯.৬৩ মিটার। এর অববাহিকা প্রায় ৭২২ বর্গকিলোমিটারের চেয়েও অধিক। এই নদীর গতিপথে দুইটি পানির লেভেল পরিমাপক ষ্টেশন একটি পুবাইল ও অন্যটি ডেমরায় এবং একটি প্রবাহ পরিমাপক স্টেশন আছে ডেমরায়। ৫৪ স্থানে দখল, ২৩ স্থানে দ‚ষণ, ৩ স্থানে ডুবোচর, ৩স্থানে প্রায় ২৫০০ মিটার ভাঙন ও ৩০টি ব্রিজ আছে। প্রায় ৪০টি খাল ও ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টি বিলের নদীর সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
লেখক, কলামিস্ট, গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, এক সময় মানুষ নদীর পানি সংগ্রহ করে রান্নার কাজের ব্যবহার করত। এমনকি নদীর পানি পান করতেন। আজ সেই নদীর পানি পঁচা দুর্গন্ধে বিষ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে নদীগুলো দখল ও দ‚ষণের কবলে পড়ছে। নদী রক্ষায় আগে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আফিফা খান বলেন, বালু নদী রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। আগে থেকেই দখলদারদের নদী দখল মুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যারা নদী দ‚ষণ করছেন, তারাও নদী দ‚ষণ থেকে বিরত থাকুন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।