Dhaka , Thursday, 27 March 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
ডাব পাড়তে ডেকে নিয়ে ভাতিজাকে হত্যা, চাচা আটক লালমনিরহাটে ছুরি ধরে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ রামগঞ্জে  টপসয়েল কাটার অপরাধে ১লাখ টাকা জরিমানা  রূপগঞ্জে আগারপাড়া যুব সমাজের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল রূপগঞ্জে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতারণ ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা আদালতের শহীদ উমর ফারুক ব্লাড ডোনার সোসাইটি’র দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  নরসিংদীর শিবপুরে যুবকের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শহীদদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে রূপগঞ্জ ঈদ উপহার, সেলাই মেশিন,ভ্যানগাড়ী বিতরন সিএমপি কর্তৃক বাংলাদেশ পুলিশ বার্ষিক আযান, ক্বিরাত ও রচনা চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণ আমাদের সংকট এখনো শেষ হয় নাই- খলিলুর রহমান ইব্রাহিম  জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২ জন হাতীবান্ধা থেকে ফেনসিডিলসহ এক মাদক কারবারি গ্রেপ্তার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে আটক ৩ জন নোয়াখালীতে পথচারীদের জন্য বিএনপি নেতার ইফতার  সীতাকুণ্ডে কৃষকদলের সম্পাদক নাসির উদ্দিনকে জবাই করে হত্যা মেহেরপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে সকল নেতা কর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য- কাজী মনিরুজ্জামান মনির নরসিংদীতে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন  মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাইস্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৭ বছর পর রামগঞ্জে প্রকাশ্যে বিএনপির ইফতার মাহফিল  কালীগঞ্জে ফেনসিডিলসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ  লালমনিরহাটে মর্যাদার সাথে মহান স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন অসহায়,দূস্তদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন রূপগঞ্জে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন সাতকানিয়ায় কৃষিজমির টপসয়েল কাটার দায়ে দুইজনকে ১মাসের কারাদণ্ড- ২টি ডাম্পার জব্দ শান্তি-স্বস্তির নতুন বাংলাদেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে- আনোয়ারুল আলম চৌধুরী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাই ছিলো বাঙালী জাতীর মুক্তির প্রধান সোপান ডা. শাহাদাত হোসেন

রাত হলেই পদ্মা নদীতে শুরু হয় বালু লুটের মহোৎসব হুমকির মুখে তীররক্ষা বাঁধ।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 07:28:35 am, Tuesday, 24 December 2024
  • 50 বার পড়া হয়েছে

রাত হলেই পদ্মা নদীতে শুরু হয় বালু লুটের মহোৎসব হুমকির মুখে তীররক্ষা বাঁধ।।

 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি।।

  

  

শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীতে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। রাত শুরু হলেই পদ্মা নদীতে শুরু হয় অবাধে বালু উত্তলনের মহোৎসব। হুমকির মুখে পরেছে পদ্মা সেতু সহ জাজিরা-নড়িয়ার ডান তীররক্ষা বাঁধ। ইতোমধ্যেই একশত মিটার ভাঙন দেখা দিয়েছে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা জিরো পয়েন্টের বেরিবাধে। নদী গর্ভে চলে গেছে পাইনপারা আহামেদ মাঝি কান্দির গ্রামের মসজিদ-মাদ্রসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক বসতভিটা।

 

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারনে যেকোন সময় বদলে যেতে পাড়ে নদীর গতি পথ। স্রোত এসে আঘাত হানতে পারে পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধে। 

 

শরীয়তপুর জেলাটি পদ্মা-মেঘনার মত বড় বড় নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রমত্তা পদ্মার ভাঙনে বিভিন্ন সময়ে বিলিন হয়েছে হাজার হাজার বসত বাড়ি, ফসলি জমি, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। নড়িয়ার ভাঙন রোধে পদ্মা নদীর ডান তীররক্ষা বাঁধ নামে একটি প্রকল্প বাস্থবায়ন করেছে সরকার। জাজিরা ও সখিপুরে চলমান রয়েছে আরো দুটি প্রকল্প। পদ্মা নদীর ডান তীররক্ষা বাঁধের অপর প্রান্ত থেকেই  নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর সাধুর বাজার চরআত্রা, ভেদেরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন সিমানায় ও জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর বাবুরচর ও সিডারচর এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত রাতে নদী থেকে কাটার ড্রেজার(খননযন্ত্র) দিয়ে বালু কেটে বলগেট জাহাজে ভরে দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৫০টি খননযন্ত্র দিয়ে চলে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ। একেকটি কাটার(খননযন্ত্র) প্রতি রাতে ৭৫ হাজার ফুট থেকে ১ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করে। বলগেট জাহাজে লোড দিয়ে প্রতি ফুট বালু বিক্রি করা হয় ১.৫০ থেকে ২ টাকা দরে। বলগেট জাহাজে করে এই বালু জেলা ও জেলার বাহিরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এই বালুই এলাকায় ভিটি বালু নামে পরিচিত। বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হয় এই বালু। ভরাটের কাজে এর চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রভাবশালী একটি মহল নদীর বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

পদ্মার ভাঙন রোধে ১ হাজার ৪১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে জাজিরার সফিকাজীর মোড় পর্যন্ত ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ ২০২২ সালে শেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

 

এছাড়া ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট থেকে ভাটিতে সফিকাজীর মোড় পর্যন্ত ৮.৬৭ কিলোমিটার ডানতীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জুনে। 

 

এমনকি ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানায় পদ্মা নদীর ডানতীরে ৫৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। 

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন রাত নেমে আসলেই তীররক্ষা বাঁধ বরাবর নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর সাধুর বাজার, চরআত্রা, নওপাড়া, ভেদেরগঞ্জের কাচিকাটা ও জাজিরার কুন্ডেরচর, বাবুর চর ও সিডাচর এলাকার মাঝ পদ্মায় শুরু হয় বালু উত্তোলনের মাহোৎসব । প্রায় ৫০টি ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বলগেট জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। 

 

এক একটি খননযন্ত্র প্রতি রাতে ৭৫ হাজার ফুট থেকে ১ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করে। বলগেট জাহাজে লোড দিয়ে প্রতি ফুট বালু বিক্রি করা হয় ১.৫০থেকে ২টাকা দরে। বলগেট জাহাজে করে এই বালু জেলা ও জেলার বাহিরে বিবিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এই বালুই স্থানীয় ভাবে ভিট বালু নামে পরিচিত। বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যাবহার করা হয় এই বালু। ভরাটের কাজে এর চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রভাবশালী একটি মহল নদীর বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রশাসন কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করলেও এর সাথে জড়িতরা কোন ভাবেই ফিরছে না বালু উত্তোলন থেকে।

 

স্থানীয় প্রভাবশালী অসাধু সিন্ডিকেট বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে বালু তোলায় আমদে মেতে উঠেছেন। পদ্মার বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুফে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। 

 

স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেও কোন ফল পায়নি। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। বালুখেকো ব্যক্তিরা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।

 

বালুদস্যু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকা 

ব্যবসায়ী রফিক খা বলেন, আমরা ৪টা চালাই আমার সাথে উজ্জ্বল, বাবুরচর থেকে সুরেশ্বর ঘাট পর্যন্ত অনেকেই আছে, দেলোয়ার খা ৩টা, জসিম মল্লিক ৬টা, ফিরোজ খান ৩টা, রিপন শেখ, আজহার শিকারি, সোহাগ, নুরুজ্জামান শেখ, শোভন খান, দিলু খান, সহ সকলের আলাদা আলাদা আছে কিন্তু প্রশাসনিক সমস্যার কারণে উজ্জলের নামই বলি ও সকলের সাথে যোগাযোগ করে।

 

প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত উজ্জল খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রশাসন কি আমার বোনজামাই লাগে? এগুলো ফালতু কথা।”

 

নৌ পুলিশের দুটি পুলিশ ফাঁড়ির একটি নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর ও জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাটে অবস্থিত। ফাঁড়ি দুটির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে বালু উত্তোলন। তাদের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

 

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘পদ্মার ভাঙন রোধে নড়িয়ায় ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। জাজিরা ও সুরেশ্বর আরো দুটি বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। যদি এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন নদীর গতি পথও বদলে দেয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।’

 

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন- আমরা অভিযোগ পেলেই অভিযান পরিচালনা করি। এর আগেও অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার আটক করা হয়েছে এবং জড়িতদের জেল-জড়িমানা করা হয়েছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। তবে কোস্টগার্ড নৌ পুলিশের ভূমিকা আরো জোরদার হওয়া প্রয়োজন। এবিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

 

নড়িয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও- সংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ‘শরীয়তপুরে নড়িয়ায় পদ্মা নদীতে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ১টি কাটার সহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে অভিযান চালিয়ে ১৭ জন বালুদস্যু কে আটক করে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পদ্মা নদীর বাঁধ রক্ষার স্বার্থে অবৈধভাবে কেউ যেন বালু উত্তোলন করতে না পারে সেই লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

 

এবিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের সাথে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, “রাতের আধারে তারা বালু উত্তোলন করে। আমরা মাঝে মধ্যেই  অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আমাদের জনবল কম। পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলন কিছুতেই করতে দেওয়া হবেনা। আমরা এই ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছি।”

 

প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের ছাড়াও নদীতে আরো কয়েকটি সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে। জেলা-উপজেলা প্রশাসনেরও কাজ রয়েছে।”

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

ডাব পাড়তে ডেকে নিয়ে ভাতিজাকে হত্যা, চাচা আটক

রাত হলেই পদ্মা নদীতে শুরু হয় বালু লুটের মহোৎসব হুমকির মুখে তীররক্ষা বাঁধ।।

আপডেট সময় : 07:28:35 am, Tuesday, 24 December 2024

 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি।।

  

  

শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীতে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। রাত শুরু হলেই পদ্মা নদীতে শুরু হয় অবাধে বালু উত্তলনের মহোৎসব। হুমকির মুখে পরেছে পদ্মা সেতু সহ জাজিরা-নড়িয়ার ডান তীররক্ষা বাঁধ। ইতোমধ্যেই একশত মিটার ভাঙন দেখা দিয়েছে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা জিরো পয়েন্টের বেরিবাধে। নদী গর্ভে চলে গেছে পাইনপারা আহামেদ মাঝি কান্দির গ্রামের মসজিদ-মাদ্রসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক বসতভিটা।

 

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারনে যেকোন সময় বদলে যেতে পাড়ে নদীর গতি পথ। স্রোত এসে আঘাত হানতে পারে পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধে। 

 

শরীয়তপুর জেলাটি পদ্মা-মেঘনার মত বড় বড় নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রমত্তা পদ্মার ভাঙনে বিভিন্ন সময়ে বিলিন হয়েছে হাজার হাজার বসত বাড়ি, ফসলি জমি, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। নড়িয়ার ভাঙন রোধে পদ্মা নদীর ডান তীররক্ষা বাঁধ নামে একটি প্রকল্প বাস্থবায়ন করেছে সরকার। জাজিরা ও সখিপুরে চলমান রয়েছে আরো দুটি প্রকল্প। পদ্মা নদীর ডান তীররক্ষা বাঁধের অপর প্রান্ত থেকেই  নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর সাধুর বাজার চরআত্রা, ভেদেরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন সিমানায় ও জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর বাবুরচর ও সিডারচর এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত রাতে নদী থেকে কাটার ড্রেজার(খননযন্ত্র) দিয়ে বালু কেটে বলগেট জাহাজে ভরে দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৫০টি খননযন্ত্র দিয়ে চলে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ। একেকটি কাটার(খননযন্ত্র) প্রতি রাতে ৭৫ হাজার ফুট থেকে ১ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করে। বলগেট জাহাজে লোড দিয়ে প্রতি ফুট বালু বিক্রি করা হয় ১.৫০ থেকে ২ টাকা দরে। বলগেট জাহাজে করে এই বালু জেলা ও জেলার বাহিরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এই বালুই এলাকায় ভিটি বালু নামে পরিচিত। বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হয় এই বালু। ভরাটের কাজে এর চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রভাবশালী একটি মহল নদীর বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

পদ্মার ভাঙন রোধে ১ হাজার ৪১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে জাজিরার সফিকাজীর মোড় পর্যন্ত ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ ২০২২ সালে শেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

 

এছাড়া ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট থেকে ভাটিতে সফিকাজীর মোড় পর্যন্ত ৮.৬৭ কিলোমিটার ডানতীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জুনে। 

 

এমনকি ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানায় পদ্মা নদীর ডানতীরে ৫৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। 

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন রাত নেমে আসলেই তীররক্ষা বাঁধ বরাবর নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর সাধুর বাজার, চরআত্রা, নওপাড়া, ভেদেরগঞ্জের কাচিকাটা ও জাজিরার কুন্ডেরচর, বাবুর চর ও সিডাচর এলাকার মাঝ পদ্মায় শুরু হয় বালু উত্তোলনের মাহোৎসব । প্রায় ৫০টি ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বলগেট জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। 

 

এক একটি খননযন্ত্র প্রতি রাতে ৭৫ হাজার ফুট থেকে ১ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করে। বলগেট জাহাজে লোড দিয়ে প্রতি ফুট বালু বিক্রি করা হয় ১.৫০থেকে ২টাকা দরে। বলগেট জাহাজে করে এই বালু জেলা ও জেলার বাহিরে বিবিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এই বালুই স্থানীয় ভাবে ভিট বালু নামে পরিচিত। বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যাবহার করা হয় এই বালু। ভরাটের কাজে এর চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রভাবশালী একটি মহল নদীর বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রশাসন কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করলেও এর সাথে জড়িতরা কোন ভাবেই ফিরছে না বালু উত্তোলন থেকে।

 

স্থানীয় প্রভাবশালী অসাধু সিন্ডিকেট বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে বালু তোলায় আমদে মেতে উঠেছেন। পদ্মার বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুফে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। 

 

স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেও কোন ফল পায়নি। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। বালুখেকো ব্যক্তিরা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।

 

বালুদস্যু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকা 

ব্যবসায়ী রফিক খা বলেন, আমরা ৪টা চালাই আমার সাথে উজ্জ্বল, বাবুরচর থেকে সুরেশ্বর ঘাট পর্যন্ত অনেকেই আছে, দেলোয়ার খা ৩টা, জসিম মল্লিক ৬টা, ফিরোজ খান ৩টা, রিপন শেখ, আজহার শিকারি, সোহাগ, নুরুজ্জামান শেখ, শোভন খান, দিলু খান, সহ সকলের আলাদা আলাদা আছে কিন্তু প্রশাসনিক সমস্যার কারণে উজ্জলের নামই বলি ও সকলের সাথে যোগাযোগ করে।

 

প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত উজ্জল খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রশাসন কি আমার বোনজামাই লাগে? এগুলো ফালতু কথা।”

 

নৌ পুলিশের দুটি পুলিশ ফাঁড়ির একটি নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর ও জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাটে অবস্থিত। ফাঁড়ি দুটির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে বালু উত্তোলন। তাদের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

 

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘পদ্মার ভাঙন রোধে নড়িয়ায় ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। জাজিরা ও সুরেশ্বর আরো দুটি বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। যদি এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন নদীর গতি পথও বদলে দেয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।’

 

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন- আমরা অভিযোগ পেলেই অভিযান পরিচালনা করি। এর আগেও অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার আটক করা হয়েছে এবং জড়িতদের জেল-জড়িমানা করা হয়েছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। তবে কোস্টগার্ড নৌ পুলিশের ভূমিকা আরো জোরদার হওয়া প্রয়োজন। এবিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

 

নড়িয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও- সংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ‘শরীয়তপুরে নড়িয়ায় পদ্মা নদীতে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ১টি কাটার সহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে অভিযান চালিয়ে ১৭ জন বালুদস্যু কে আটক করে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পদ্মা নদীর বাঁধ রক্ষার স্বার্থে অবৈধভাবে কেউ যেন বালু উত্তোলন করতে না পারে সেই লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

 

এবিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের সাথে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, “রাতের আধারে তারা বালু উত্তোলন করে। আমরা মাঝে মধ্যেই  অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আমাদের জনবল কম। পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলন কিছুতেই করতে দেওয়া হবেনা। আমরা এই ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছি।”

 

প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের ছাড়াও নদীতে আরো কয়েকটি সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে। জেলা-উপজেলা প্রশাসনেরও কাজ রয়েছে।”

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।