
মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
আজ ২৪ ডিসেম্বর। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সংঘটিত স্মরণকালের ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনার চার বছর পূর্ণ হলো। ২০২১ সালের এই দিনে ভোররাতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘অভিযান-১০’-এ অগ্নিকাণ্ডে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক যাত্রী প্রাণ হারান। ভয়াল সেই রাতের স্মৃতি আজও সুগন্ধা নদীর ঢেউয়ে ভাসে, কাঁদায় নিহতদের স্বজনদের।
২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী তিনতলা বিশিষ্ট যাত্রীবাহী লঞ্চ অভিযান-১০ ঝালকাঠি সদর উপজেলার দিয়াকুল গ্রাম সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে।
আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান নারী ও শিশুসহ প্রায় ৫০ জন যাত্রী। প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিলেও শতাধিক যাত্রী ও লঞ্চের স্টাফ আহত হন। নিহতদের বেশির ভাগই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় আগের দিন ২৩ ডিসেম্বর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাতে রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ জনপদের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানো হলো না বহু মানুষের।
দুর্ঘটনার পরপরই সুগন্ধা নদীর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা, ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করে তীরে আনা হয়। ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, দিয়াকুলের চর, কলেজ খেয়াঘাট, হাসপাতাল ও লাশকাটা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে নিহতদের স্বজনদের হৃদয়বিদারক আহাজারী।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর নৌপথে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণের দাবি জোরালো হয়। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব পাঠালেও চার বছর পেরিয়ে গেলেও তা আজও ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথ এখনো ঝুঁকির মধ্যেই রয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযান-১০ দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি দ্রুত নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হতো, তবে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতো।
ঘটনার চার বছর পেরোলেও অভিযান-১০-এর সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি আজও সুগন্ধা নদীর ঢেউয়ে ভাসে, আর প্রতি বছর ২৪ ডিসেম্বর এলেই নতুন করে বেদনায় ভেঙে পড়েন নিহতদের পরিবার-পরিজন।

























