Dhaka , Thursday, 28 August 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
নৈতিকতা ও সামাজিক জীবনধারায় ওসি নাজমুল আলম জনগণের পাশে  সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি রাজাপুরে নবাগত ইউএনওকে যুবদল ও ইসলামি আন্দোলনের শুভেচ্ছা সাতকানিয়ায় ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই যুবক গ্রেপ্তার সাভার আশুলিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আটক ৯ জন রূপগঞ্জে প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত পাবনায় ১শ ৮০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ” মাসকলাই বীজ ও সার” বিতরণ জামায়াতে ইসলামী  নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে : বকুল কালিয়াকৈরে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত  সদরপুরে বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমীতে দুঃসাহসিক চুরি  সিলেটে ওসিসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ রূপগঞ্জে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হাসান আলীর সুস্থতা কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রূপগঞ্জে গ্যাসের চার শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হাটহাজারিতে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণে প্রধান শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়।  দেশের জনগন বুঝে না  পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন  রাজাপুরে ছাত্রদলের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণে ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয় বিবেচনা করবে চসিক :- মেয়র ডা. শাহাদাত রূপগঞ্জে কিশোর রাকিব হত্যা ও দুই চাঁদাবাজি মামলার আসামি গ্রেফতার সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) এর বিশেষ টহলদল কর্তৃক ৭০ লক্ষ টাকার ভারতীয় চোরাচালানী মালামাল আটক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার জোর প্রচেষ্টায় রামগঞ্জে স্থাপিত হচ্ছে মিনি স্টেডিয়াম মির্জাপুরে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় সভা রাস্তা পাকা করার দাবিতে তথ্য উপদেষ্টার ইউনিয়ন বাসির মানববন্ধন স্টাফ কোয়ার্টার-সারুলিয়া রোডে ছিনতাইয়ের রাজত্ব: গভীর রাতে অটোরিকশায় হামলা, পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি এলাকাবাসীর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি সেভ দ্য কক্সবাজারের মানববন্ধন দুই মসজিদ ও এক মন্দির বরাদ্দ পেলো রেলের জমি রামগঞ্জে বিএনপির প্রতিনিধি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ভোটার বাদ দেওয়ার দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন হিজাবী ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া এবং দাড়ি রাখায় তিন কনস্টেবলকে শাস্তি প্রদান ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন-হেফাজতে ইসলাম। ঢাকার সাভারে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাজে বাধা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সাভার মডেল থানায় অভিযোগ ও একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। নোয়াখালীতে চালককে হত্যা অটোরিকশা ছিনতাই ঝালকাঠিতে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

চার বছরেও শেষ হয়নি এলজিইডির স্কুল ভবন নির্মাণকাজ, ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 08:39:55 pm, Friday, 16 May 2025
  • 96 বার পড়া হয়েছে

চার বছরেও শেষ হয়নি এলজিইডির স্কুল ভবন নির্মাণকাজ, ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী

তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল, বিশেষ প্রতিনিধি  

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর অধীনে নির্মাণাধীন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি!

২০২১ সালে সংশ্লিষ্ট মূল ঠিকাদার কাজটি বিক্রি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার কাছে। অভিযোগ উঠেছে যে,সেই আওয়ামী লীগ নেতা ভিত্তি ও কয়েকটি পিলারের কাজ করেই কাজ বন্ধ করে দেন।  এছাড়াও তিনি যে পরিমাণ কাজ করেছেন তার থেকে অধিক পরিমাণ অর্থ এলজিইডি থেকে উত্তোলন করেন এবং কাজ বন্ধ করে দেন।

এদিকে আনুমানিক  ১.৫ বছরের  মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ না করায় অস্থায়ী টিনের চালায় আবহাওয়া ও প্রকৃতিগত কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কোমলমতি শিশুরা। চরম ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন তারা।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এলজিইডির অধীনে হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ দরপত্রের মাধ্যমে পান রংপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে তারা কাজটি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন আ. লীগের সাধা: সম্পাদক ও এলজিইডির ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে। সেলিম এই কাজটি শুরু করেন ২০২১ সালের জুলাই মাসে যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই কারণে আনুমানিক ১.৫ বছর পাঠদানের জন্য ও সরকারের অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে  কয়েকটি কক্ষবিশিষ্ট  একটি টিনের চালা প্রস্তুত করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  ২০২২ সালেই ঠিকাদার সেলিম মূলভবনের ভিত্তি আর কয়েকটি পিলার দাড় করিয়ে এলজিইডি থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করেন।  এরপর তিনি অনৈতিকভাবে আরও টাকা উত্তোলনের চাহিদা দিলেও এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ার সেলিম কাজ না করলে তাকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ঠিকাদার সেলিম কাজ বন্ধ করে দেন। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনেকবার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের দাড়স্থ হয়েও কোন সুরহা হয়নি। ফলে পুরাতন টিন দিয়ে প্রস্তুত করা সেই অস্থায়ী টিনের চালায় আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে গ্রীষ্মকালে অসহনীয় গরম, বর্ষাকালে টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে শিশুদের বই-খাতা ও শরীর ভিজে যায়। মাটির মেঝে হওয়ায় কর্দমাক্ত হয়ে যায় ফলে অনেক শিশু পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।

এলজিইডির সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে প্রকল্পের তথ্য যেমন- প্রকল্পের নাম, মূল ঠিকাদারের নাম, দরপত্র মূল্য, সাব-কন্ট্রাক্টর কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু সময় চান। কিন্তু ক’দিন লাগবে তা তারা জানাননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, কাজটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর সাব-কন্ট্রাক্টর যে পরিমাণ কাজ করেছেন তার চেয়ে ২০থেকে ৩০ লাখ বেশী টাকা অগ্রিম হিসেবে উত্তোলন করেছেন। এক্ষেত্রে এলজিইডির সংশ্লিষ্টরাও জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আব্দুস সালাম বলেন, “টিনের চালের নিচে আমাদের বাচ্চারা গরমে অনেক কষ্ট পায়৷ বৃষ্টির দিনে ক্লাসে পানি ঢোকে বই-খাতাসহ বাচ্চারাও ভিজে যায়। মেঝে মাটির হওয়ার কারণে গায়ে ও স্কুলড্রেসে কাদা লাগে । কখনও তারা পিছলে পড়ে যায়।  “

এভাবে বাচ্চারা কতদিন ক্লাশ করবে? এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন এই অভিভাবক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন বলেন, “আমি এলজিইডিতে বহুবার গিয়েছি । এমনকি সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর ১৫ জুন ২০২৪ ও ১৬ জানুয়ারি ২০২৫সহ এর আগেও কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। তারা বহুবার আমাকে আশ্বাস দিয়েও কিছু করেননি। উপায়ন্তর না দেখে আমি আগের ইউএনও স্যারের কাছেও গিয়েছিলাম। বর্তমান ইউএনও স্যার নতুন এসেছেন  বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি আমার পরিচিত একজন ভাইকে আশ্বাস দিয়েছেন। একটা অস্থায়ী টিনের চালায় এভাবে ক্লাশ নেওয়া আমাদের জন্য দুষ্কর হয়ে গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিভাবকরাও অসন্তুষ্ট। আমি আশা করবো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিবেন।”

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: বেলাল হোসেন বলেন, ” এই বিষয়টি আমরা জানি। কাজ শেষ হয়নি এমন  আরও কিছু স্কুল হাতীবান্ধায় রয়েছে। আমরা বিভিন্ন মিটিং-এ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোন সমাধান হয়নি। আসলে কাজটা আমাদের অধীনে নয়। তাই এলজিইডি শুধু বলতে পারবে কেন এমনটি হয়েছে।”

এলজিইডির হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, “যখন কাজ শুরু হয় তখন আমার পোস্টিং অন্য জায়গায় ছিল। আমি অনেক পরে এখানে জয়েন করেছি। তবুও আমরা এ নিয়ে বহুবার মিটিং করেছি৷ সম্প্রতি আমাদের রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী স্যার এসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সাথে বসেছিলেন। আমরা কিছু অর্থ রিকভার করেছি। কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হওয়ার কথা।”

যারা এলজিইডির কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেয় কিংবা যারা কাজ সমাপ্ত না করেই বন্ধ করে দেন এমন ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সাব-কন্ট্রাক্টর কাজটি নিয়ম মেনেই নিয়েছে। তবে ঠিকাদারদের বিষয়ে আমরা একটি সিস্টেম দাড় করানোর চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য মার্কিং এর ব্যবস্থা থাকবে। সন্তোষজনক না হলে অনেক লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।”

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও- মো. শামীম মিঞা বলেন, ™আমি কিছুদিন হল এখানে জয়েন করেছি। কয়েকটি স্কুলের শেষ না করেই কাজ বন্ধ করা হয়েছে বলে জেনেছি। আমি এখন এরকম একটি স্কুলে এসেছি৷ এখন লিস্টে আরেকটি স্কুল যোগ হল। এগুলোর অতিদ্রুত যেন কাজ শুরু করা যায় সেই চেষ্টা করছি।”

এ বিষয়ে ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জানা যায় তিনি  আত্মগোপনে  রয়েছেন।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর মতো একটি দায়িত্বশীল সরকারি দপ্তরে কীভাবে এবং কেন মূল ঠিকাদার কাজ বিক্রি করছেন? সাব কন্ট্রাক্ট যারা নিচ্ছেন তাদের সলভেন্সি না থাকলেও কীভাবে কাজ পাচ্ছেন? কিংবা কাজের কিছু অংশ সম্পন্ন করে এর যতটুকু কাজ সম্পন্ন হয়েছে এর মূল্যমানের চেয়ে বেশী অর্থ কীভাবে উত্তোলন করছেন তারা?

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চার বছরেও শেষ হয়নি এলজিইডির স্কুল ভবন নির্মাণকাজ, ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী

আপডেট সময় : 08:39:55 pm, Friday, 16 May 2025

তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল, বিশেষ প্রতিনিধি  

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর অধীনে নির্মাণাধীন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি!

২০২১ সালে সংশ্লিষ্ট মূল ঠিকাদার কাজটি বিক্রি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার কাছে। অভিযোগ উঠেছে যে,সেই আওয়ামী লীগ নেতা ভিত্তি ও কয়েকটি পিলারের কাজ করেই কাজ বন্ধ করে দেন।  এছাড়াও তিনি যে পরিমাণ কাজ করেছেন তার থেকে অধিক পরিমাণ অর্থ এলজিইডি থেকে উত্তোলন করেন এবং কাজ বন্ধ করে দেন।

এদিকে আনুমানিক  ১.৫ বছরের  মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ না করায় অস্থায়ী টিনের চালায় আবহাওয়া ও প্রকৃতিগত কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কোমলমতি শিশুরা। চরম ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন তারা।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এলজিইডির অধীনে হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ দরপত্রের মাধ্যমে পান রংপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে তারা কাজটি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন আ. লীগের সাধা: সম্পাদক ও এলজিইডির ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে। সেলিম এই কাজটি শুরু করেন ২০২১ সালের জুলাই মাসে যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই কারণে আনুমানিক ১.৫ বছর পাঠদানের জন্য ও সরকারের অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে  কয়েকটি কক্ষবিশিষ্ট  একটি টিনের চালা প্রস্তুত করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  ২০২২ সালেই ঠিকাদার সেলিম মূলভবনের ভিত্তি আর কয়েকটি পিলার দাড় করিয়ে এলজিইডি থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করেন।  এরপর তিনি অনৈতিকভাবে আরও টাকা উত্তোলনের চাহিদা দিলেও এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ার সেলিম কাজ না করলে তাকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ঠিকাদার সেলিম কাজ বন্ধ করে দেন। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনেকবার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের দাড়স্থ হয়েও কোন সুরহা হয়নি। ফলে পুরাতন টিন দিয়ে প্রস্তুত করা সেই অস্থায়ী টিনের চালায় আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে গ্রীষ্মকালে অসহনীয় গরম, বর্ষাকালে টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে শিশুদের বই-খাতা ও শরীর ভিজে যায়। মাটির মেঝে হওয়ায় কর্দমাক্ত হয়ে যায় ফলে অনেক শিশু পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।

এলজিইডির সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে প্রকল্পের তথ্য যেমন- প্রকল্পের নাম, মূল ঠিকাদারের নাম, দরপত্র মূল্য, সাব-কন্ট্রাক্টর কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু সময় চান। কিন্তু ক’দিন লাগবে তা তারা জানাননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, কাজটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর সাব-কন্ট্রাক্টর যে পরিমাণ কাজ করেছেন তার চেয়ে ২০থেকে ৩০ লাখ বেশী টাকা অগ্রিম হিসেবে উত্তোলন করেছেন। এক্ষেত্রে এলজিইডির সংশ্লিষ্টরাও জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আব্দুস সালাম বলেন, “টিনের চালের নিচে আমাদের বাচ্চারা গরমে অনেক কষ্ট পায়৷ বৃষ্টির দিনে ক্লাসে পানি ঢোকে বই-খাতাসহ বাচ্চারাও ভিজে যায়। মেঝে মাটির হওয়ার কারণে গায়ে ও স্কুলড্রেসে কাদা লাগে । কখনও তারা পিছলে পড়ে যায়।  “

এভাবে বাচ্চারা কতদিন ক্লাশ করবে? এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন এই অভিভাবক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন বলেন, “আমি এলজিইডিতে বহুবার গিয়েছি । এমনকি সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর ১৫ জুন ২০২৪ ও ১৬ জানুয়ারি ২০২৫সহ এর আগেও কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। তারা বহুবার আমাকে আশ্বাস দিয়েও কিছু করেননি। উপায়ন্তর না দেখে আমি আগের ইউএনও স্যারের কাছেও গিয়েছিলাম। বর্তমান ইউএনও স্যার নতুন এসেছেন  বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি আমার পরিচিত একজন ভাইকে আশ্বাস দিয়েছেন। একটা অস্থায়ী টিনের চালায় এভাবে ক্লাশ নেওয়া আমাদের জন্য দুষ্কর হয়ে গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিভাবকরাও অসন্তুষ্ট। আমি আশা করবো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিবেন।”

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: বেলাল হোসেন বলেন, ” এই বিষয়টি আমরা জানি। কাজ শেষ হয়নি এমন  আরও কিছু স্কুল হাতীবান্ধায় রয়েছে। আমরা বিভিন্ন মিটিং-এ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোন সমাধান হয়নি। আসলে কাজটা আমাদের অধীনে নয়। তাই এলজিইডি শুধু বলতে পারবে কেন এমনটি হয়েছে।”

এলজিইডির হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, “যখন কাজ শুরু হয় তখন আমার পোস্টিং অন্য জায়গায় ছিল। আমি অনেক পরে এখানে জয়েন করেছি। তবুও আমরা এ নিয়ে বহুবার মিটিং করেছি৷ সম্প্রতি আমাদের রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী স্যার এসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সাথে বসেছিলেন। আমরা কিছু অর্থ রিকভার করেছি। কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হওয়ার কথা।”

যারা এলজিইডির কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেয় কিংবা যারা কাজ সমাপ্ত না করেই বন্ধ করে দেন এমন ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সাব-কন্ট্রাক্টর কাজটি নিয়ম মেনেই নিয়েছে। তবে ঠিকাদারদের বিষয়ে আমরা একটি সিস্টেম দাড় করানোর চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য মার্কিং এর ব্যবস্থা থাকবে। সন্তোষজনক না হলে অনেক লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।”

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও- মো. শামীম মিঞা বলেন, ™আমি কিছুদিন হল এখানে জয়েন করেছি। কয়েকটি স্কুলের শেষ না করেই কাজ বন্ধ করা হয়েছে বলে জেনেছি। আমি এখন এরকম একটি স্কুলে এসেছি৷ এখন লিস্টে আরেকটি স্কুল যোগ হল। এগুলোর অতিদ্রুত যেন কাজ শুরু করা যায় সেই চেষ্টা করছি।”

এ বিষয়ে ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জানা যায় তিনি  আত্মগোপনে  রয়েছেন।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর মতো একটি দায়িত্বশীল সরকারি দপ্তরে কীভাবে এবং কেন মূল ঠিকাদার কাজ বিক্রি করছেন? সাব কন্ট্রাক্ট যারা নিচ্ছেন তাদের সলভেন্সি না থাকলেও কীভাবে কাজ পাচ্ছেন? কিংবা কাজের কিছু অংশ সম্পন্ন করে এর যতটুকু কাজ সম্পন্ন হয়েছে এর মূল্যমানের চেয়ে বেশী অর্থ কীভাবে উত্তোলন করছেন তারা?