পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।।
কাজী মোতালেব ও অলি আহাদ ভাষানী। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
পটুয়াখালীর দুমকিতে জাসদ, জামায়াত, বিএনপি দিয়ে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে কমিটিতে জামায়াত, বিএনপি, জাসদ করা লোকদের পদ-পদবি দেয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দাখিলকৃত ওই কমিটিতে নৌকাবিরোধী একাধিক ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদ দখল করে নিয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের স্বজন, নিকট আত্মীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কাজী মোতালেব। যিনি বর্তমানে উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। জাসদের সাধারণ সম্পাদক হয়ে কীভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক হলেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাইম হোসেন নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, দুমকি উপজেলায় আওয়ামী লীগ করে এমন কোনো মুক্তিযোদ্ধা কী নেই? জাসদ নেতাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বানাতে হলো কেন?
এছাড়াও বিতর্ক রয়েছে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অলি আহাদ ভাষানীকে নিয়ে। যাকে কোনোদিন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দেখা যায়নি এবং তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে সরকারবিরোধী নানা ধরনের মন্তব্য, বক্তব্য শেয়ার করা হয়েছে। কেউ কেউ তাকে জামায়াত-বিএনপি বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
এ নিয়ে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। মাইনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- ‘হায়রে নেতার আত্মীয়! বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগে কে এই ভাষানী। দুমকী উপজেলায় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এ যে আরেক হেফাজত মামুনুল হক, দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যার প্রামাণ্য প্রচার আজও পর্দায় ভাসে। এখনই রুখে দাঁড়ান মুজিব প্রেমিকগণ।’
এরই মধ্যে কমিটির সদস্য পদ থেকে মো. শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা কমিটিতে পদ পেয়েছেন তাদের মধ্যে দুই-একজনকে নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে, তবে বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করছি। যদি কারও মধ্যে ত্রুটি থাকে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান বলেন, যাদের নিয়ে সমালোচনা চলে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। উপজেলা থেকেই তাদের লিস্ট পাঠানো হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) উপজেলার সাধারণ সম্পাদকের হয়ে কীভাবে কমিটিতে পদ পেলেন এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, আসলে তিনি আগে জাসদ করতেন এখন করেন না, তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আর জাসদ আওয়ামী লীগের বাইরে না।
ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের অভিযোগ রয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক। হয়তো এ উপজেলায় থাকেননি, দূরে গিয়ে আওয়ামী লীগ করেছেন। দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে তার এবং উপজেলা থেকে অনেক রিকোয়েস্টও ছিল- এরকম দুই-একজন দলের ভিতর থাকে। আর এখনো সময় আছে যদি কারও মধ্যে ত্রুটি থাকে তদন্তসাপেক্ষে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে কাজী মোতালেব ও অলি আহাদ ভাষানীকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তারা ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্নানের যৌথ স্বাক্ষরে দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি এবং শাহজান আকন সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটিতে সম্পাদক মণ্ডলীর ৩৬ জন এবং ৩৫ জনকে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়