
নিকেশ বৈদ্য
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)।।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বিক্রির হাট। অন্য বছর জগন্নাথপুর পৌর শহরের ¯ইচগেট নামক স্থানে হাট বসতো। এবার বিকল্প সেতুর কারণে নৌকা চলাচল করতে না পারায় হেলিপ্যাড মাঠ এলাকার নলজুর নদীপারে জমে উঠেছে নৌকার হাট। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নৌকা বেচাকেনা হয়। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বুধবার জগন্নাথপুর পৌর শহরে নৌকার হাট বসে। হাটে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন ও পুরাতন নৌকা নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। হাটের ঘাটে সারিবদ্ধ ভাবে নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়। যাতে ক্রেতারা সহজে তাদের পছন্দের নৌকা কিনতে পারেন। হাওর বেষ্টিত উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ নৌকা ব্যবহার করেন। বর্ষায় গবাদিপশুর ঘাস সংগ্রহ করতেও নৌকা লাগে। হাওরাঞ্চলের মানুষ এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতেও নৌকার বিকল্প নেই। এর মধ্যে অনেকে আছেন, যারা নৌকার উপর নির্ভরশীল। জেলেদের মাছ ধরতেও নৌকার প্রয়োজন হয়। তার উপর বন্যা হলে তো কথাই নেই। তখন কমবেশি সবাইকে নৌকা ব্যবহার করতে হয়। তাই পছন্দের নৌকা কিনতে ক্রেতারা ছুটে আসেন হাটে। নৌকা পছন্দ হলেই শুরু হয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাম কষাকষি। সাধ্যের মধ্যে হলে নৌকা কিনে মনের আনন্দে ফিরেন ক্রেতারা। যুগযুগ ধরে চলে আসছে নৌকার ব্যবহার। তাই বর্ষা এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। ভাটির জনপদের মানুষের যেন নৌকাই ভরসা। কারো ঘাটে নৌকা থাকলে তার সমাদরের শেষ নেই। কারণ প্রতিবেশিরা কোন বিপদে পড়লেই তার কাছ থেকে নৌকা নিতে পারেন। এর মধ্যে অনেকে অন্যের বিপদে নৌকা দিয়ে সহযোগিতা করলেও অনেকে করে না। এভাবেই গ্রামীণ জনপদের মানুষ জীবনযাপন করছেন। অনেকের তো নৌকাই রোজগারের একমাত্র মাধ্যম। তাই আজও নৌকার চাহিদা কমেনি। বরং বর্ষা মৌসুমে আরো বেড়ে যায়।
৫ জুলাই বুধবার দেখা যায়, জগন্নাথপুর পৌর শহরের হেলিপ্যাড মাঠ এলাকার নলজুর নদীপারে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। হাটে দুর দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে এসেছেন। বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন ঘাটে। ক্রেতারাও তাদের পছন্দের নৌকা কিনতে পুরো হাট ঘুরছেন। পছন্দের নৌকা পেলে দামদর শেষে বেচাকেনা চলছে। এর মধ্যে যাদের কাঙ্খিত বিক্রি হয়নি। তারা চিন্তায় পড়ে গেছেন। নৌকা নিয়ে বাজারে আসা ও বিক্রি না হলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াতে তাদের লোকসান হয়। এছাড়া আরো নানা সমস্যা আছে। এসব কারণে তারা অল্প লাভ হলেই নৌকা বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এ সময় হাটে আসা নিমাই দাস, শফিক আলী সহ ক্রেতাদের মধ্যে কয়েকজন জানান, এবার অন্য বছরের তুলনায় নৌকার দাম অনেক বেশি। তবে বিক্রেতাদের মধ্যে এলাইছ মিয়া, সমুজ আলী সহ অনেকে বলেন, আমরা বেশি দামে কিনে এনেছি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অল্প লাভ পেলেই বিক্রি করছি। আবার অনেক নৌকার মালিক নিজের প্রয়োজনে নৌকা বিক্রি করতে হাটে এসেছেন। দামদরে হলে তারাও নৌকা বিক্রি করছেন