মোঃ সেীরভ হোসাইন (সবুজ)
স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ।।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নে প্রাচীন বিলুপ্তপ্রায় এক নগরে আবারো প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে নেমেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। জানা যায়,ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রত্নতাত্ত্বিক মো: রিফাত- উর-রহমানের তত্ত্বা্বধানে, বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সাল থেকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বি্ক অনুসন্ধান শুরু করে। অতিমারি করোনার জন্য সাময়িক ভাবে সে অনুসন্ধান কিছুটা বিঘ্নিত হলেও গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পুনরায় আবার অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ অনুসন্ধানে প্রত্নতাত্ত্বিক মো: রিফাত- উর-রহমানের নেতৃত্বে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। পর্যায়ক্রমে প্রত্নতাত্ত্বি্ক এ অনসন্ধান চলমান থাকবে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত মোট ১৪ টি ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। ঢিবিগুলো হচ্ছে বিরাট রাজার ঢিপি, আমির আলী ঢিবি, গুচ্ছগ্রাম ঢিবি-১, গুচ্ছগ্রাম ঢিবি-২, মায়া পুকুর, শ্যামল পুকুর, কমল খাঁ দিঘি, পাহাড় প্রতাপ, প্রতাপদিঘি,অর্জনগড়, হাভাইত্তা পুকুর, যোগী পুকুর,কাতলা পুকুর ও জয়সাগর অন্যতম। এসব ঢিবিতে অনুসন্ধানের এ যাবত প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শনের মধ্য রয়েছে,পোড়ামাটির ফলক, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি, বানর ও ফনাতোলানাগের পোড়ামাটির টেরাকোটা অন্যতম। অনুসন্ধানে আসা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো:আলামিন, সানজিদা আক্তার মুন্নি ও চতুর্থ বর্ষের পুষ্পিতা জানায়, ক্লাসরুমে বসে শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকের জ্ঞান অর্জন সম্ভব, বাস্তবজ্ঞানের জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। এ কারণে অনুসন্ধানের এ অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগবে। গত প্রায় পাঁচ বছরের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো: রিফাত-উর-রহমান বলেন,ইতোমধ্যেআন্তর্জাতিক ও জাতীয় জার্নালে তার গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করেছেন।এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকান্ড অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রক্রিয়া। যেহেতু, ক্ষিরতলার প্রত্নস্থলগুলো এখনও সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি, তাই প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন করা শুরু হয়নি। তবে, অচিরেই উৎখনন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।তিনি আরও বলেন, এ পর্যনন্ত ১৪টি প্রত্নস্থল সনাক্ত করা হয়েছে এবং একইসাথেসেসব প্রত্নস্থলের তথ্য, উপাত্তগুলো নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.মোঃ শাহ্ধসঢ়; আজম প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের বিষয়ে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। সুতরাং,ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান শেষ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ-এর সাথেযৌথভাবে উৎখননের মধ্যে দিয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে ক্ষিরতলার প্রত্নস্থলগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।ক্ষিরতলা গ্রামের একটি বড় ঢিবিকে স্থানীয়রা বিরাট রাজার ঢিবি৩৯; হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়াও, গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নানা ধরনের প্রত্নবস্ত এবং প্রাচীন ইটের ধ্বংসাবশেষ। ষাটের দশকে বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক আবুল কালাম মোঃ জাকারিয়া ক্ষিরতলার প্রত্নস্থান সম্পর্কে ‘বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছিলেন, যে ক্ষিরতলা বুরুজ থেকে গুপ্ত যুগের (আনুমানিক ৩য় খ্রি:) মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল। তবে, মো: রিফাত-উর-রহমান বলেছেন, যেহেতু এখনও বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে উৎখনন করা হয়নি, তাই প্রত্নস্থলগুলোর সময়কাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তার নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলক, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ এবং ইটের গঠনশৈলী থেকে তিনি বলেন, এগুলোর সাথে পাহাড়পুরের পোড়ামাটির ফলক এবং ইটের সাদৃশ্যতা রয়েছে। তাই, অন্তত তুলনামুলক বিশ্লেষণে আপাতত অনুমান করা যায় যে ক্ষিরতলার প্রত্নস্থলগুলো হয়তো পাল যুগের সময়ে (আনুমানিক অস্টম খ্রি:) নির্মিত হয়েছিল।