আলী হোসেন রুবেল ভোলা।।
১৯ বছরেও বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কমাল কলেজটি পায়নি একটি একাডেমি ভবন। বর্তমানে প্রবল সংকটে আর বেশ দৈন্য দশায় কাটছে কলেজটির দৈনন্দিন শিক্ষা ব্যবস্থা। কলেজটি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠা লগ্ন সেই ২০০৪ সাল থেকে একাডেমিক নানান সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় দিনপাত করলেও দেখার যেন কেউ নেই। ২০০৪ সালে যখন অজপাড়া আলীনগরের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল, ঠিক তখনই আলীনগর রুহিতা গ্রামের কৃতি সন্তান তথা ৭০ দশকের অন্যতম খ্যাতনামা কবি এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক, সাংবাদিক,কলামিস্ট বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক পরিচালক (বার্তা) নাসির আহমেদ এর ঐকান্তিক সহযোগীতায় আলীনগর রুহিতা গ্রামের ফরাজি বাড়ির মাওলানা ইসকান্দার হোসেন বুলবুলি সাহেবের ছোট ছেলে আবু সালে মোঃ হান্নান দায়িত্ব নিয়ে কলেজটি শুরু করে।
সেই থেকে দিনের পর দিন শিক্ষকরা বেতনভুক্ত না হয়েও খেয়ে না খেয়ে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিবছর কলেজটি বেশ সুনামের সাথে ফলাফল করার পাশাপাশি ১০০% ফলাফল করে ভোলায় অন্যান্য কলেজের সাথে প্রতিযোগিতা করে কলেজটির তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে বিগত বছরের ন্যায় বর্তমান সময়েও।
তবে দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের নামে কলেজটি হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ ১৫ বছর পরে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মমতাময়ী মা মালেকা বেগম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তার কাছে গিয়ে বারবার অনুরোধ ও সুপারিশ করার পর প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টিগোচরে আসে এবং বাংলার মমতাময়ী ও মানবতার মা, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা শিক্ষকদের মানবেতর জীবনের কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কলেজটিকে বিশেষভাবে এমপিভুক্তির আদেশ দেয়। প্রধানমন্ত্রীর সেই আদেশের ফলে ২০১৯ সালে এমপিও ভুক্ত হয়, এবং জানুয়ারি মাস থেকে শিক্ষকরা তাদের স্বপ্নের সেই অধরা এমপিওের ভুক্তির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সেই বেতন হতে পায়। বর্তমানে খোঁজ নিয়ে যা জেনেছি তা চরম অকপটে বলতে হয়, কলেজটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন অর্থাৎ সেই ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছেই না সমস্যা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মোস্তফা কামালের নামে কলেজটি হয়েও আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই যেন লাগেনি এ প্রতিষ্ঠানে। যা নিয়ে একপ্রকার হতাশ কলেজের কর্মচারী শিক্ষক কর্মচারী ও এলাকাবাসীরা।
কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ সেলিমের কাছে কলেজের সার্বিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি এক বুক কষ্ট আর ক্ষোভের সাথে বলেন,এমন মহান ব্যক্তির নামে কলেজ হয়েও আধুনিকতার ছোঁয়া তো লেশমাত্র নেই,এমনকি একটি একাডেমিক ভবন ও নেই। যেখানে খুব পরিপাটি থাকবে এবং মনোরম পরিবেশে ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস করবে। অথচ প্রতিনিয়ত আমাদের ক্লাসের খুব দৈন্যদশা যাচ্ছে। তিন বিভাগে ক্লাস একত্রে চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় ।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কলেজটি অবকাঠামো গত দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় দূর দূরান্তে ছাত্রছাত্রীরা তো থাক দূরের কথা এলাকার ছাত্রছাত্রীরা এখানে ভর্তি হতে চায় না। তাই প্রতিবছর ভর্তির সময় আমাদেরকে নামতে হয় একটি মহা যুদ্ধে। যেখানে কিনা এ নামের কলেজেটি এতো দিনে সরকারি হয়ে বহু পূরানো হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে কিনা আমরা প্রাইমারি ছাত্র-ছাত্রীদের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তোশামদ করে নানা সুবিধার কথা বলে অর্থাৎ উপবৃত্তি এবং কলেজ থেকে বইয়ের ব্যবস্থা করে দেব বলে বহু অনুরোধ করে রাজি করে আমাদের এই কলেজে ভর্তি করতে হয়। তারপরেও অনেকে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হয় না। যার কারণে প্রতিবছরই আমাদেরকে হজম করতে হচ্ছে ছাত্র ছাত্রী ভর্তির এক মহাযুদ্ধ, যা আমরা ভাষায় বলে বোঝাতে পারবোনা।
এ মহাযুদ্ধ থেকে অতি দ্রুত পরিত্রাণ চাই কলেজের সকল শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ। তাই এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে বাংলাদেশের একমাত্র মমতাময়ী মানবতার মা পরপর তিন বারের অত্যন্ত সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের জোর দাবি সরকারের ফ্যাসিলিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে অতি দ্রুত একটি চারতলা ভবন পাশ করে কলেজটির নানামুখী সমস্যা থেকে অন্তত একটি সমস্যা সমাধান করে অবকাঠামো দিক থেকে একটু হলেও উন্নতি করার দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি অতি দ্রুত কলেজটিকে জাতীয়করণ করে আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করার জোর অনুরোধ করছি।