
তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল, বিশেষ প্রতিনিধি
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা -কোরবানির ঈদ- এর দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সাথে জমে উঠেছে লালমনিরহাটের গবাদি পশুর হাট। জেলার বিদ্যমান উল্লেখযোগ্য হাটগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সদর উপজেলার বড়বাড়ী ও দুরাকুটি হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাকি হাটগুলো ক’দিনের মধ্যেই জমে উঠবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিক্রেতা ও হাট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, হাটগুলোকে ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে ক্যাম্প পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর জেলায় গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কোরবানির পশু পাঠানো সম্ভব।
সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হল- সদর উপজেলার নয়ারহাট, নবাবের হাট -বিডিআর হাট-, দুরাকুটি ও বড়বাড়ি হাট, কালীগঞ্জের শিয়ালখোয়া হাট ও চাপারহাট, হাতীবান্ধার দইখাওয়া হাট এবং পাটগ্রামের বড়খাতা। এই সকল হাটে এই বছর গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে।
কয়েকটি হাট ঘুরে সবচেয়ে বেশী ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার বড়বাড়ী হাটে সকাল ৮টা থেকেই জনসমাগম শুরু হয়। এই হাটে প্রচুর পরিমাণ দেশি গরু কেনা-বেচা হচ্ছে। যার মূল্য গরুর আকার ও প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। লক্ষ্য করা গেছে বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের দীর্ঘক্ষণ ধরে পুরো হাট ঘুরে দেখে কাঙ্ক্ষিত আকার ও দাম মিলে গেলে তবেই গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। অনেকেই আবার দাম কমে গেলে তখন কিনবেন এই আশা নিয়ে খালি হাতেই বাড়ি ফিরছেন।
ক্রেতা আসা সব্বুর আলী বলেন, “ঈদ যত ঘনিয়ে আসে দাম ততো বাড়ে , তাই আগেভাগেই কিনতে এসেছি। ৮০ হাজার টাকায় আমি একটি গরু কিনেছি।“
তার অভিযোগ, সব হাটেই দালালদের জন্য কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি।
রাজ্জাক মিয়া নামের একজন ক্রেতা জানান, কয়েকজন একসাথে ৯০ হাজার টাকায় একটি গরু কেনা হয়েছে। কোরবানি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য তাই নসিবে যা এসেছে তাতেই খুশী তিনি।
ছাগল কিনে বাড়ি ফিরছেন ব্যবসায়ি খয়বার আলী। তিনি জানান, ১১ হাজার টাকায় ছাগল -খাসি- কিনেছেন তিনি। হাটে গবাদি পশুর সরবরাহ নিয়ে সন্তুষ্ট।
খামারি রুস্তম হোসেন বলেন,” আমি ৬টি গরু এনেছি। মাঝারিগুলো বিক্রি হলেও বড় ২ টি এখনও বিক্রি হয়নি। আবার আসতে হতে পারে।“
তবে খামারিদের অভিযোগ, গবাদি পশুর খাবার-ফিড- ও আনুষঙ্গিক খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশী কিন্তু পশুর দাম তেমন বাড়েনি।
হাটের নিরাপত্তা বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ জানায়, পশুর হাটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.আব্দুস সামাদ বলেন ,” প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিম কাজ করে। ক্রেতা বিক্রেতারা বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। অসুস্থ গবাদি পশুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ক্রেতা বা বিক্রেতা আমাদের কাছে গবাদি পশু নিয়ে আসলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দিচ্ছি।“
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার বেশিরভাগ খামারি এবার প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তাদের গরু মোটাতাজা করেছেন। ক্ষতিকর হরমোন বা ইনজেকশনের ব্যবহার এ বছর অনেক হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, “লালমনিরহাটে এবার প্রায় ২.৩০ লাখ কোরবানির পশু রয়েছে। আশা করছি চাহিদা পূরণের পর দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।”