রাবি প্রতিনিধি।।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চারুকলার ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও জয়নুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা আনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোরগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই মানুষটির উপর ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপক প্রভাব ছিল। তার মনন জগতে প্রভাব ফেলেছিল তৎকালীন ‘ক্যালকাটা’ নামক একটা গ্রুপ। জয়নুল সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন অবনী রায় নামক একজন বামপন্থী শিল্পীর দ্বারা। তিনি একজন অনন্য প্রতিভার মানুষ ছিলেন। জয়নুল আবেদিন প্রাচ্য এবং প্রাতিচ্যের মধ্যে সবসময় শিল্পের ফারাক রেখেছেন। বাঙ্গালির যত কিছু আছে তিনি তা সকলই ধারণ করেছিলেন। তার প্রতিটি শিল্পকর্মের বর্ণনা আছে যা অত্যন্ত বাঙালি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশ সংলগ্ন। জয়নুলকে আমাদের স্¦ীকার করতেই হবে। কারণ তার পৌরহিত্যের কারণেই ঢাকায় আর্ট কলেজ ও বাংলাদেশে চারুকলার জন্ম হয়েছে।’
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, ‘প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, আজকের দিনে শিল্পী জয়নুল আবেদিনের জন্ম হয়েছে বলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। পরবর্তীতে চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিল্পচার্চার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তার সারাটা জীবন কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এই সংগ্রাম ছিলো তার অর্থনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে, সামাজিক নানা রকম বাধা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে তার শিল্পচর্চার প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি বাধা এসেছিলো। সেই বাধা ছিলো পাকিস্থানের প্রশাসনিক বাধা, সমাজে শিল্পকলাকে গ্রহণ করার বাধা। এইসব বাধাকে অতিক্রম কবে তিনি বেড়িয়ে এসেছেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক বলেন, ‘শিল্পকলার মাধ্যমে আমরা কোনো জিনিস অল্প সময়ের মধ্যে গভীরভাবে বুঝতে পারি। জয়নুল আবেদিন ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিল্পী। তিনি দুর্ভিক্ষের ছবি আকার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। এই ছবিগুলো শুধু দেশেই নয় তাকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে দিয়েছে। প্রকৃতি, বাংলাদেশের জনজীবন ও মানুষের সংগ্রামের বিষয় তিনি তার ছবিতে তুলে ধরেছেন। ’
জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্ম গ্রহন করেন। তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, মই দেয়া, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে আঁকেন তার বিখ্যাত ৬৫ ফুট দীর্ঘ ছবি নবান্ন। জয়নুল আবেদিনের জন্মদিনকে অনুস্মরণ করে ১৯৭৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।