স্টাফ রিপোর্টার ভোলা।।
ভোলা- চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কটি ৬ জেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পরানগঞ্জ থেকে বাবুরহাট পর্যন্ত ৯৬ কিঃমিঃ রাস্তার কাজের অনুমোদন হয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে।
যদিও তা শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। তবে দুই বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ১ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ৮৩ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বাকি ১৩ কিলোমিটার অংশের কাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। এরমধ্যে ১৩ কিলোমিটারে ছোট-বড় অসংখ্য খানা-খন্দ। রাস্তাটি এ অবস্থা থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুটে নিয়মিত চলাচলকারি যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। নির্মাণাধীন কাজ ধীরগতির কারণে মহাসড়কের কোথাও না কোথাও প্রায় হচ্ছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। তবে সড়ক বিভাগ মহামারি করোনাকে ধুসলেও বাকি কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, নেই তার কোনো নিশ্চয়তা। তারউপর আবার কোথাও কোথাও রাস্তার উপর পুরোনো কার্পেটিং তুলে রাখায় রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ। যাত্রীদের ভোগান্তির জন্য শেষ নেই।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাস্তাটি ১৮ ফুট থেকে ৩০ ফুট প্রশস্তকরণের প্রকল্প গ্রহণ করে সড়ক বিভাগ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেয় এম এম বিল্ডার্সসহ ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে দুর্ভাগ্য হলো সত্য, নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে অতিরিক্ত গড়ালে তারও এক বছর পেরিয়ে গেলেও আজও মখ থুবড়ে পরে আছে বাকি ১৩ কিলোমিটার রাস্তা। কখন হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে না তার কোন নিশ্চয়তা।
স্থানীয়রা জানান, ৯৬ কিলোমিটার সড়কের ৮৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ হলেও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বাকি ১৩ কিলোমিটার সংস্কার কাজ। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়ার কারণে কাজ পিছিয়ে পড়ার দায়সারা জবাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। চলমান এ দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
স্থানীয়রা জানান, সড়কের বিভিন্ন অংশে কার্পেট তুলে ফেলায় অল্প বৃষ্টিতে জমে কাদা। আর খানা-খন্দের কারণে ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আবদুল হক ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকে জানান, ভোলা-চরফ্যাশন রুটের যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা উন্নয়ন বিড়ম্বনায় রয়েছে। গত দুই বছর ধরে বর্ষায় কাঁদাপানি আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালিতে নাজেহাল। বর্তমানে এ সড়কের আজিমুদ্দিন থেকে বোরহানউদ্দিন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তা পুরো বর্ষার মৌসুমে কাঁদাপানি আর খানা-খন্দে ভরে আছে। পাশ দিয়ে একটা বড় গাড়ি গেলে ছোট যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা কাঁদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।
এনজিও কর্মী মিজানুর রহমান জানান, অফিসের কাজে প্রতিদিন ৩-৪ বার এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রতিবারই কাদাপানিতে গোসল করে উঠি। ছোট যানবাহনের যাত্রীদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে সাড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তা।’
আজিমুদ্দিন এলাকার বাসিন্দা ইখলাছ উদ্দিন জানান, বর্ষার মধ্যে আমার বাড়িতে জুতা পরে চলাচল করতে পারলেও সড়কে উঠতে হয় জুতা খুলে। কারণ জুতা পড়ে ওই রাস্তা চলাচল করা যায় না।
গাড়ির চালক মফিজুর রহমান জানান, আগের কার্পেটিং উঠিয়ে পাথর ও বালু ফেলে রাখায় রাস্তায় অসংখ্য খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ওইসব গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ি বিকল হয়ে যায়। এতে তাদের ব্যয় বেড়ছে।
এমন দুর্ভোগের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির অভিযোগ করেন সডক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম।
তিনি জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। সম্ভব না হওযায় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছর বসয় বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে ৮৩ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। এম এম বিল্ডার্স তাদের কাজ শেষ না করায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। তাদের একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। তবে সংস্কার কাজে বিলম্ব হওয়ার পেছনে বৈরি আবহাওয়া ও মালামালের দাম বাড়ার অজুহাত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
এম এম বিল্ডার্সের প্রকল্প ম্যানেজার মোরশেদ আলম ভূঁইয়া জানান, ৭ কিলোমিটার রাস্তার প্রথম লেয়ার করা হয়েছে। বাকি ৭ কিলোমিটার করতে পারলে দুর্ভোগ কমবে।
তিনি বলেন, ‘মালামালের দাম বাড়ার ফলে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বর্তমানে বৈরি আবহাওয়ার কারণে কাজ বন্ধ আছে। প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার কাজে মালামালের দাম বাড়ায় ৪০ কোটি টাকার মতো লোকসান হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশা করছি। এতে আরও পাঁচ মাস এমন ভোগান্তি পোহাতে হবে।’
২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে সাড়ে ৮৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩০ ফুট প্রশস্ত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। পরবর্তীতে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৮৭৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। সডকের পাশাপাশি এই সড়কে ৪টি সিসি গার্ডার ব্রিজ ও ৪৩টি কালভার্ট নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।