
তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল, বিশেষ প্রতিনিধি
লালমনিরহাটে হাসাহাসির মত একটি তুচ্ছ ঘটনার জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সালাম “৪০”, তার ছেলে সেজান ও সেজানের বন্ধু রোহান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে “রমেক” চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ছুরিকাঘাতে আহত সেজানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
৭ মার্চ “শুক্রবার” সন্ধ্যায় পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড “ডায়াবেটিক হাসপাতাল” এর পাশে সংঘর্ষের ওই ঘটনায় চারজনকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরনবী।
অপর ২ জন আহত ব্যক্তিরা হলেন- সেজানের মা ও সালামের স্ত্রী বিলকিছ ও সালামের বোন। তবে তারা হালকা আঘাত পাওয়ায় বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
আটককৃতরা হলেন- জিয়া “২১”, সজীব”২৫”, শাহিন “২৭” ও সৈকত”২০”। তারা সকলেই দক্ষিণ খোর্দ্দ সাপটানা “ডায়াবেটিক হাসপাতাল সংলগ্ন” এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে।
এলাকাবাসী ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, ৭ মার্চ “শুক্রবার” জুম্মার নামাজের পর সেজান এবং রোহান শাহিনকে দেখে হাসাহাসি করেন। ফলে শাহিন ও সেজানের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। সে সময় মসজিদের মুসল্লিরা তাদেরকে শান্ত করে সন্ধ্যায় মীমাংসার প্রস্তাব দেন। পরে সন্ধ্যার দিকে শফিকুলের নির্দেশ পেয়ে জিয়া,সজীব, শাহিন ও সৈকতসহ ৭-৮ জন সালাম, সেজান ও রোহানের উপর ছুরি দিয়ে হামলা চালায় ও আঘাত করে। ওই সময় সালামের স্ত্রী বিলকিস ও সালামের বোন তাদেরকে বাঁচাতে গেলে তাদের উপরও হামলা চালানো হয়। এরপর এলাকাবাসীরা আহতদের লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে রমেকে রেফার করেন। তারা এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। খবর পেয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরনবী’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উল্লিখিত ৪ জনকে জনতার হাত থেকে বাঁচান ও তাদেরকে আটক করে থানায় পাঠিয়ে দেন। গুরুতর আহত সেজান মারা গেছেন এই খবর পেয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্দ হয়ে শাহিন ও তার বন্ধু আলামিনের বাসায় ভাঙচুর চালান। তবে সদর থানার ওসি’র সাহসী হস্তক্ষেপে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরে ওসি’র নির্দেশে পুলিশের আরেকটি দল ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে রাতে সেনবাহিনী সদস্যরা সেখানে এসে এলাকাবাসীকে তাদের বাসায় পাঠিয়ে দেন।
ওই ঘটনায় শফিকুলসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শফিকুল সুদের বিনিময়ে মানুষকে টাকা ধার হিসেবে দেন। শফিকুল ও তার ছেলেরা বিগত আঃ লীগ সরকারের সময় এলাকায় বিভিন্ন ভাবে প্রভাব বিস্তার করে ও এলাকাবাসীকে নানাভাবে হয়রানি করেন। এলাকার কিছু মানুষের নামে একটি মিথ্যা মামলাও করেন শফিকুল।
সেজানের মা বিলকিস বলেন, “ছেলে ও স্বামীর জন্য দোয়া করবেন। ছেলের বন্ধু রোহানের মা নেই। সে আমার ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও আঘাত পায়। আমি দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সদর থানার ওসি মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, “ দুপুরে জুম্মার নামাজের পরে হাসাহাসির মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোরদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। সন্ধ্যায় ছুরি দিয়ে ২ জনকে আঘাত করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। এলাকাবাসী অভিযোগ করায় আমরা ৪ জনকে আটক করি। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর করে। আমরা তাদেরকে নিভৃত করতে সক্ষম হই। আমি রংপুরে কথা বলেছি কেউ মারা যাননি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।