মোঃ মাসুদ রানা মনি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজীর স্থাপন করলেন রামগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। নিজেদের পূজার প্রতিমা ভাঙচুর করা হলেও থানায় এসে অভিযুক্ত শিশুদের নিজেদের জিম্মায় নিয়ে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন সনাতন ধর্মালম্বী নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিষয়টি খুব ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। সাধুবাদ জানিয়েছেন সনাতন ধর্মালম্বীদের এমন আন্তরিকতায়।
তবে আড়াল থেকে কে-বা কারা এমন নেক্কারজনক ঘটনার ইন্ধন দিয়েছে সে লক্ষ্যেও কাজ করার অনুরোধ করেছেন তারা।
উল্লেখ্য লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঙ্গিরগাঁও গ্রামের রামচরন দে বাড়ীর দূর্গা পূজা মণ্ডপের কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ একই এলাকার আকরাম উদ্দিন পন্ডিত বাড়ীর বাবুল মিয়ার ছেলে আবদুর রহমান জাহিদ -১০- রাজন মিয়ার ছেলে রিফাত -১১- আলাউদ্দিনের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত মুন্না -১২- ও ফারুকের ছেলে সালমান -৮-কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।
পরে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতায় আটক শিশুদের নিজ জিম্মায় নিয়ে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে । আটককৃত সবাই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
রামচরন দে বাড়ীর শিখা রানী দে ও ওয়াসিমা রানী দে জানান, গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের কিছুক্ষণ আগে উল্লেখিত ছেলেরাসহ ৭-৮ জন কম বয়সী ছেলে হটাৎ করে এসেই মন্দিরের সামনে রোদে শুকাতে দেয়া প্রতিমা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এসময় তারা কয়েকটি প্রতিমার হাত লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে। পরে আমরা দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে বাড়ির লোকজন বের হয়ে আসলে হামলার সাথে সম্পৃক্ত শিশুরা পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আকতার হোসেন- এডিসি প্রিয়াঙ্কা দত্ত- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হাসান মোস্তফা স্বপন- পুলিশ সুপার -সার্কেল- শেখ সাদী, রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুন, সহকারী কমিশনার -ভূমি- দেবব্রত দাশ- রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সোলাইমানসহ প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অপূর্ব কুমার সাহা- কেন্দ্রীয় জোট নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম- উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন মজু, উপজেলা জামায়াতের আমীর নাজমুল হাসান- জেলা জামায়াত নেতা মাষ্টার আবুল হোসেন- উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমৃত কর্মকার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমীর রঞ্জন সাহা ও পূজা মণ্ডপের সভাপতি দিলিপ দেসহ স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
আটককৃত শিশুরা জানায়, আমরা নামাজের আগে হিন্দু বাড়ীতে গিয়ে মূর্তি -প্রতিমা- ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি। কি কারনে তারা এমন কাজ করেছে তা বলতে পারেনি।
উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অপূর্ব কুমার সাহা জানান- আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের যেন আটক করা হয়। এত ছোট ছোট শিশুদের দেখে আমাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে। এদেরকে যেন কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে জোর খেয়াল রাখতে হবে।
পুলিশ সুপার মোঃ আকতার হোসেন জানান- আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে অন্য কর্মকর্তাদের সাথে ছুটে আসি। পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি জুমার নামাজের পূর্বে ৭-৮ জন শিশু মিলে প্রতিমা ভাঙচুর করে। যাদের বয়স সাত থেকে তেরো বছর। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ করছি এবং প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে।