
স্টাফ রিপোর্টার- মেহেরপুর।।
পুঁইশাক বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবারেই একটি জনপ্রিয় শাক। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটা হাট বাজারেই সারা বছর ধরে এ শাক বিক্রি হয়ে থাকে। তেমনিভাবে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটা বাড়ির উঠানে এ গাছ লাগিয়ে থাকেন। যা মা বোনেরা বাঁশের মাচা- ঘরের কার্নিশে কিংবা টিনের চালে তুলে দেন। পুঁইশাক উৎপাদনে মেহেরপুরের নারীদের ভূমিকা কিন্তু কম নয়। কারণ উৎপাদিত শাক থেকে বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে উক্ত বীজ থেকে আবারও পুঁইশাকের চারা তৈরি করে তা রোপণ করে থাকে। যা কিছু দিনের মধ্যেই খাবার উপযোগী হলে তা কর্তন করে রান্না করে থাকে। কর্তনকৃত অংশ থেকে আবারও কয়েকটি কুশি বেরিয়ে ফলন আরও বৃদ্ধি করে।
এসব শাক পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন মা-বোনেরা। কেউ কেউ গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিও করেন। এ থেকে অর্থনৈতিক ভাবে মা-বোনেরা স্বাবলম্বী হয়ে থাকেন। শুধু পুঁইশাকই নয় শাকের কাঁচা-পাকা বীজও-মুচড়ি- ভালো দামে বিক্রি করেন।
হাটবাজারের মতো পাড়ার লোকজনের কাছেই বিক্রি করা হয়।
বর্তমান বাজারে পুঁইশাক ২০ টাকা কেজি দরে, মুচড়িসহ শাক ৩০/৪০ টাকা এবং শুধুমাত্র মুচড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। তবে পাকা মুচড়ি বিক্রি হচ্ছে ১’শ টাকা কেজি দরে। এমন দৃশ্য মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার সকল এলাকায় চোখে মিলবে।
শুধু বাড়িতেই নয় মাঠেও অনেকে শাক বিক্রির জন্য এ আবাদ করে থাকেন। কেউ বীজ উৎপাদন, কেউ আবার শাক বিক্রির পর মুচড়িও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
বাড়ির উঠানে নয় বরং মাঠে বাঁশের মাচায় স্বল্প জমিতে পুঁই শাকের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন একজন কাতার প্রবাসী রবিউল ইসলামের খোঁজ পাওয়া গেছে। যিনি মাত্র ৬ কাঠা জমিতে পুঁই শাকের আবাদ করে এ পর্যন্ত শাক বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকার। পৌষের শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিক্রি করতে শুরু করেছেন পুঁই শাকের মুচড়ি। ইতিমধ্যেই ৩ হাজার টাকার মুচড়ি বিক্রি করেছেন। আগামী ২ মাসে আরও ৩০ হাজার টাকার মুচড়ি বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গাংনী উপজেলার মাইলমারী ফেলারচড়া মাঠে গিয়ে দেখা মেলে রবিউল ইসলাম ও তিনার সহধর্মিণী শর্মিলা খাতুনের পুঁইশাকের মুচড়ি, শিম ও বেগুন তোলার দৃশ্য।
রবিউল জানান, কাতার থেকে ফিরে কোন এক কৃষকের পরামর্শে শুরু করেন লাভজনক এ পুইঁ শাকের আবাদ। ১ হাজার টাকা কেজি দরে ভাটপাড়া বাজার থেকে হাইব্রিড জাতের পুঁই শাকের বীজ কিনে হালচাষ দিয়ে জমিতে শুরু করেন এ আবাদ। গত ৪ মাস ধরে পুঁই শাক বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ হাজার টাকার। এখন শুরু করেছেন পুঁইয়ের মুচড়ি বিক্রি। তিনি জানান, মাঝে মধ্যে কিছু সার, কয়েকটি সেচ আর সপ্তাহে ২/১ বার কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া আর কিছু প্রয়োজন হয়না এ আবাদে। তবে পুঁই শাকের গাছ উপরে তুলতে মাচা তৈরিতে কিছু খরচ রয়েছে। এতেই অনায়াসে চলছে তিনার সংসারের যাবতীয় খরচাদি। তিনি জানান, পুঁইশাক উৎপাদন খুবই লাভজনক।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে পিঁয়াজ ও ফুলকপির আবাদ করে যেসব কৃষক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন তিনারাও এসব আবাদ বাদ দিয়ে পুঁই শাকের আবাদ করে দেখতে পারেন লাভের মুখ। পুঁইশাকের আবাদে গাছের যত্ন, শাক কর্তন, মুচড়ি ছাড়ানোসহ রবিউলকে সকল ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন
তিনার স্ত্রী শর্মিলা খাতুন বলেও তিনি জানান।
শর্মিলার সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্বামী বিদেশ থেকে ফিরেই এ আবাদ শুরু করেন। জমি বাড়ির নিকটে হওয়াতে দু’জনেই পুঁইশাকের গাছের পরিচর্যা করে থাকেন। শুধু পুঁই শাকই নয় এখানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়েছে শিম, পটল এবং জমির চারিপাশ দিয়ে বেশ কিছু বেগুনের। যা থেকে সংসারে সবজির চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
শর্মিলা জানান, নিজ পরিকল্পনাতেই তারা এ চাষাবাদ করে থাকেন। যদি কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হতো তাহলে আরও বেশি স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।