Dhaka , Thursday, 4 December 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
রূপগঞ্জে ১৫ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার মধ্যনগরে বাঁশের সাঁকু উদ্বোধন করলেন এমপি প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বার বক্তাবলীতে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ রূপগঞ্জে প্রজন্ম ৭১-এর নবগঠিত কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ, দিপু ভূঁইয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা নরসিংদী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল শান্ত সকাল জাজিরা থানার ওসি মাইনুলের বদলি: স্বস্তিতে আ.লীগ, হতাশ সাধারণ মানুষ মধুপুরে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন লালমনিরহাটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা: বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় নারী নিহত, আহত ৩ বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় রূপগঞ্জে বিএনপির দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা বৃহত্তর চকরিয়া–মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ও উপ-লাইন পরিচালনায় ১৭ সদস্যের নতুন কমিটি অনুমোদন রামুতে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত পাইকগাছায় কে এফ ডি ’৮৯ ব্যাচের উদ্যোগে প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ পাইকগাছায় নানা পরিবর্তনের অঙ্গীকার করলেন-আবুল কালাম আজাদ নোয়াখালীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবীতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে কঠোর নির্যাতন করা হয়েছিলঃ রফিকুল ইসলাম জামাল রামগঞ্জে চাচা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত  চবি উপাচার্যের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রফেসর মার্ক ভিনে এর সাক্ষাৎ। আটঘরিয়ার একদন্ত ইউপি চেয়ারম্যান আলাল বরখাস্ত, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ  রাজাপুরে আঙ্গারিয়া আলিম মাদ্রাসার গভর্নিং বডি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে চোর সন্দেহে দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ১ কাঁঠালিয়ায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে হাসপাতালে উপস্থিত শায়খে চরমোনাই আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ : সহপাঠী ও সিনিয়রসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে  রূপগঞ্জে শারিরিক প্রতিবন্ধী শিশুকে হুইল চেয়ার উপহার কোতোয়ালী থানার অভিযানে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ কুমার চৌধুরী গ্রেফতার  আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভুমিকম্পের ঝুঁকি শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রূপগঞ্জে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবীতে অর্ধবেলা কর্মবিরতি ; রোগী ভোগান্তি চরমে ৩১ বছরের বঞ্চনা! রূপগঞ্জে টেকনোলজিস্টদের আলটিমেটাম: ১০ম গ্রেড না পেলে ৪ ডিসেম্বর থেকে ‘শাটডাউন’ মানবতার সেবা: শ্রীলংকায় দুর্যোগপ্রবণদের পাশে বাংলাদেশ

ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারক ওমর খৈয়াম এর মৃত্যু দিন

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 12:21:49 am, Saturday, 4 December 2021
  • 287 বার পড়া হয়েছে

ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারক ওমর খৈয়াম এর মৃত্যু দিন

 

আব্বাস আলী। ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি।।

গিয়াসউদিন আবুল‌ ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম নিশাপুরি একজন ইরানের কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। এই বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম ১৮ই মে ১০৪৮ সাল, মৃত্য দিন ৪ই ডিসেম্বর ১১৩১সাল।

“ সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি, জানি না আমি
এ এমন এক জটিল বাক্য যা পড়তে পারো না তুমি, না আমি
পর্দার আড়ালে তোমায় ও আমার মাঝে চলছে এ আলাপ
পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবে না তুমি ও আমি।”

অর্থাৎ সৃষ্টির রহস্যকে আমাদের কাছে রহস্যময় ও পর্দাবৃত মনে হয়। কিন্তু মনের চোখ বা আসল চোখ দিয়ে দেখা সম্ভব হলে এ পর্দা থাকে না।

আল্লাহকে জানতে হলে আগে নিজেকে জানা প্রয়োজন এমন ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লিখেছেনঃ
“ বিশ্ব-দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা খুঁজি জীবন-ভর
ফিরনু বৃথাই সাগর গিরি কান্তার বন আকাশ-ক্রোড়।
জানলাম শেষ জিজ্ঞাসিয়া দরবেশ এক মুর্শিদে
জামশেদের এই জাম-বাটি এই আমার দেহ আত্মা মোর।”

মহান আল্লাহর দয়া সম্পর্কে খৈয়াম প্রার্থনাসূচক রুবাইয়ে লিখেছেন,
“ দয়া যদি কৃপা তব সত্য যদি তুমি দয়াবান
কেন তবে তব স্বর্গে পাপী কভু নাহি পায় স্থান?
পাপীদেরই দয়া করা সেই তো দয়ার পরিচয়
পূণ্যফলে দয়া লাভ সে তো ঠিক দয়া তব নয়।”

ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করার পর যুবা বয়সে তিনি সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এর পর বুখারায় নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ “Treatise on Demonstration of Problems of Algebra“ গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে। ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুস্তক মাকালাত ফি আল জাবর্ আল মুকাবিলা প্রকাশিত হয়।

তিনি তার কবিতা সমগ্র, যা ওমর খৈয়ামের রূবাইয়াত নামে পরিচিত, তার জন্য বিখ্যাত। তার কাব্য-প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। ধারণা করা হয় রনে দেকার্তের আগে তিনি বিশ্লেষণী জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান তিনিই প্রথম করেন। বহুমুখী প্রতিভার দৃষ্টান্ত দিতে বলা হলে বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন ওমর খৈয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয়।

দর্শন ও শিক্ষকতায় ওমরের কাজ তার কবিতা ও বৈজ্ঞানিক কাজের আড়ালে অনেকখানি চাপা পড়েছে বলে মনে করা হয়। মধ্যযুগের মুসলিম মনীষা জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে “বিশ্ব দার্শনিক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেক সূত্রে জানা গেছে তিনি নিশাপুরে তিন দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন।
ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসাবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাই এর অনুবাদ এবং তার প্রচারের কারণে। ইংরেজি ভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজ মনীষী টমাস হাইড প্রথম অ-পারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমর কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন।

ইরানের নিশাপুর শহরে ওমরের জন্ম। তার পিতা ছিলেন তাঁবুর কারিগর ও মৃৎশিল্পী। ছোটবেলায় তিনি বালি শহরে সে সময়কার বিখ্যাত পণ্ডিত শেখ মুহাম্মদ মানসুরীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। যৌবনে তিনি ইমাম মোআফ্ফাক-এর অধীনে পড়াশোনা করেন।

ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছু সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালক্ শহরে। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনীষী মহাম্মদ মনসুরীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত ইমাম মোয়াফ্ফেক নিশাপুরির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। জীবনের পুরো সময় জুড়ে ওমর তার সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন। দিনের বেলায় জ্যামিতি ও বীজগণিত পড়ানো, সন্ধ্যায় মালিক-শাহ-এর দরবারে পরামর্শ প্রদান এবং রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চ্চার পাশাপাশি জালালি বর্ষপঞ্জি সংশোধন! সবটাতে তার নিষ্ঠার কোন কমতি ছিল না।

ইসফাহান শহরে ওমরের দিনগুলি খুবই কার্যকর ছিল। কিন্তু আততায়ীর হাতে সুলতান মালিক শাহ-এর মৃত্যুর পর তার বিধবা পত্নী ওমরের ওপর রুষ্ঠ হলে ওমর হজ্ব করার জন্য মক্কা ও মদীনায় চলে যান।পরে তাকে নিশাপুরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। নিশাপুরে ওমর গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক তার বিখ্যাত কাজগুলো সম্পন্ন করেন।

ওমর খৈয়াম জ্যোতির্বিদ হিসাবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। সেলজুকের বাদশাহ মালিক শাহ ১০৭৩ সালে আরো কয়েকজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে ওমরকেও আমন্ত্রণ জানান একটি মানমিন্দর নির্মাণের জন্য। ওমর তখন অত্যন্ত সফলভাবে (দশমিকের পর ছয় ঘর পর্যন্ত) সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। তার হিসাবে এটি ছিল ৩৬৫.২৪২১৯৮৫৮১৫৬ দিন। এই ক্যালেন্ডারের হিসাবে প্রতি ৫,৫০০ বছরে এক ঘণ্টার গড়মিল হয়ে থাকে। আমরা যে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করি তাতে প্রতি ৩,৩০০বছরে একদিন গোলমাল হয়ে থাকে। কীভাবে পারস্য পঞ্জিকা সংশোধন করতে হবে তাও তিনি হিসাব করেন। ১০৭৯ সালের ১৫ মার্চ সুলতান জালাল আল-‌দিন মালিক শাহ সালজুক ওমরের সংশোধিত বর্ষপঞ্জী চালু করেন। ওমর একটি তারাচিত্র বা খ‌ন্ড চিত্রও তৈরি করেন তবে সেটি এখন আর পাওয়া যায় না।

মার্কিন কবি জেমস রাসেল লোয়েল ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চতুষ্পদী কবিতাগুলোকে “চিন্তা-উদ্দীপক পারস্য উপসাগরের মনিমুক্তা “বলে অভিহিত করেছেন। ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চারপংক্তির কবিতাগুলো প্রথমবারের মত ইংরেজিতে অনূদিত হয় খৃষ্টীয় ১৮৫৯ সালে।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে ১৫ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারক ওমর খৈয়াম এর মৃত্যু দিন

আপডেট সময় : 12:21:49 am, Saturday, 4 December 2021

 

আব্বাস আলী। ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি।।

গিয়াসউদিন আবুল‌ ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম নিশাপুরি একজন ইরানের কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। এই বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম ১৮ই মে ১০৪৮ সাল, মৃত্য দিন ৪ই ডিসেম্বর ১১৩১সাল।

“ সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি, জানি না আমি
এ এমন এক জটিল বাক্য যা পড়তে পারো না তুমি, না আমি
পর্দার আড়ালে তোমায় ও আমার মাঝে চলছে এ আলাপ
পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবে না তুমি ও আমি।”

অর্থাৎ সৃষ্টির রহস্যকে আমাদের কাছে রহস্যময় ও পর্দাবৃত মনে হয়। কিন্তু মনের চোখ বা আসল চোখ দিয়ে দেখা সম্ভব হলে এ পর্দা থাকে না।

আল্লাহকে জানতে হলে আগে নিজেকে জানা প্রয়োজন এমন ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লিখেছেনঃ
“ বিশ্ব-দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা খুঁজি জীবন-ভর
ফিরনু বৃথাই সাগর গিরি কান্তার বন আকাশ-ক্রোড়।
জানলাম শেষ জিজ্ঞাসিয়া দরবেশ এক মুর্শিদে
জামশেদের এই জাম-বাটি এই আমার দেহ আত্মা মোর।”

মহান আল্লাহর দয়া সম্পর্কে খৈয়াম প্রার্থনাসূচক রুবাইয়ে লিখেছেন,
“ দয়া যদি কৃপা তব সত্য যদি তুমি দয়াবান
কেন তবে তব স্বর্গে পাপী কভু নাহি পায় স্থান?
পাপীদেরই দয়া করা সেই তো দয়ার পরিচয়
পূণ্যফলে দয়া লাভ সে তো ঠিক দয়া তব নয়।”

ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করার পর যুবা বয়সে তিনি সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এর পর বুখারায় নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ “Treatise on Demonstration of Problems of Algebra“ গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে। ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুস্তক মাকালাত ফি আল জাবর্ আল মুকাবিলা প্রকাশিত হয়।

তিনি তার কবিতা সমগ্র, যা ওমর খৈয়ামের রূবাইয়াত নামে পরিচিত, তার জন্য বিখ্যাত। তার কাব্য-প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। ধারণা করা হয় রনে দেকার্তের আগে তিনি বিশ্লেষণী জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান তিনিই প্রথম করেন। বহুমুখী প্রতিভার দৃষ্টান্ত দিতে বলা হলে বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন ওমর খৈয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয়।

দর্শন ও শিক্ষকতায় ওমরের কাজ তার কবিতা ও বৈজ্ঞানিক কাজের আড়ালে অনেকখানি চাপা পড়েছে বলে মনে করা হয়। মধ্যযুগের মুসলিম মনীষা জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে “বিশ্ব দার্শনিক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেক সূত্রে জানা গেছে তিনি নিশাপুরে তিন দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন।
ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসাবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাই এর অনুবাদ এবং তার প্রচারের কারণে। ইংরেজি ভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজ মনীষী টমাস হাইড প্রথম অ-পারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমর কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন।

ইরানের নিশাপুর শহরে ওমরের জন্ম। তার পিতা ছিলেন তাঁবুর কারিগর ও মৃৎশিল্পী। ছোটবেলায় তিনি বালি শহরে সে সময়কার বিখ্যাত পণ্ডিত শেখ মুহাম্মদ মানসুরীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। যৌবনে তিনি ইমাম মোআফ্ফাক-এর অধীনে পড়াশোনা করেন।

ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছু সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালক্ শহরে। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনীষী মহাম্মদ মনসুরীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত ইমাম মোয়াফ্ফেক নিশাপুরির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। জীবনের পুরো সময় জুড়ে ওমর তার সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন। দিনের বেলায় জ্যামিতি ও বীজগণিত পড়ানো, সন্ধ্যায় মালিক-শাহ-এর দরবারে পরামর্শ প্রদান এবং রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চ্চার পাশাপাশি জালালি বর্ষপঞ্জি সংশোধন! সবটাতে তার নিষ্ঠার কোন কমতি ছিল না।

ইসফাহান শহরে ওমরের দিনগুলি খুবই কার্যকর ছিল। কিন্তু আততায়ীর হাতে সুলতান মালিক শাহ-এর মৃত্যুর পর তার বিধবা পত্নী ওমরের ওপর রুষ্ঠ হলে ওমর হজ্ব করার জন্য মক্কা ও মদীনায় চলে যান।পরে তাকে নিশাপুরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। নিশাপুরে ওমর গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক তার বিখ্যাত কাজগুলো সম্পন্ন করেন।

ওমর খৈয়াম জ্যোতির্বিদ হিসাবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। সেলজুকের বাদশাহ মালিক শাহ ১০৭৩ সালে আরো কয়েকজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে ওমরকেও আমন্ত্রণ জানান একটি মানমিন্দর নির্মাণের জন্য। ওমর তখন অত্যন্ত সফলভাবে (দশমিকের পর ছয় ঘর পর্যন্ত) সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। তার হিসাবে এটি ছিল ৩৬৫.২৪২১৯৮৫৮১৫৬ দিন। এই ক্যালেন্ডারের হিসাবে প্রতি ৫,৫০০ বছরে এক ঘণ্টার গড়মিল হয়ে থাকে। আমরা যে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করি তাতে প্রতি ৩,৩০০বছরে একদিন গোলমাল হয়ে থাকে। কীভাবে পারস্য পঞ্জিকা সংশোধন করতে হবে তাও তিনি হিসাব করেন। ১০৭৯ সালের ১৫ মার্চ সুলতান জালাল আল-‌দিন মালিক শাহ সালজুক ওমরের সংশোধিত বর্ষপঞ্জী চালু করেন। ওমর একটি তারাচিত্র বা খ‌ন্ড চিত্রও তৈরি করেন তবে সেটি এখন আর পাওয়া যায় না।

মার্কিন কবি জেমস রাসেল লোয়েল ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চতুষ্পদী কবিতাগুলোকে “চিন্তা-উদ্দীপক পারস্য উপসাগরের মনিমুক্তা “বলে অভিহিত করেছেন। ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চারপংক্তির কবিতাগুলো প্রথমবারের মত ইংরেজিতে অনূদিত হয় খৃষ্টীয় ১৮৫৯ সালে।