Dhaka , Thursday, 31 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান প্রধান তথ্য কর্মকর্তার ব্যারিস্টার কায়সার কামালের মানবিক উদ্যোগে চোখে আলো ফিরছে তাদের লালমনিরহাটের আদিতমারীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: টিনের চালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিকের প্রাণহানি লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা থানায় মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম লালমনিরহাটে তিস্তার পানি কমতে শুরু করলেও পানিবন্দি হাজারো পরিবার, দুর্ভোগ চরমে লালমনিরহাটে সনাকের দুর্নীতিবিরোধী অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা সম্পন্ন: স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন জোরদারের অঙ্গীকার রামগঞ্জে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘শফি ডাকাত’ গ্রেনেড-অস্ত্রসহ গ্রেফতার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাবের অভিযান রাতের আঁধারে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ২ হাজার পান গাছ কর্তন! সতর্কতা: দেশের সাত অঞ্চলে ঝড়ের আভাস, বেগ হতে পারে ৬০ কিমি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়ে কৃতি শিক্ষার্থী সম্বর্ধনা,পাশেই উপজেলা পরিষদের হলরুম জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়: – মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন শফিউল বারী বাবু ছিলেন বিএনপির রাজনীতির এক নির্ভিক সৈনিক :-নাজিমুর রহমান জৈন্তাপুরে ১০,০০০ বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপন অভিযান এর উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক, সিলেট ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে গভীর রাতে তিন সন্তানের জননী গৃহবধূ ধর্ষণ- ধর্ষক গ্রেফতার । মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার আম্বিয়া সেরীন আবাসিক এপার্টমেন্ট ভবনে ১৫ বিজিবির বড় আঘাত: কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ইস্কাফ সিরাপ জব্দ শরীয়তপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীর শাবলের নির্মম আঘাতে স্ত্রী নিহত শিক্ষক, বাবা ও মাকে ফুল কিনে দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করেছেন – শিক্ষা উপদেষ্টা। বাঘ শুধু প্রাণী নয়, আমাদের অহংকার—চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেত্রকোণার দুর্গাপুরে কমরেড মণি সিংহের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত রূপগঞ্জে মুচলেকা দেওয়ার পরও  মাদকসহ এলাকাবাসীর কাছে আটক জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও সম্মুখ যোদ্ধাদের ক্রেস্ট ও সন্মাননা প্রদান, সপ্তাহ ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ: রেল দুর্ঘটনায় লাইনচ্যুত ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ লালমনিরহাটে ট্রেন সংঘর্ষ: বিজিবি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেল বিস্তারিত সীমান্তজুড়ে ১৫ বিজিবি’র সফল মাদকবিরোধী অভিযান: বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ফেনসিডিল আদিতমারীতে জমি বিবাদে রক্তপাত: ৮৫ বছরের বৃদ্ধার মর্মান্তিক মৃত্যু, আটক দুই নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্র ও গুলি সহ দুই নারী গ্রেফতার রূপগঞ্জে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য যুবকের লাশ কবর থেকে উত্তেলন পুলিশ এখন আই উইটনেস হয়েছে, বিচার পক্রিয়া শুরু হয়েছে :- হুম্মাম কাদের

সদরপুরে চুন,রং,চিনিতে তৈরি হচ্ছে নকল  খেজুর গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 10:56:46 am, Wednesday, 1 January 2025
  • 125 বার পড়া হয়েছে

সদরপুরে চুন,রং,চিনিতে তৈরি হচ্ছে নকল  খেজুর গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ।।

মামুন মিঞা

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফরিদপুর।।

   

   

ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের আলাদা একটা সুনাম ছিলো বহু বছর আগে থেকেই।খাঁটি গুড়ের সুগন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে অগ্রহায়ণ মাসেই।এ গুড়ের স্বাদই আলাদা।সেই খেজুরের গুড় এখন নেই বললেই চলে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে অতি গোপনে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।দেখে বুঝার ও কায়দা নেই-হুবহু এক রকমের। স্বাদ গন্ধও ঠিক আছে। বিশেষ করে সদরপুর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।
    
খেজুরের রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। দেখতে অবিকল  খেজুর গুড়ের মতো মনে হলেও আসলে এসব ভেজাল খেজুর গুড়। এসব গুড়ের উপাদান অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি,পুরাতন পঁচা গুড়, রং, আটা- চুন- রাসায়নিক এবং ভেষজ নির্যাস।

ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় প্রতিবছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে ভেজাল গুড়ের উৎপাদন। এজন্য এ উপজেলার ঢেউখালী, নয়রশি ও কৃষ্ণপুরসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কারখানা। প্রতিদিন এ গুড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে ফরিদপুরের গুড়ের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- শীত এলে সদরপুরে এক শ্রেণির মৌসুমে ব্যবসায়ী কারিগর এনে অথবা নিজেরাই কারখানা খুলে বসেন। রাতারাতি প্রতিটি কারখানায় ২০০-৩০০ কেজি গুড় তৈরি করেন। এর পর বিভিন্ন হাট বাজারে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি করেন। বিশেষ করে চন্দ্রপাড়া ও আটরশি দরবার শরীফের বাৎসরিক ওরস আসলে এসব গুড় বেশি বানানো হয়। চড়া দামে বিক্রি করেন এসব গুড়।

সরেজমিন কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র গড়ে উঠেছে কারখানা।  ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের টিন কেটে টুকরো করা হচ্ছে। সাথে দেওয়া হচ্ছে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়,দিয়ে জ্বালানো হয়। পরে অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের দলা  মেশানো হচ্ছে। তারপর দেওয়া হচ্ছে  নির্যাস, রং, রাসায়নিক, চুন ও আটা। মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে অভিনব  খেজুরের গুড়।প্রকাশ্যে চলছে এমন কর্মকাণ্ড।
অপরিশোধিত চিনি-গুড় ভারত থেকে আমদানি করা হয় বলে দাবি কারখানা মালিকদের।

তারা বলেন, অনেক আগে থেকেই এসব ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে প্রতি মণ গুড় তৈরিতে খেজুরের রস কিংবা ঝোলা গুড়ের সঙ্গে ৫-১০ কেজি চিনি দেওয়া হতো। এখন টিনভর্তি ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের প্রায় ২২ কেজি উপকরণ মেশানো হয়।

এর সঙ্গে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়, আটা ও রাসায়নিক মেশালেই এক মণ গুড় হয়। প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনি-গুড় ৭০-৮০ টাকায় কিনলেও বাজারের খেজুরের গুড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে কয়েক গুণ লাভ হচ্ছে।

উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের এক গাছি আজাদ হোসেন বলেন, আগে ফরিদপুরের নাম শুনলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন গুড় কিনতে। তবে বর্তমানে প্রতারিত হয়ে তারা আগ্রহ হারিয়েছে।

এখন গাছিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসল গুড় কিনতে হয়। ভেজাল গুড়ে ভেষজ নির্যাস মেশানোর কারণে আসলের চেয়ে ঘ্রাণ বেশি হয়। বাজারে আসল ও ভেজাল, সব একই দাম। আসল গুড় তৈরি করা কঠিন। এ জন্য রস ও ঝোলা গুড় কেজি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। তারা অগ্রিম টাকা দিয়ে এসব কিনছে।

গুড় তৈরি কারখানার কারিগরদের সাথে কথা বলে জানাযায়,প্রাকৃতিক কারণে খেজুর গাছে আগের মতো রস হয় না। রস ছাড়া আসল খেজুর গুড় তৈরি করবো কিভাবে? গুড়ের পরিমাণ বাড়াতে সামান্য রসের সাথে আমরা চিনি মেশাই। যখন রস থাকেনা তখন পুরাতন গুড়, চিনি আর কেমিক্যাল দিয়ে নতুন গুড় তৈরি করি। তাতে অল্প টাকায় কিছুটা গুড়ের স্বাদ পায় ক্রেতারা। আমরা এসব গুড় তৈরি করছি বলে অনেকে গুড় খেতে পারছে। না হলে গুড় আর চোখে দেখতে হতো না।

কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় খেলে আলসার- ডায়রিয়া- কলেরাসহ পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা.মো.সালাউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, এসব গুড় দিয়ে শিশুদের খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে কিডনি, হৃদযন্ত্র, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন- গাছ কমলেও গুড়ের উৎপাদন বেড়েছে। কারখানাগুলোয় নিম্নমানের সাদা ও লাল অপরিশোধিত চিনি-গুড় মেশানো হচ্ছে। এতে গুনগত মান থাকছে না। এতে প্রকৃত উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছি কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি -ক্যাব- এর সদরপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাত কুমার সাহা বলেন, ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধে এ উপজেলায় অনেক অভিযান চালানো প্রয়োজন। নতুন কিছু কারখানার তথ্য মিলেছে। সেখানে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রশাসনের সাথে আমরা আলোচনা করবো।

উপজেলার সচেতন মহল বলছে, কারখানাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না আসল গাছিরা। গাছিরা দৈনিক ১০ কেজি গুড় তৈরিতেই ক্লান্ত আর কারখানা মালিকরা দিনে ১০ থেকে ১২ মণ গুড় তৈরি করছে। বর্তমানে সুনাম হারাতে বসেছে ফরিদপুর অঞ্চলের গুড়।

এভাবে চলতে থাকলে সদরপুরসহ ফরিদপুরের গুড় আর চলবে না। সদরপুরে ভেজাল গুড়ের কারখানা বন্ধে দ্রুত অভিযানের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান প্রধান তথ্য কর্মকর্তার

সদরপুরে চুন,রং,চিনিতে তৈরি হচ্ছে নকল  খেজুর গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ।।

আপডেট সময় : 10:56:46 am, Wednesday, 1 January 2025

মামুন মিঞা

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফরিদপুর।।

   

   

ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের আলাদা একটা সুনাম ছিলো বহু বছর আগে থেকেই।খাঁটি গুড়ের সুগন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে অগ্রহায়ণ মাসেই।এ গুড়ের স্বাদই আলাদা।সেই খেজুরের গুড় এখন নেই বললেই চলে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে অতি গোপনে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।দেখে বুঝার ও কায়দা নেই-হুবহু এক রকমের। স্বাদ গন্ধও ঠিক আছে। বিশেষ করে সদরপুর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।
    
খেজুরের রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। দেখতে অবিকল  খেজুর গুড়ের মতো মনে হলেও আসলে এসব ভেজাল খেজুর গুড়। এসব গুড়ের উপাদান অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি,পুরাতন পঁচা গুড়, রং, আটা- চুন- রাসায়নিক এবং ভেষজ নির্যাস।

ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় প্রতিবছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে ভেজাল গুড়ের উৎপাদন। এজন্য এ উপজেলার ঢেউখালী, নয়রশি ও কৃষ্ণপুরসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কারখানা। প্রতিদিন এ গুড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে ফরিদপুরের গুড়ের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- শীত এলে সদরপুরে এক শ্রেণির মৌসুমে ব্যবসায়ী কারিগর এনে অথবা নিজেরাই কারখানা খুলে বসেন। রাতারাতি প্রতিটি কারখানায় ২০০-৩০০ কেজি গুড় তৈরি করেন। এর পর বিভিন্ন হাট বাজারে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি করেন। বিশেষ করে চন্দ্রপাড়া ও আটরশি দরবার শরীফের বাৎসরিক ওরস আসলে এসব গুড় বেশি বানানো হয়। চড়া দামে বিক্রি করেন এসব গুড়।

সরেজমিন কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র গড়ে উঠেছে কারখানা।  ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের টিন কেটে টুকরো করা হচ্ছে। সাথে দেওয়া হচ্ছে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়,দিয়ে জ্বালানো হয়। পরে অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের দলা  মেশানো হচ্ছে। তারপর দেওয়া হচ্ছে  নির্যাস, রং, রাসায়নিক, চুন ও আটা। মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে অভিনব  খেজুরের গুড়।প্রকাশ্যে চলছে এমন কর্মকাণ্ড।
অপরিশোধিত চিনি-গুড় ভারত থেকে আমদানি করা হয় বলে দাবি কারখানা মালিকদের।

তারা বলেন, অনেক আগে থেকেই এসব ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে প্রতি মণ গুড় তৈরিতে খেজুরের রস কিংবা ঝোলা গুড়ের সঙ্গে ৫-১০ কেজি চিনি দেওয়া হতো। এখন টিনভর্তি ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের প্রায় ২২ কেজি উপকরণ মেশানো হয়।

এর সঙ্গে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়, আটা ও রাসায়নিক মেশালেই এক মণ গুড় হয়। প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনি-গুড় ৭০-৮০ টাকায় কিনলেও বাজারের খেজুরের গুড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে কয়েক গুণ লাভ হচ্ছে।

উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের এক গাছি আজাদ হোসেন বলেন, আগে ফরিদপুরের নাম শুনলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন গুড় কিনতে। তবে বর্তমানে প্রতারিত হয়ে তারা আগ্রহ হারিয়েছে।

এখন গাছিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসল গুড় কিনতে হয়। ভেজাল গুড়ে ভেষজ নির্যাস মেশানোর কারণে আসলের চেয়ে ঘ্রাণ বেশি হয়। বাজারে আসল ও ভেজাল, সব একই দাম। আসল গুড় তৈরি করা কঠিন। এ জন্য রস ও ঝোলা গুড় কেজি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। তারা অগ্রিম টাকা দিয়ে এসব কিনছে।

গুড় তৈরি কারখানার কারিগরদের সাথে কথা বলে জানাযায়,প্রাকৃতিক কারণে খেজুর গাছে আগের মতো রস হয় না। রস ছাড়া আসল খেজুর গুড় তৈরি করবো কিভাবে? গুড়ের পরিমাণ বাড়াতে সামান্য রসের সাথে আমরা চিনি মেশাই। যখন রস থাকেনা তখন পুরাতন গুড়, চিনি আর কেমিক্যাল দিয়ে নতুন গুড় তৈরি করি। তাতে অল্প টাকায় কিছুটা গুড়ের স্বাদ পায় ক্রেতারা। আমরা এসব গুড় তৈরি করছি বলে অনেকে গুড় খেতে পারছে। না হলে গুড় আর চোখে দেখতে হতো না।

কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় খেলে আলসার- ডায়রিয়া- কলেরাসহ পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা.মো.সালাউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, এসব গুড় দিয়ে শিশুদের খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে কিডনি, হৃদযন্ত্র, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন- গাছ কমলেও গুড়ের উৎপাদন বেড়েছে। কারখানাগুলোয় নিম্নমানের সাদা ও লাল অপরিশোধিত চিনি-গুড় মেশানো হচ্ছে। এতে গুনগত মান থাকছে না। এতে প্রকৃত উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছি কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি -ক্যাব- এর সদরপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাত কুমার সাহা বলেন, ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধে এ উপজেলায় অনেক অভিযান চালানো প্রয়োজন। নতুন কিছু কারখানার তথ্য মিলেছে। সেখানে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রশাসনের সাথে আমরা আলোচনা করবো।

উপজেলার সচেতন মহল বলছে, কারখানাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না আসল গাছিরা। গাছিরা দৈনিক ১০ কেজি গুড় তৈরিতেই ক্লান্ত আর কারখানা মালিকরা দিনে ১০ থেকে ১২ মণ গুড় তৈরি করছে। বর্তমানে সুনাম হারাতে বসেছে ফরিদপুর অঞ্চলের গুড়।

এভাবে চলতে থাকলে সদরপুরসহ ফরিদপুরের গুড় আর চলবে না। সদরপুরে ভেজাল গুড়ের কারখানা বন্ধে দ্রুত অভিযানের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।