
সফিকুল ইসলাম রাজা গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি।।
গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের সেন্ট্রাল প্ল্যান্টে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় করোনা রোগীরা সেবাবঞ্চিতকায়সার রহমান রোমেল, গাইবান্ধা:গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতাল।
২০০ শয্যার এ হাসপাতালটিই মুলত: জেলার প্রধান হাসপাতাল। সাধারণ ওয়ার্ডের পাশাপাশি এখানে রয়েছে জেলার করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় পৃথক করোনা আইসোলেশন ইউনিট। গত বছর এপ্রিলে গাইবান্ধা করোনা ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হবার পর এবং করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদর হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের কাজে তোড়জোড় শুরু হয়।
সংক্রমণের হার কমে এলে কাজের গতিও কমে যায়। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপিত হলেও সেখানে লিকুইড অক্সিজেনের যোগান না থাকায় এক বছর পরও হাসপাতালটিতে নিশ্চিত হয়নি নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ।মহামারী শুরুর সময় থেকে এই হাসপাতালটি করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের মূল ট্যাংকে তরল অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় সাধারণ ওয়ার্ড এবং আইসোলেশন ইউনিটে সীমিতসংখ্যক সিলিন্ডারের অক্সিজেনের ওপর নির্ভর করেই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে আসা মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য রংপুর ও বগুড়ায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
প্রায় পৌনে চার কোটি টাকায় নির্মিত প্ল্যান্টের সুবিধা পাচ্ছেন না মুমূর্ষু রোগীরা।চিকিৎসকরা জানান, একজন রোগীর মিনিটে ১৫ লিটারের মতো অক্সিজেন দরকার পড়লে তা সিলিন্ডার থেকে সরবরাহ করা যায়। আবার সিলিন্ডার না থাকলে বিকল্প হিসেবে এ চাহিদা পূরণ করতে পারে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। এটি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে রোগীকে সরবরাহ করে। আর মিনিটে ৩০ লিটারের মতো অক্সিজেন লাগলে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করা হয়। এটির জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন পাইপলাইন দরকার হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালাতেও দরকার সেন্ট্রাল অক্সিজেন পাইপলাইন।জেলার স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ। সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু উৎপাদন, আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহে আছে বড় ঘাটতি।
এখন পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট না থাকলেও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়ে গেছে। রোগী আরও বাড়লে অক্সিজেন সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার জন্য জরুরি পরিকল্পনা নেওয়া এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টে তরল অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।গাইবান্ধা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এই প্ল্যান্ট থেকে ১৯৫টি শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ করার কথা। এক্সপেকট্রা নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই প্ল্যান্ট নির্মাণ ও স্থাপনের কাজ করে। গাইবান্ধা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. এরশাদুল হক বলেন, চলতি বছরে জুনের প্রথম দিকে প্ল্যান্টটি হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করা হয়।হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতাল চত্বরে নির্মিত সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের পাশেই রয়েছে এর নিয়ন্ত্রণকক্ষ। এখান থেকেই হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন নিয়ে যাওয়া হয়।
নিচতলা ও দোতলার পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ১৯৫টি শয্যার পাশের দেয়ালে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, শয্যা থেকে সহজেই মুমূর্ষু রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা। কিন্তু শয্যার পাশে অক্সিজেন সংযোগ থাকলেও তাতে সেন্ট্রাল প্ল্যান্টের অক্সিজেন আসে না। কারণ, এখনও মূল ট্যাংকে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়নি। ফলে সেন্ট্রাল লাইনে সিলিন্ডার লাগিয়ে সাধারণ শ্বাসকষ্টের রোগীদের সেবা দেওয়া গেলেও করোনায় মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে হাসপাতালে আসা করোনার জটিল রোগীদের রংপুর ও বগুড়ায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী পৌরসভার এক বাসিন্দা জানান, অক্সিজেন প্ল্যান্টটি চালু হলে রোগীদের জীবন বাঁচবে।