
শিমুল তালুকদার
ফরিদপুর।।
বৃহত্তর ফরিদপুরের বিখ্যাত স্থানসমূহের মধ্যে বাইশরশি জমিদার বাড়িটি অন্যতম। ফরিদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে বর্তমান আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফের কাছাকাছি সদরপুর উপজেলায় অবস্থিত এই বাড়িটি। বাড়িটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও নেই সরকারি কোন উদ্যোগ। অযত্ন অবহেলা আর অবজ্ঞা সহ সরকারি পৃষ্টপোষকতা না থাকার কারনে প্রতিনিয়ত বাড়িটি থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। এককালে প্রতাবশালী বাইশরশি জমিদাররা ফরিদপুর- বরিশালসহ ২২টি পরগনার বা জোত মহলের অধিপতি ছিলেন। জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি তখনকার দিনে বাইশরশির বাড়িটি প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে বাগানবাড়ি, পুকুর, পূজামন্ডপ ও দ্বিতলা বিশিষ্ট ছোট-বড় ১৪টি দালান কোঠা দিয়ে ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। জানা গেছে, ১৭শ শতাব্দির গোড়াপত্তনে এককালের লবণ ব্যবসায়ী সাহা পরিবার বিপুল অর্থসম্পত্তির মালিক হয়ে কয়েকটি জমিদারি পরগনা কিনে জমিদারি প্রথার গোড়াপত্তন শুরু করে। ১৮শ শতক থেকে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের আগে জমিদার পরিবারটি অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হন এবং ২২টি জমিদারি পরগনা ক্রয় করে বিশাল জমিদার হিসেবে ভারতবর্ষে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হিন্দুস্থান হওয়ার পর ১৯৪৭ থেকে ১৯৬২ সাল জমিদারি প্রথা থাকার আগ পর্যন্ত জমিদাররা কলকাতা বসে জমিদারি দেখাশুনা করত। জমিদারি প্রথা বাতিল হওয়ার পর জমিদার সুকুমার রায় বাহাদুর ছাড়া সবাই কলকাতা চলে যায়। থেকে যায় জমিদারদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, বাইশরশি শিব সুন্দর একাডেমি সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শোনা যায় ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীনের পর সুকুমার বাবু নিজের বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। এখনো ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে বাইশ রশি জমিদার বাড়ির একটি খাট সংরক্ষিত আছে। তারপর ক্রমেই জমিদারদের বাড়িটি অভিভাবক হীন হয়ে পরে। তখন আর কোন অভিভাবক না থাকায় পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। ঠিক তখন থেকেই মূলত শুরু হয় জমিদার বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি হতে থাকে। অযত্ন অবহেলার কারনে এই বাড়িটি আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে। প্রায় ৩০ একর জমির ওপর জমিদার বাড়িটির অবস্থান হলেও চারপাশের অনেক জমি ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে ৫টি শান বাঁধানো পুকুর, বিশাল বাগানবাড়ি ও ছোটবড় চৌদ্দটি কারুকার্য খচিত দালান-কোঠা জমিদারদের কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিনিয়ত চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান দরজা-জানালা, লোহার কারুকার্য খচিত প্রত্নতত্ত্ব। রাতের বেলা এ বাড়িটি হয় চোর ডাকাতদের অভয়ারন্য। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণ সরকারের নিকট আবেদন জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবী, সরকারের তত্বাবধানে নিয়ে এ বাড়িটি রক্ষনাবেক্ষন করে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হলে এলাকার পরিচিতি আরো বেড়ে যাবে। শুধু পরিকল্পনা ও সিন্ধান্তহীনতার অভাবে আজ হারিয়ে যাচ্ছে বাইশরশি জমিদার বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ একটু নজর দিলেই এই বাড়িতে হতে পারে দেশের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।