
মনজিদ আলম শিমুল,
প্রতিনিধি দিনাজপুর ।।
স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও ৫০ বছরে আদিবাসীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ১৫ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নেতৃবৃন্দের কর্মসুচী ঘোষনা।
২৩ মার্চ বুধবার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাব কনফারেন্স রুমে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলার শাখার আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি শীতল মার্ডি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় আদিবাসীদের ৩৮টি জাতিসত্তার প্রায় ২০ লাখেরও বেশী জনগোষ্ঠি বসবাস করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশের আদিবাসীদের রয়েছে বিশাল অবদান। বিপুল সংখ্যক আদিবাসী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছে এবং জীবন দিয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর নিজ দেশে এসে আদিবাসীরা দেখলো তাদের বাড়ি-ঘরের কোন চিহ্ন নেই, চাষের জমি ও ভিটা-মাটি দখল হয়ে গেছে। অনেকেই বেদখল হওয়া জমি আজও ফেরত পায় নি। বর্তমান সময়ে আদিবাসীদের জীবন সংকটাপুর্ন হয়ে পড়েছে এবং তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে চরম অবনতি ঘটছে। স্থানীয় অসৎ জনপ্রতিনিধি ও ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করে সহায়তা করে আসছে, ফলে আদিবাসীরা আরও অসহায় হয়ে পড়ছে। এমনকি দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যেসব আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করেছেন তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পর্যন্ত পাননি। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোন সরকারই স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ফলে আদিবাসীদের প্রথাগত সামাজিক ব্যবস্থা আজ প্রায় বিলুপ্ত। আদিবাসীদের সংরক্ষিত পবিত্র-প্রথাগত ভূমি-বনভূমি-জলাভূমি-জলাশয়-বৃক্ষ-দেবস্থান-মন্দির-উৎসব ও মেলা এলাকা-প্রার্থনা এলাকা স্ব স্ব আদিবাসীদের সামাজিক রীতি ও আইনের মাধ্যমে পরিচালনার অধিকার থাকলেও সরকার তা সুরক্ষা করতে পারেনি।
সর্বোপরি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীদের প্রতি স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সরকারই জাতিবিদ্বেষী আচরণ জারি রেখেছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বৈষম্য আদিবাসীদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করেছে। সংবিধানে কোনমতে আদিবাসীরা নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আদিবাসীদের স্ব স্ব ভাষা, ধর্মসমূহ অস্বীকৃতই রয়ে গেছে।
১৫ দফা দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে,সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভ‚মি কমিশন গঠন, ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করাসহ আরো ১৩টি যুক্তি সংগত দাবীর পুর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন চান তারা। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে ১৮ মে ২০২২ ত্তরবঙ্গের প্রত্যেক জেলায় আদিবাসী সমাবেশ, ডিসি অফিস ঘেরাও ও স্মারকলিপি প্রদান।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্তিত ছিলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবিন্দ্র নাথ সরেন, ফুলবাড়ি আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন নেতা চুন্নু টুডু, ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রবিউল আউয়াল খোকা, পঞ্চগড় জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি বুধবাই হেমরম, বাসদ জেলা সমন্বয়কারী কিবরিয়া হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ সিং, ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল টুডু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ তথ্য ও গবেষনা সম্পদক মানিক সরেন, বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির কোষাধ্যক্ষ জুলি মূর্মূ ও আদিবাসী নারী পরিষদ জেলা কমিটির সা: সম্পাদক রানী হাঁসদা প্রমুখ।