
মো. ইমরান হোসেন হান্নান ,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা সহ সর্বত্র আকাশে মেঘ জমলেই বৃষ্টি , সঙ্গে বজ্রপাত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । সেইসাথে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও । মানুষের সাথে গবাদিপশুর মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক গুন বেশী । গত এক দশকে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমলেও চলতি বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিল ,হাওড় ও খোলা জায়গায় চলার পথে মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে বজ্রপাতের আতঙ্ক । সাম্প্রতিক সময়ে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সাত মাসে সারা দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে প্রায় আড়াইশ মানুষ । এছাড়াও বজ্রপাতে প্রচুর গবাদিপশু মারা গেছে ।
ইতিপূর্বে বঙ্গোপসাগর থেকে কোন ঘুর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকায় উঠে আসা মানেই ছিল মানুষের মৃত্যুর মিছিল । বর্তমানে ঘুর্ণিঝড় প্রস্তিুতির পাশাপাশি উপকূলে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন , আগাম সতর্কবার্তা প্রেরণ , জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও জরুরী ভিত্তিতে জান-মাল রক্ষায় আনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে । কিন্তু হঠাৎ এবছর বজ্রপাতের মতো মহা দূর্যোগ জনমনে দিন দিন শঙ্কা ও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে । হঠাৎ বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ নির্ণয়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও আগাম সতর্ক সংকেত জানার ব্যাপারে সরকারী ভাবে বুয়েট আবহাওয়া বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথ ভাবে সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ব্যাপক প্রাণহাণি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব ।
সেইভ দ্যা সোসাইটি এন্ড থান্ডারষ্টর্ম এ্যাওয়ারনেস ফোরামের নির্বাহী প্রধান মো. আব্দুল আলিম জানান , এ বছর মার্চ থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৬ মাসে বজ্রপাতে ২৩১ জনের প্রাণহানি ও ৬৪ জন আহত হয়েছে । শুধু কৃষি কাজ করতে গিয়েই ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে । নৌকায় থাকা অবস্থায় ও মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে । উল্লেখ্য যে, বজ্রপাতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বর যাত্রীর ১৭ জনের মূত্যু হয়েছে ।
জনশ্রæতি আছে , বৃটিশ সরকারের শাসনামলে মৌজা সিমানা নির্ধারণে “সিমানা পিলারে বজ্র প্রতিরোধ যন্ত্র ন্থাপন করা হয়েছিল । মৌজা সিমানা পিলারের মধ্যে অতীব মুল্যবান ধাতব পদার্থ রয়েছে । যাহা বর্তমানে সিমানা পিলার উধাও , কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। যার কারণে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে সম্প্রতি বজ্রপাত বেশী হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশষজ্ঞরা । সরকারী এক সুত্র জানায় , বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশবাশীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮ টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসিয়েছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় । যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮ টি ডিটেকটিভ সেন্সর ক্রয় করে ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ ,সিলেট , পঞ্চগড়, নওগাঁ , খুলনা , পটুয়াখালী ও চট্রগ্রামে এই সেন্সর বসানো হয়েছে । আমেরিকা ,ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধপ্রদেশ এই যন্ত্র ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা ।