
চঞ্চল,
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টির প্রভাবে হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাটের প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো নদীতীরবর্তী হাজারো পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ৩টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০ মিটার, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যার ফলে জেলার ৪টি উপজেলার ১৫টি গ্রাম আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়। এই বন্যায় হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে এবং তাদের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
পানির তোড়ে মঙ্গলবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকার একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি কিছুটা কমলেও, ব্যারেজের ভাটিতে থাকা হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এবং সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৫টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি। রাস্তাঘাট, ফসলি জমি এবং পুকুরের মাছ পানিতে ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও স্থানীয়দের অবস্থা
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক এলাকা এখনো জলমগ্ন। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বসতঘর, ফসলি জমি ও পুকুর। বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নৌকা ও বাঁশের ভেলা ব্যবহৃত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা, কারণ আমন ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে এবং পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
তিস্তা তীরবর্তী মহিষখোচা এলাকার মনির হোসেন ও আব্দুর রশিদ জানান, তাদের বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষেত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, “হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চারপাশ ডুবে গেছে। কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। রাস্তাঘাটও পানির নিচে।” আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের ইয়াকুব আলী বলেন, “রাতে পানি বাড়তে থাকায় রান্না করা সম্ভব হয়নি। সকাল থেকে না খেয়েই আছি। এখনো কেউ খোঁজ নেয়নি।”
প্রশাসনের তৎপরতা
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ভারতের উজানে কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে পানির গতি তীব্র হয় এবং রাতেই তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। তবে বুধবার সকাল থেকে পানি কমছে।
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার জানান, “তিস্তার পানি রাতের দিকে বিপৎসীমার ওপরে উঠেছিল। এতে কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে বুধবার সকাল থেকে পানি দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে।”
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “পানিবন্দি মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে এবং অচিরেই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তা বিতরণ শুরু হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে।”