
পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার বিলকুলা শ্যামপুরে জমিজমা বিরোধের জেরকে কেন্দ্র করে মেজো ভাইয়ের হাতে বড় ভাই আবুল কালামকে (৫৬) লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম হওয়ার ঘটনার প্রায় ২ সপ্তাহ পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১ টার সময় তার মৃত্যু বরণ করেন
এঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন কাউকে
গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। তবে স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। রক্তাক্ত হত্যাকান্ডের পরও খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় নিহত পরিবারের ক্ষোভ।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ নভেম্বর বিলকুলা শ্যামপুর গ্রামে। এঘটনায় খুনিদের ফাঁসির দাবিতে গত ২১ নভেম্বর স্থানীয় মাহমুদপুর বাজারে একটি মানববন্ধন করেছেন নিহতের পরিবার। এঘটনায় নিহতের মেয়ে লাবনী খাতুন বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরজমিন ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের বিলকুলা শ্যামপুর গ্রামের আকাত আলীর ছেলে আবুল কালাম ঘটনার দিন ভোরে
প্রতি দিনের মতো চাকরির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় ফজলার মোড় সংলগ্ন তৈয়ব আলীর বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার উপর আবুল কালাম পৌছা মাত্রই
তার চলার পথ গতিরোধ করে আব্দুল সালাম, শাওন হোসেন, আনোয়ার, খায়রুল সহ আরও অজ্ঞাত নামা ৪/৬ জন হাতে থাকা ধারালো হাসুয়া, চাকু, চাপাতি,
চাইনিজ কুড়াল, জিআই পাইপ, লোহাড় রোড, বাঁশের লাঠিসোটা নিয়ে সজ্জিত হয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে বেধরক মারপিট, কুপিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম এবং রক্তাক্ত করে দেয়।
পরে আবুল কালামের আত্ন চিৎকারে গ্রামবাসি ছুটে এসে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
সেখানেও তার অবস্থা বেগতিক দেখা দিলে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ নভেম্বর রাত ১ টার সময় আবুল কালাম মৃত্যু বরণ করেন। আবুল কালাম এর মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহতের ছেলে আবির হাসান নয়ন জানান, আমার দাদাকে মাঝে মধ্যেই জমিজমা নিয়ে মেজো চাচা সালাম মারধর করতো। আমার বাবা তাকে এবিষয়ে বাধা দিলে সে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতো আমার বাবার উপর।
ঘটনার দিন আমার বাবা ভোরে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজে যাচ্ছিলেন।
আমাদের বাড়ির পাশে ফজলান মোড়ে পৌঁছালে তখন পিছন আমার মেজো চাচা সালাম সহ ৪/৬ জন অর্তকিত ভাবে অটোবাইক দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিলে আমার বাবার রাস্তার
পাশে ধান খেতে ছিটকে পড়ে যায় এবং তারা সবাই মিলে লাঠিসোটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারপিট করলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে।
পড়ে আমরা লোক মাধ্যম সংবাদ পেয়ে বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। এবং গত ১০ নভেম্বর রাত ১ টার সময় আমার বাবা মৃত্যু বরণ করেন।
নিহতের স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, আমার শশুরকে প্রায়ই সালাম জমিজমা নিয়ে গালিগালাজ ও মারধর করতো। আমার স্বামী তাকে বাঁধা দিলে সে আমার স্বামীকে প্রাণ নাশের হুমকি দিতো।
ঘটনার দিন আমার স্বামী বাড়ি থেকে কাজের উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন। বাড়ির পাশেই ফজলার মোড় নামক স্থানে তৈয়ব আলীর বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার উপর সালাম, শাওন, আনোয়ার, খায়রুল সহ অনেকেই আমার স্বামীকে লাঠি,ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারপিট ও কুপিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড আঘাত করে।
এবং মুমুর্ষ অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে পাবনা সদর হা সপাতালে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
নিহতের মেয়ে লাবনী খাতুন বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমার বাবাকে যারা মেরে ফেলেছে তারা এখনও বহাল তবিয়তে পাবনা শহরে ও গ্রামে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। আসামীরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে।
এখন আমরা সবাই নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। বাড়ির বাহিরে বের হতে পারাচ্ছি না। আমার ভাই তাদের ভয়ে নিজ কর্মস্থলে যেতে পারছে না। আমার বাবার খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।

























