
তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল, বিশেষ প্রতিনিধি
সেবার ব্রতে চাকরি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে লালমনিরহাটে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল –টিআরসি- পুরুষ ও নারী পদে ফেব্রুয়ারি-২০২৫ এর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী ১৭ জন চাকরি প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন আর ৩ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে চাকরি পাওয়ার পর উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
বৃহস্পতিবার -২২মে-রাতে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ লাইন্স প্রাঙ্গণে এই নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয় ও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।
মেধার ভিত্তিতে টিআরসি পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন- মো. বাপ্পি ইসলাম, মো. আরিফুজ্জামান নাইম, মো. ইউসুফ মন্ডল, মো. জাহিদ হাসান,মোছা. মনিজা খাতুন, মোছা. ফারজানা আক্তার কবিতা, রমা রায়, মো. রাকিবুল হাসান, মো. ইমরান নাজির, মো. আরমান হোসেন, মো. ইমন ইসলাম, মাসুম বিল্লাহ, মো. শাহাজালাল হোসেন, মো. ইউসুব আলী, মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ, মো. রাসেল ইসলাম ও মো. শাহাদত হোসেন।
অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন- মো. পারভেজ মোশারফ, মো. আব্দুল্লাহ ইসলাম ও মো. নাজমুল হক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আইজি মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের লক্ষ্য ছিল স্বচ্ছভাবে ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। আমরা আইজিপি স্যারের বক্তব্যকে হৃদয়ে ধারণ করে তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি। সেই আলোকে আমরা যোগ্য, সৎ ও মেধাবী প্রার্থীদের চাকরি দেয়ার বিষয়ে মনস্থির করেছিলাম। এক্ষেত্রে আমরা কোন প্রকার লেনদেন বা সুপারিশকে প্রশ্রয় দেইনি।“
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য লিখিত পরীক্ষার খাতা পুলিশ হেড কোয়ার্টারসে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে খাতা দেখে পাঠানোর পর আজকে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হল । এক্ষেত্রে প্রত্যেকজনের পৃথকভাবে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এখানে অনেক গরীব পরিবারের প্রার্থীরা ছিলেন যাদের টাকা দিয়ে চাকরি নেয়ার মতো অবস্থা নেই। গতবারও আমরা একইভাবে ৩৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। আজ এখানে যে সতেরো জন চাকরি পেয়েছে তারা মাত্র ১শ ২০ টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে। আমি উত্তীর্ণদের স্বাগত জানাই ও তাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।“
ফলাফল প্রকাশের সময় অনেক প্রার্থীদের আনন্দ অশ্রুতে চোখ ভিজে যায়।
অনুভূতি জানতে চাইলে উত্তীর্ণ প্রার্থী মো. মো. আরমান হোসেন বলেন, “আমি দীর্ঘ দেড় মাস যাবত পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে আজ চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছেছি। আমি অনেক আনন্দিত। আমি আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জানাই তিনি আমার দয়া কবুল করেছেন। আমি আমার মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানাই সবসময় আমার পাশে থাকার জন্য। পাশাপাশি এসপি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে মনোনীত করার জন্য।“
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উত্তীর্ণ প্রার্থী বলেন, “আমার জানামতে পুলিশের চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। শুনে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমাদের পরিবারের লাখ টাকা খরচের সামর্থ্য নেই। কিন্তু এখানে এসে পরীক্ষা দিয়ে সেই ধারণা পালটে যায়। আমাদের প্রথম দিনই কারও সাথে লেনদেন করতে নিষেধ করা হয়েছিল। আমি একটু আশ্চর্য হয়েছিলাম। কিন্তু আজকে দেখলাম এসপি স্যার যেমন বলেছেন তেমন ভাবেই মেধার ভিত্তিতে ও মাত্র ১শ ২০ টাকায় চাকরি পেয়েছি। আমি এসপি স্যার ও আইজি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। “
জানা যায়, তিনটি ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ১৬ থেকে ১৮ এপ্রিল শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা ও কাগজপত্র যাচাই করা হয়। ১৩ মে দ্বিতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । তৃতীয় ও সর্বশেষ ধাপে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২২ মে সকাল ৮:৩০ মিনিটে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে অংশ নেন রংপুর রেঞ্জের মনোনীত প্রতিনিধি অতি. পুলিশ সুপার- সৈয়দপুর সার্কেল- নীলফামারী একেএম ওহিদুন্নবী, সহ : পুলিশ সুপার রংপুর ডি-সার্কেল নাহিদ হাসান, লালমনিরহাট অতি. পুলিশ সুপার -প্রশাসন ও অর্থ- মো. শাহাদত হোসেন সুমা, অতি পুলিশ সুপার –এ সার্কেল- একেএম ফজলুল হক,, সহ : পুলিশ সুপার -বি-সার্কেল- জয়ন্ত কুমার সেনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও নিয়োগ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যবৃন্দ।
এদিকে অসচ্ছল ও অনাথ প্রার্থীদের শুধুমাত্র সততা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশ। জেলাবাসী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।