Dhaka , Thursday, 21 November 2024
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
নারায়ণগঞ্জে অজ্ঞাত ব্যক্তির জবাইকৃত লাশ উদ্ধার।। লক্ষ্মীপুরে আহতদের সুচিকিৎসা দাবিতে সড়ক অবরোধ।। রূপগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টায় হামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন।। নিখোঁজের ১০ দিন পর খালে মিলল বেদের মরদেহ।। রামগঞ্জে বিনা লাভের সবজি বাজারে ব্যাপক সাড়া।। পাবনায় ইজিবাইক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ আহত ২।। কক্সবাজার’র রামুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে প্রতারণা- দুইযুবক আটক।। মোবাইলে ভিডিও চালু রেখে পাবনার এক কিশোরীর ঢাকায় আত্মহত্যা।। কাজের গুনগত মান ঠিক না থাকলে বিল দেয়া হবে না- চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত।। বেতন বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে সিদ্ধিরগঞ্জে ওরিয়ন ফার্মায় শ্রমিক অসন্তোষ।। সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলিতে নিহত সুমাইয়ার লাশ  চার মাস পর কবর থেকে উত্তোলন।। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ।। দুর্গাপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ৩ জনের কারাদণ্ড।। ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায় -ধর্ম উপদেষ্টা।। বিদেশ যাওয়া হলোনা কলেজছাত্র জাকিরের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত্যু।। খাবার ও কম্বল বিতরণ করলো ক্লীন সিলেট।। ঠাকুরগাঁওয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ান নারী ফুটবলারদের ফুলেল শুভেচ্ছা।। কথিত ইয়াবাসহ ওমরা হজ যাত্রী জেদ্দা এয়ারপোর্টে আটক পরে মুক্তি।। সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল শাখার ট্রাক টার্মিনালের সংস্কারকাজ চলছে।। শেরপুরে মানুষিক ভারসাম্যহীন নাতনিকে নিয়ে কষ্ট করে দিন পারি দিচ্ছেন নানি।। পাবনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক নিহত।। মহিষের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ লক্ষ্মীপুরের দুর্গম চরের কৃষকরা।। নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু।। তিতাসে কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার।। গাজীপুরে ২৫০ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন।। চিকিৎসক কর্মবিরতি নীলফামারীতে।। পটিয়ায় অর্ধকোটি টাকার গরু ডাকাতি কেয়ারটেকারসহ গ্রেপ্তার ৩ কেয়ারটেকারের ৩ দিনের রিমান্ড।। রূপগঞ্জে দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত- আরোহী আহত।। আশুলিয়ায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট কেয়ারটেকারসহ গ্রেপ্তার ৪।। পাবনায় অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহরণ কারী সিরাজগঞ্জ কড্ডা মোড় থেকে গ্রেপ্তার।।

বান্দরবান পাহাড় ও মেঘের সাথে দুইদিন – যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল বন্ধুমহল

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 02:41:15 am, Tuesday, 22 February 2022
  • 635 বার পড়া হয়েছে

বান্দরবান পাহাড় ও মেঘের সাথে দুইদিন - যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল বন্ধুমহল

 

দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক।।

প্রকৃতির নীলাভূমি বান্দরবান। কোনো একসময় এ অঞ্চলে বানরের বসবাস ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পানি পার হয়ে পাহাড় থেকে লবণ খেতে আসত বানরের দল। ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর পাহাড়ে ফেরত যাওয়ার সময় তারা একে অপরের হাত ধরে পানি পার হতো। তা দেখতে অনেকটা বাঁধের মতোই দেখাত। সেখান থেকেই লোকমুখে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় বান্দরবান। বান্দরবানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাতে কমপক্ষে পাঁচ-ছ’দিন সময় রাখতে হবে। মাত্র দুয়েকদিনের সফরে বান্দরবান ঘুরে শেষ করা সম্ভব নয়। মেঘলা, নীলাচল, নাফাখুম, দেবতাখুম, কেওক্রাডং, ডিম পাহাড়, স্বর্ণমন্দির, থানচি, চিম্বুক, বগালেক, শৈলপ্রপাত, তিন্দু, মারায়ন তং, নীলগিরি, টাজিংডং, সাকা হাফ লং সহ আরো অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের অবস্থান বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

আমরা (২৪) চব্বিশ বন্ধু গিয়েছিলাম ঢাকা থেকে। বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল কাউন্সিল বাস টার্মিনাল থেকে রাত ১১.৩০ টায় সেন্টমার্টিন হুনডাই এসি বাস রিজার্ভ  করে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ভোর ৬.০০ টায় আমরা বান্দরবান পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখান থেকে  আমরা সবাই হোটেল গার্ডেনে উঠি। পরে তিনটি চান্দের গাড়ি কিংবা মাহিন্দ্রা নিয়ে যাওয়া হয় নীলগিরি। আমরা যেহেতু দুইদিনের জন্য গিয়েছিলাম, তাই সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখা ছিল খুবই জরুরি । তিনটি চান্দের গাড়ি সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম।

 

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল নীলগিরি। দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। একই রাস্তা দিয়েই থানচি এবং রুমা যেতে হয়। রুমার রাস্তা ধরেই বগালেকের ঠিকানা খুঁজতে হয়। নীলগিরির পথে দু’বার চেকপোস্ট পড়বে। একবার মিলনছড়িতে পুলিশ চেকপোস্ট এবং আরেকবার সায়রুর আগে সেনাবাহিনী চেকপোস্টে নিজেদের নাম ঠিকানা সব জানাতে হবে। বান্দরবান ভ্রমণে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে আসবেন। অবৈধ কোনো বস্তু, বিশেষ করে মাদক নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে না।

 

মিলনছড়ি চেকপোস্টে আকাশ ও মেঘের মিতালী আপনাকে আবেগতাড়িত হতে বাধ্য করবে। শুভ্র মেঘে পাহাড় ঢেকে যাওয়া দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ক্যামেরায় এই দৃশ্যগুলো বন্দী করতে ভুলবেন না, যদিও ক্যামেরার চেয়েও খালি চোখে হাজারগুণ সুন্দর। দূর থেকে দেখে মনে হবে, কোনো চিত্রশিল্পী তার রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন পাহাড়ের বুকে মেঘের খেলা। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি অপরূপভাবে ধরা পড়ে সেখানে।

 

মিলনছড়ি থেকে পুলিশ চেকের পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। সায়রুতে সেনাবাহিনীর চেকের পর মাঝরাস্তায় স্বেচ্ছায় আরেকবার দাঁড়িয়েছিলাম নিজেদের ফটোশ্যুটের জন্য। রাস্তের দু-ধারেই পাহাড়, পাহাড়ের বুকে অসংখ্য কলাগাছের চাষ হয়। সায়রু হিল রিসোর্টের পর বিশাল একটা রাস্তা, নেই কোনো রিসোর্ট বা জনবসতি। খাঁ খাঁ করে পুরো এলাকা। পথিমধ্যে পরিশ্রমী পাহাড়ি মানুষদের দেখা যায়, যারা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে যায়, যখন গাড়ি তাদের অতিক্রম করে যায়। অনেকেই পাহাড়ে চাষবাস করে, তাই দা-কোদাল হাতে তাদের দেখা যায়। এতে ভয় পাবার কিছু নেই।

 

এক লেনের রাস্তায় তীব্র গতিতে ছুটে যায় চান্দের গাড়ি। আপনার গাড়িকে অতিক্রম করার সময় এতই দ্রুত এগিয়ে যাবে, মনে হবে এই বুঝি আপনাকে ফেলে দিল ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে নিচে। পাহাড়ি রাস্তা থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট নিচের চোখ ধাঁধানো মোলায়েম সবুজ দৃশ্য আপনার ভ্রমণে ভিন্ন আনন্দ যোগ করবে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি ৪৬ কিলোমিটার দূরের ভ্রমণ। দু ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয় সেখানে পৌঁছাতে। ১০০ টাকা টিকেট কেটে নীলগিরি মূল স্পটে পৌঁছানোর পর মনে হবে, পাহাড় ও মেঘের মাঝখানে দু হাজার ফুট উপরে আপনার ভ্রমণে আক্ষেপ তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 

নীলগিরিতে বেলা ১১টার পর মেঘ চোখের সামনে কুয়াশার মতো উড়তে শুরু করেছিল। শরীর অতিক্রম করার সময় মনে হবে, হালকা শিরশিরে অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করবে, হাতের মুঠোয় করে কিংবা পকেটে ভরে এক টুকরো মেঘ বন্দী করে নিয়ে আসতে। পাহাড়ের বুকে মেঘের ভেলায় সাঁতার কাটার আগ্রহ জাগাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, এই মেঘগুলো শুধু চোখে দেখা এবং অনুভূতিতে করেই রাখা যায়। একদম স্বচ্ছ একটা পরিবেশের সাক্ষী হওয়ার জন্য বান্দরবান যাওয়া উচিত। নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে সীতা পাহাড়ের উপর তৈরী আসনগুলোয় বসে কয়েকটা ছবি অবশ্যই তুলবেন- সত্যিই আপনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার ফুট উপরে আছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

নীলগিরি থেকে চিম্বুক পাহাড়ের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সবাই আগে চিম্বুক পাহাড়ে ভ্রমণ করলেও আমরা প্রথমে নীলগিরি গিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের দুই দিনের সফরে মূল লক্ষ্যই ছিলো নীলগিরি দর্শন। যা-ই হোক, চিম্বুক পাহাড়ে ওঠার সময় পুরো এলাকা মেঘের আবরণে ঢেকে গিয়েছিলো। ভিডিও কিংবা ছবিতে অনেকেই কুয়াশা ভেবে ভুল করতে পারেন। মেঘ একদম দৃষ্টি সীমানার নিকটে অবস্থান করায় টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। এই বৃষ্টির মাঝে কিছুটা আতংক কাজ করলেও, দুয়েক মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর আপনি তা উপভোগ করতে শুরু করবেন। আমাদের সাথেও ঠিক তাই ঘটেছিল।

চিম্বুক পাহাড় থেকে আমাদের যাত্রা আবার শহরের দিকে। ঘড়িতে তখন প্রায় দুপুর দুটো বাজে। শহরে পৌঁছাতে আনুমানিক সাড়ে তিনটার কাছাকাছি বেজে থাকবে। পথে শৈলপ্রপাত পড়লেও তাতে এখন আর কিছুই নেই দেখার মতো। শীতকালে এই প্রপাত পানিবিহীন থাকে।

শহরে ফেরত যাওয়ার পথে ক্লান্তি নেমে এসেছিলো সবার মাঝে। একটু একটু করে ঝিমাচ্ছিলাম। পুরো রাস্তা জুড়েই মেঘ আমাদের সাথী হয়ে ছিল। মেঘের ভেতর দিয়েই আমাদের গাড়ি এগোচ্ছিলো। শহরে পৌঁছানোর পর আমাদের যাত্রা স্বর্ণমন্দিরের দিকে। পথেই সাঙ্গু নদীর অবস্থান। শীতকাল হওয়ায় সম্ভবত পানি একদম কম ছিল। স্বর্ণমন্দিরে জুতা পায়ে এবং হাফ প্যান্ট পরে ঢোকা নিষেধ। নাম স্বর্ণমন্দির হলেও সেখানে কোনো মূর্তি কিংবা স্থাপনায় স্বর্ণের ছিটেফোঁটাও নেই। অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে সেখানে। প্রতিটির উপরে সৌরজগতের গ্রহের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া ছিল।

মূল মূর্তির কাছে পূজারী ব্যতীত কারোই প্রবেশাধিকার নেই। মূর্তির স্থিরচিত্র নেওয়ার অনুমতি থাকলেও ভিডিও করার অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। কোনো তথ্য জানার থাকলেও সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভিক্ষুরা কিছুই জানায়নি। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের জবাবে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছিল। তবে মন্দিরের উপর থেকে শহরের দৃশ্যটা বেশ দারুণ চোখে আসছিল। বান্দরবানে শহরের বালাঘাটায় ছোলামুড়ির আয়োজন ছিল রাস্তার উপর। আমরা সবাই এই ছোলামুড়ির ভক্ত, তাই না খেয়ে থাকতে পারিনি। বান্দরবান শহর অনেকটাই মফস্বল ধাঁচের। আমি যেন আমার শৈশবে ফেরত চলে গিয়েছিলাম।

পরের দিন সকালে হোটেল থেকে চান্দের গাড়ি করে রওনা দিলাম নীলাচলের উদ্দেশ্যে। নীলাচল শহর থেকে মাত্র চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর উচ্চতায় ১৬০০-১৭০০ ফুট উপরে অবস্থিত।  নামার পূর্বমূহূর্তে নীলাচল পুরো নীল আকাশে ছিল সাদা মেঘের আনাগোনা। মেঘের অবস্থান এতটাই ঘন ছিল যে নীলাচলের দূরের প্রকৃতি খালি চোখে ধরা পড়ছিল না।

নীলাচলের দূরের আকাশ যতটুকু নজরে আসছিলো, মনে হচ্ছিল, মেঘ কোনো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো নতুন করে জেগে উঠছে। সবমিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ঘন্টাখানিক আগেই আমাদের সফর শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাহিন্দ্রা গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল করিম ভাইয়ের আতিথেয়তা ছিলো অসাধারণ। দারুণ একজন মানুষ তিনি। নীলাচল থেকে ফিরে বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে আমাদের সবাইকে চা খাইয়েছিলেন তিনি। তার আমরা সকল বন্ধু হোটেলে যাই, রিজার্ভ করা বাস আধঘণ্টা আগেই এসে পরেছে। ক্লান্ত শরীরে মাতুয়াইলের বন্ধুমহল হোটেল থেকে মালামাল গুছিয়ে বাসে বসে পরলো। তখন আমাদের বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

 

যাই হোক, বান্দরবান ভ্রমণ আয়োজনকারী বন্ধুমহলের জুয়েল মোল্লা, পাপ্পু, মাসুম মোল্লা , রুবেল, মামুন, ওয়াসীম, পালসার সুমন, নুরইসলাম, জুয়েল, জনি, সাইদুর, মনির সহ সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

দিনশেষে অনুভূতি ছিলো- দীর্ঘদিন পর স্বচ্ছ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিয়ে অনেকদিনের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো। প্রতি বছর তাই অন্তত কয়েকবার এমন ভ্রমণ জরুরি। ভ্রমণবিহীন আপনি আপনার ভেতরের সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে পারবেন না। আপনার দৃষ্টি ও মেধাশক্তিকে সর্বোচ্চ প্রখর করতে পারবেন না। আপনি যত বেশি ঘুরে বেড়াবেন, ততো বেশি আপনার আত্মবিশ্বাস দৃঢ়তর হবে।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

নারায়ণগঞ্জে অজ্ঞাত ব্যক্তির জবাইকৃত লাশ উদ্ধার।।

বান্দরবান পাহাড় ও মেঘের সাথে দুইদিন – যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল বন্ধুমহল

আপডেট সময় : 02:41:15 am, Tuesday, 22 February 2022

 

দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক।।

প্রকৃতির নীলাভূমি বান্দরবান। কোনো একসময় এ অঞ্চলে বানরের বসবাস ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পানি পার হয়ে পাহাড় থেকে লবণ খেতে আসত বানরের দল। ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর পাহাড়ে ফেরত যাওয়ার সময় তারা একে অপরের হাত ধরে পানি পার হতো। তা দেখতে অনেকটা বাঁধের মতোই দেখাত। সেখান থেকেই লোকমুখে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় বান্দরবান। বান্দরবানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাতে কমপক্ষে পাঁচ-ছ’দিন সময় রাখতে হবে। মাত্র দুয়েকদিনের সফরে বান্দরবান ঘুরে শেষ করা সম্ভব নয়। মেঘলা, নীলাচল, নাফাখুম, দেবতাখুম, কেওক্রাডং, ডিম পাহাড়, স্বর্ণমন্দির, থানচি, চিম্বুক, বগালেক, শৈলপ্রপাত, তিন্দু, মারায়ন তং, নীলগিরি, টাজিংডং, সাকা হাফ লং সহ আরো অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের অবস্থান বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

আমরা (২৪) চব্বিশ বন্ধু গিয়েছিলাম ঢাকা থেকে। বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল কাউন্সিল বাস টার্মিনাল থেকে রাত ১১.৩০ টায় সেন্টমার্টিন হুনডাই এসি বাস রিজার্ভ  করে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ভোর ৬.০০ টায় আমরা বান্দরবান পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখান থেকে  আমরা সবাই হোটেল গার্ডেনে উঠি। পরে তিনটি চান্দের গাড়ি কিংবা মাহিন্দ্রা নিয়ে যাওয়া হয় নীলগিরি। আমরা যেহেতু দুইদিনের জন্য গিয়েছিলাম, তাই সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখা ছিল খুবই জরুরি । তিনটি চান্দের গাড়ি সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম।

 

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল নীলগিরি। দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। একই রাস্তা দিয়েই থানচি এবং রুমা যেতে হয়। রুমার রাস্তা ধরেই বগালেকের ঠিকানা খুঁজতে হয়। নীলগিরির পথে দু’বার চেকপোস্ট পড়বে। একবার মিলনছড়িতে পুলিশ চেকপোস্ট এবং আরেকবার সায়রুর আগে সেনাবাহিনী চেকপোস্টে নিজেদের নাম ঠিকানা সব জানাতে হবে। বান্দরবান ভ্রমণে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে আসবেন। অবৈধ কোনো বস্তু, বিশেষ করে মাদক নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে না।

 

মিলনছড়ি চেকপোস্টে আকাশ ও মেঘের মিতালী আপনাকে আবেগতাড়িত হতে বাধ্য করবে। শুভ্র মেঘে পাহাড় ঢেকে যাওয়া দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ক্যামেরায় এই দৃশ্যগুলো বন্দী করতে ভুলবেন না, যদিও ক্যামেরার চেয়েও খালি চোখে হাজারগুণ সুন্দর। দূর থেকে দেখে মনে হবে, কোনো চিত্রশিল্পী তার রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন পাহাড়ের বুকে মেঘের খেলা। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি অপরূপভাবে ধরা পড়ে সেখানে।

 

মিলনছড়ি থেকে পুলিশ চেকের পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। সায়রুতে সেনাবাহিনীর চেকের পর মাঝরাস্তায় স্বেচ্ছায় আরেকবার দাঁড়িয়েছিলাম নিজেদের ফটোশ্যুটের জন্য। রাস্তের দু-ধারেই পাহাড়, পাহাড়ের বুকে অসংখ্য কলাগাছের চাষ হয়। সায়রু হিল রিসোর্টের পর বিশাল একটা রাস্তা, নেই কোনো রিসোর্ট বা জনবসতি। খাঁ খাঁ করে পুরো এলাকা। পথিমধ্যে পরিশ্রমী পাহাড়ি মানুষদের দেখা যায়, যারা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে যায়, যখন গাড়ি তাদের অতিক্রম করে যায়। অনেকেই পাহাড়ে চাষবাস করে, তাই দা-কোদাল হাতে তাদের দেখা যায়। এতে ভয় পাবার কিছু নেই।

 

এক লেনের রাস্তায় তীব্র গতিতে ছুটে যায় চান্দের গাড়ি। আপনার গাড়িকে অতিক্রম করার সময় এতই দ্রুত এগিয়ে যাবে, মনে হবে এই বুঝি আপনাকে ফেলে দিল ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে নিচে। পাহাড়ি রাস্তা থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট নিচের চোখ ধাঁধানো মোলায়েম সবুজ দৃশ্য আপনার ভ্রমণে ভিন্ন আনন্দ যোগ করবে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি ৪৬ কিলোমিটার দূরের ভ্রমণ। দু ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয় সেখানে পৌঁছাতে। ১০০ টাকা টিকেট কেটে নীলগিরি মূল স্পটে পৌঁছানোর পর মনে হবে, পাহাড় ও মেঘের মাঝখানে দু হাজার ফুট উপরে আপনার ভ্রমণে আক্ষেপ তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 

নীলগিরিতে বেলা ১১টার পর মেঘ চোখের সামনে কুয়াশার মতো উড়তে শুরু করেছিল। শরীর অতিক্রম করার সময় মনে হবে, হালকা শিরশিরে অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করবে, হাতের মুঠোয় করে কিংবা পকেটে ভরে এক টুকরো মেঘ বন্দী করে নিয়ে আসতে। পাহাড়ের বুকে মেঘের ভেলায় সাঁতার কাটার আগ্রহ জাগাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, এই মেঘগুলো শুধু চোখে দেখা এবং অনুভূতিতে করেই রাখা যায়। একদম স্বচ্ছ একটা পরিবেশের সাক্ষী হওয়ার জন্য বান্দরবান যাওয়া উচিত। নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে সীতা পাহাড়ের উপর তৈরী আসনগুলোয় বসে কয়েকটা ছবি অবশ্যই তুলবেন- সত্যিই আপনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার ফুট উপরে আছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

নীলগিরি থেকে চিম্বুক পাহাড়ের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সবাই আগে চিম্বুক পাহাড়ে ভ্রমণ করলেও আমরা প্রথমে নীলগিরি গিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের দুই দিনের সফরে মূল লক্ষ্যই ছিলো নীলগিরি দর্শন। যা-ই হোক, চিম্বুক পাহাড়ে ওঠার সময় পুরো এলাকা মেঘের আবরণে ঢেকে গিয়েছিলো। ভিডিও কিংবা ছবিতে অনেকেই কুয়াশা ভেবে ভুল করতে পারেন। মেঘ একদম দৃষ্টি সীমানার নিকটে অবস্থান করায় টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। এই বৃষ্টির মাঝে কিছুটা আতংক কাজ করলেও, দুয়েক মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর আপনি তা উপভোগ করতে শুরু করবেন। আমাদের সাথেও ঠিক তাই ঘটেছিল।

চিম্বুক পাহাড় থেকে আমাদের যাত্রা আবার শহরের দিকে। ঘড়িতে তখন প্রায় দুপুর দুটো বাজে। শহরে পৌঁছাতে আনুমানিক সাড়ে তিনটার কাছাকাছি বেজে থাকবে। পথে শৈলপ্রপাত পড়লেও তাতে এখন আর কিছুই নেই দেখার মতো। শীতকালে এই প্রপাত পানিবিহীন থাকে।

শহরে ফেরত যাওয়ার পথে ক্লান্তি নেমে এসেছিলো সবার মাঝে। একটু একটু করে ঝিমাচ্ছিলাম। পুরো রাস্তা জুড়েই মেঘ আমাদের সাথী হয়ে ছিল। মেঘের ভেতর দিয়েই আমাদের গাড়ি এগোচ্ছিলো। শহরে পৌঁছানোর পর আমাদের যাত্রা স্বর্ণমন্দিরের দিকে। পথেই সাঙ্গু নদীর অবস্থান। শীতকাল হওয়ায় সম্ভবত পানি একদম কম ছিল। স্বর্ণমন্দিরে জুতা পায়ে এবং হাফ প্যান্ট পরে ঢোকা নিষেধ। নাম স্বর্ণমন্দির হলেও সেখানে কোনো মূর্তি কিংবা স্থাপনায় স্বর্ণের ছিটেফোঁটাও নেই। অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে সেখানে। প্রতিটির উপরে সৌরজগতের গ্রহের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া ছিল।

মূল মূর্তির কাছে পূজারী ব্যতীত কারোই প্রবেশাধিকার নেই। মূর্তির স্থিরচিত্র নেওয়ার অনুমতি থাকলেও ভিডিও করার অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। কোনো তথ্য জানার থাকলেও সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভিক্ষুরা কিছুই জানায়নি। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের জবাবে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছিল। তবে মন্দিরের উপর থেকে শহরের দৃশ্যটা বেশ দারুণ চোখে আসছিল। বান্দরবানে শহরের বালাঘাটায় ছোলামুড়ির আয়োজন ছিল রাস্তার উপর। আমরা সবাই এই ছোলামুড়ির ভক্ত, তাই না খেয়ে থাকতে পারিনি। বান্দরবান শহর অনেকটাই মফস্বল ধাঁচের। আমি যেন আমার শৈশবে ফেরত চলে গিয়েছিলাম।

পরের দিন সকালে হোটেল থেকে চান্দের গাড়ি করে রওনা দিলাম নীলাচলের উদ্দেশ্যে। নীলাচল শহর থেকে মাত্র চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর উচ্চতায় ১৬০০-১৭০০ ফুট উপরে অবস্থিত।  নামার পূর্বমূহূর্তে নীলাচল পুরো নীল আকাশে ছিল সাদা মেঘের আনাগোনা। মেঘের অবস্থান এতটাই ঘন ছিল যে নীলাচলের দূরের প্রকৃতি খালি চোখে ধরা পড়ছিল না।

নীলাচলের দূরের আকাশ যতটুকু নজরে আসছিলো, মনে হচ্ছিল, মেঘ কোনো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো নতুন করে জেগে উঠছে। সবমিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ঘন্টাখানিক আগেই আমাদের সফর শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাহিন্দ্রা গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল করিম ভাইয়ের আতিথেয়তা ছিলো অসাধারণ। দারুণ একজন মানুষ তিনি। নীলাচল থেকে ফিরে বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে আমাদের সবাইকে চা খাইয়েছিলেন তিনি। তার আমরা সকল বন্ধু হোটেলে যাই, রিজার্ভ করা বাস আধঘণ্টা আগেই এসে পরেছে। ক্লান্ত শরীরে মাতুয়াইলের বন্ধুমহল হোটেল থেকে মালামাল গুছিয়ে বাসে বসে পরলো। তখন আমাদের বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

 

যাই হোক, বান্দরবান ভ্রমণ আয়োজনকারী বন্ধুমহলের জুয়েল মোল্লা, পাপ্পু, মাসুম মোল্লা , রুবেল, মামুন, ওয়াসীম, পালসার সুমন, নুরইসলাম, জুয়েল, জনি, সাইদুর, মনির সহ সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

দিনশেষে অনুভূতি ছিলো- দীর্ঘদিন পর স্বচ্ছ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিয়ে অনেকদিনের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো। প্রতি বছর তাই অন্তত কয়েকবার এমন ভ্রমণ জরুরি। ভ্রমণবিহীন আপনি আপনার ভেতরের সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে পারবেন না। আপনার দৃষ্টি ও মেধাশক্তিকে সর্বোচ্চ প্রখর করতে পারবেন না। আপনি যত বেশি ঘুরে বেড়াবেন, ততো বেশি আপনার আত্মবিশ্বাস দৃঢ়তর হবে।