
চঞ্চল,
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় বুধবার রাতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা । সেই সময় তারা সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় তারা । এই হামলায় থানার ওসিসহ অন্তত ২০ জন আহত হন । তন্মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে । এই ঘটনায় রাতভর ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে ।
এনসিপি নেতা সারজিস এই ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করলেও স্থানীয় বিএনপি তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি বেলাল হোসেন পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে ও সোহেল রানা চপল মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম এই ঘটনার পিছনে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন । তিনি গভীর রাতে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন । এই স্ট্যাটাস সম্পর্কিত একটি খবর দৈনিক আজকের বাংলায় প্রচার করা হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রমতে , বুধবার রাত আনুমানিক ১০.৩০ মিনিটে দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জন মানুষ থানা চত্বরে ঢুকে ভাঙচুর করে। তারা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ভাঙচুর করে, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে। এছাড়াও ইট-পাটকেল ছুড়ে থানার জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়।
পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের দুইজন গুরুতর আহত । তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা ছয়জন পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক হাজতখানার তালার চাবি নিয়ে বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপল নামে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি কে ছিনিয়ে নেয়।’
তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলেও উত্তেজনা বেড়ে যায়। পরে লালমনিরহাট, হাতিবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওসি বলেন , ‘হামলার সাথে জড়িত অনেককে চিনতে পেরেছি। তারা স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
পুলিশের জানিয়েছে , বুধবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের সরোরবাজার এলাকায় চাঁদাবাজির সময় বেলাল ও সোহেলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাস ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এদিকে পুলিশের অভিযোগ , সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্ত করতে ওয়ালিউর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সা. সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল এই দাবি অস্বীকার করেন । তিনি বলেন, ‘আমি থানায় যাই নি । আর আমাদের কোনো নেতাকর্মীও এই হামলায় জড়িত নন। যাদের আটক করা হয়েছে তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপিকে জড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।’
এই ঘটনা প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির -এনসিপি- উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে পাটগ্রামে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়লে তাদের ছিনিয়ে আনতেই পরিকল্পিতভাবে থানা ঘেরাও, হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদেরও মারধর করে।’ তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ট্যাগ করেন।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে আছি। ডিআইজি স্যার ও জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।