হোসাইন রুবেল ভোলা।।
দ্বীপ জেলার ভোলার ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিট ভোলা কলেজে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য,কলেজেটি ভোলার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হওয়া সত্বেও এখানে আজ পর্যাপ্ত শিক্ষকদের অভাবে দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়ছে ভোলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা। অনেকেই শুনে অবাক হবেন, কলেজটিতে ৮৯টি শিক্ষক মধ্যে রয়েছে মাত্র ৪৩ জন শিক্ষ। যা দিয়ে চলছে ১৪টি বিষয় অনার্স-,এবং ১৬ বিষয় মাস্টার্স। তার উপর আবার উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান, মানবিক, ও ব্যবসায় শাখার পাঠদান । কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে এ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান রীতিমতো ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে অভিভাবকরা একদিকে যেমন চিন্তায় পড়েছ, অন্যদিকে তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ভবিষ্যত নিয়ে দিন দিন তাদের মধ্যে দুচিন্তা বেড়েছে ।
সূত্রমতে জানাযায়, সমাজ সেবক আলতাজের রহমান তালুকদার, হাজী খোরশেদ আলম, ইলিয়াস আলী মাস্টার, মো. ছিদ্দিক ও মোসলেউদ্দিন সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্টায় ১৯৬২ সালে প্রায় ১৫ একর ৬০ শতাশ জমির ভোলা সরকারি কলেজ টি প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন আ. হক মিয়া।
প্রতিষ্ঠার পর হতে কলেজটি ভোলা তথা দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মধ্যে একমাত্র স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা
নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ কলেজটি। জেলার সেরা বিদ্যাপীঠ হলে ও শিক্ষক স্বল্পতার জন্য ভেঙে পড়েছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা।
কলেজ সূত্রে জানাযায়, ১৯৭৯ সালে ভোলা সরকারি কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে অনার্স কোর্স চালু হয়।
বতর্মানে ১৬টি বিষয়ে অনার্স, ১৪টি বিষয়ে মাস্টার্স ও ডিগ্রিসহ (পাস) উচ্চ মাধ্যমিক চালু রয়েছে। কলেজটিতে বিভিন্ন সেকশনে ৮৯ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র ৪৩ জন, উপাধ্যক্ষ পদটিও দীর্ঘ চার বছর যাবত শুণ্য রয়েছে। এছাড়া ৪৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
এত কম শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রিসহ প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান চলছে।
আর এত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। শিক্ষক সংকটের কারনে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। এদিকে কলেজের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সৃষ্ট ২৪টি পদ থাকলে ও ১২ জন কর্মরত রয়েছে ।
২৪টি পদের মধ্যে প্রধান সহকারী, হিসাব রক্ষক, হিসাব সহকারী, ক্যাশিয়ার সহ ৬ টি পদই রয়েছে শূন্য।
অন্যদিকে কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি শিক্ষক সংকটের কারণে কয়েকবার মানববন্ধন ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেও শিক্ষকের চাহিদা পূরণ করতে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। ভোলা সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষেও ছাত্র হাসনাইন, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাগর রায়, ৩য় বর্ষের মেহেদী হাসান,আলী আকবর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরাফাত রহমান জিকু, দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের মাহবি সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, দিন দিন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষক।
আমরা চিন্তায় রয়েছি। তারা আরোও বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রাণ হলো শিক্ষক কিন্তু সেই প্রাণ আমাদের কলেজে নেই ।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থী বলেন একমাত্র ভোলা সরকারি কলেজে লেখাপড়া করে ভালো ফলাফল অর্জন করবো সে কারনে এখানে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর অবাক হয়েছি। যে সু-নামের জন্য ভোলা সরকারি কলেজে লেখাপড়া করার জন্য এসেছি সে কলেজটির মধ্যে এমন করুন অবস্থা সেটা আগে বুঝতে পারেনি। তারা আরো বলেন, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ভোলা সরকারি কলেজের যে সুনাম আছে সেটি ধরে রাখতে না পারলে কয়েক বছরের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী কলেজটি শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়বে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মোঃ এরশাদ বলেন, “অনার্স, মাস্টার্স শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাস নিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জামাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে সময় দেয়ার চেষ্টা করি কিন্তু কিন্তু একা মানুষ চেষ্টা থাকলেও সবাইকে সময় দেয়া সম্ভব হয়না। অনার্স থেকে মাস্টার্স এত শিক্ষার্থীদের ২ জন শিক্ষক পাঠদান কিভাবে সম্ভব বুজতেইতো পারছেন।
ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারন সম্পাদক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ উল্লাহ স্বপন বলেন বিষয়টি আসলে দুঃখজনক হলে সত্য, শিক্ষার্থীদের চাহিদামত ক্লাস আমরা নিতে পারছি না, তিনি বলেন আমার বিভাগে আমি একা থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান, দাপ্তরিক কাজ আমাকেই সব কিছু দেখতে হচ্ছে ।
ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম জাকারিয়া আমাদের সময় কে বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় ৮৯ জন শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ৪৩ জন শিক্ষক নিয়েই চলতে হচ্ছে আমাদের ।
শিক্ষকদের পাঠদান ছাড়া ও দাপ্তরিক কিছু কাজ রয়েছে সেগুলো ও তারা করতে পারছেন না।
তিনি জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর এ বিষয়ে অবহিত রয়েছে তাদের কাছে শূন্যপদের তালিকা ও রয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে শুন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য মন্ত্রলায়ে আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি বলেন শিক্ষক কম হলে ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির রুটিন মাফিক ক্লাস আমরা নেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু অনার্স মাস্টার্সে তা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় সরকারের কাছে আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের জোর দাবি,আমাদের এই ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনা ও তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দ্রুত কলেজের খালি পদগুলোর শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কলেজের অতীতের সুনাম অক্ষুন্ন রাখবে।