
রাকিবুল হাসান
শেরপুর প্রতিনিধি।।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাতকুচি বনবিটের নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা এলাকার গভীর অরণ্যে বন্যহাতি তাড়াতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে শরিফুল ইসলাম শরীফ (৩০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত শরীফ ওই এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল করিমের পুত্র। পেশায় তিনি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ও দুই সন্তানের জনক। আজ শনিবার (৭ জানুয়ারী) বেলা ১২টায় তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত এলাকার লোকালয়ে দীর্ঘদিন যাবত ৪০/৫০টি বন্যহাতির দল খাদ্যের সন্ধানে তান্ডব চালিয়ে আসছে। এরা গত কয়েকদিন যাবত কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ি এলাকার বাড়ি-ঘরে তান্ডব চালাচ্ছে। বন্যহাতির তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে শুক্রবার বিকেলে দাওধারা-কাটাবাড়িপাড়া গ্রামের শরীফসহ কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে দাওধারা ইসলামিক মিশন এলাকার লালটিলা নামক গহীন অরণ্যে হাতি তাড়াতে যান।
হাতির দল লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদেরকে আক্রমণ করে। এসময় জীবন বাঁচাতে শরীফসহ সঙ্গীয়রা দৌড় দেন। কিন্তু বেশি দুর যেতে পারেন নি। জঙ্গলে পড়ে গেলে বন্যহাতির দল তাকে শুঁড় দিয়ে পেচিয়ে আছাড় মেরে ও পা দিয়ে পিষ্ট করে মেরে ফেলার পর মরদেহ ঘিরে রাখে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থল থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে।
ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শরীফুল হাতি তাড়াতে গেলে আকস্মিকভাবে আক্রমণের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হাড়ান। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বনবিভাগ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ক্ষতিপুরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
নালিতাবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। একইসাথে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহত শরীফের পরিবারকে সরকরীভাবে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বন্যহাতির তান্ডবসহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও ইউএনও জানান।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। নিহত শরীফের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। প্রায় দুই যুগ ধরে গারো পাহাড়ে বন্যহাতির দল তান্ডব চালিয়ে জানমালের ক্ষতি সাধন করে আসলেও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। তারা বন্যহাতির তান্ডব থেকে মুক্তি পেতে এর স্থায়ী সমাধান চান।