মোঃ সিরাজুল মনির ।।
ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতি পিস চামড়া গুণগতমান ও আকৃতিভেদে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় এবং অধিকতর ভাল হলে ৯০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হলেও একই চামড়া চট্টগ্রামে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় এবং সর্বোচ্চ ৪০০টাকা দামে ।
বলা যায় চট্টগ্রামে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে এবারের কোরবানির চামড়া। নগরীর রাস্তার পাশে পাশে চামড়ার স্তুপ পড়ে থাকলেও ক্রেতা নেই। তবে সকালের দিকে চামড়া সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকায় বিক্রি হলেও দুপুর গড়াতেই দাম কমে গেছে বলে জানান আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম।
শহরের তুলনায় গ্রামে চামড়ার দাম একেবারে কম। গ্রামের অনেক এলাকায় চামড়া কিনতেও আসেনি বলে জানান, আনোয়ারা উপজেলার তিশরী জামে মসজিদের সভাপতি মো. সেলিম। চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়ার আড়তগুলো হল বিবিরহাট আতুরার ডিপো ও আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায়।
তবে প্রতিবছরের মতো এবারও সিটি করপোরেশনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শহরের প্রধান সড়কেও বসেছে চামড়া কেনাবেচার অস্থায়ী হাট। চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়া বিক্রির সবচেয়ে বড় নির্ধারিত স্থান হলো আগ্রাবাদ চৌমুহনী এবং বহদ্দারহাট এলাকা। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়া কেনাবেচার জন্য রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, আমরা প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়া লবণ ছাড়া ১৭ টাকা থেকে ২২ টাকায় নিচ্ছি। প্রতিটি চামড়া গুণগতমান ও আকৃতিভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় ক্রয় করছি। চামড়া শহরে মোটামুটি আমাদের চাহিদা মতো আসছে। আমি আমার আড়তের জন্য এবছর ৪ হাজার কাঁচা চামড়া নেবো। আমি এখন (বিকাল ৫ টায়) তিন হাজার নিয়েছি। সন্ধ্যার মধ্যে আর ১ হাজার চলে আসবে।
এবার চট্টগ্রামে পশু কোরবানি গতবারের চেয়েও কম হয়েছে উল্লেখ করে মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, এবার চট্টগ্রামে সাড়ে ৩ লাখের মতো কোরবানি হয়েছে। চট্টগ্রামে মোট কত কোরবানি হয় সেটা আমরা বলতে পারি। আমাদের কোন আড়তে কে কত গুলো চামড়া নেয় সেটা আমরা জানি।
আড়তদার সমিতির সভাপতি জানান, একটি কাঁচা চামড়া কেনার পর লবণযুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে লবণের দাম, লেবার খরচ, পরিবহন ভাড়া ও বিদুৎ বিলসহ কমপক্ষে ২০০ টাকা খরচ পরে। কাঁচা চামড়া কেনার ক্ষেত্রে এটাকে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য থেকে সেই অনুপাতে কম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।
নগরীর আগ্রাবাদ, টাইগারপাস মোড়, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা এবং বহদ্দারহাট মোড় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এখানে চামড়া বিক্রির জন্য জমা করছেন। এখান থেকে ছোট-বড় আড়তদাররা কিনে ভ্যানে, পিকআপ এবং ট্রাকে করে চামড়া গুলো নিচ্ছেন তাদের আতুরার ডিপো এলাকায় আড়তে।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য বেঁধে দিয়েছে। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর ঠিক করা হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা; ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ৩৩-৩৮ টাকা। এগুলো লবণ যুক্ত চামড়া। কিন্তু কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়নি। এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন আড়তদার এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তবে আড়তদারদের প্রস্তাবিত দামেই চামড়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেক বিক্রেতারা। কারণ একেতো লবণ ছাড়া চামড়া গরমে বেশিক্ষণ রাখা যাবেনা। তার ওপর রয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী, ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের তৎপরতা। তাই মোটামুটি দামেই চামড়া ছেড়ে দিচ্ছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় ২০০ পিচ কাঁচা চামড়া নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে আসা পতেঙ্গার মো. আলমগীর হোসেন জানান, এসেছি দুই ঘন্টা হয়েছে। এখনো একটি চামড়াও বিক্রি করতে পারিনি। আমরা বড় যে চামড়াগুলো সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় কিনেছি সেগুলো এখানে ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকা চাচ্ছে এখানে। গতবারের মতো এবারও চামড়ার ক্রেতা নেই। ছাগলের চামড়ার কেউ দামও জিজ্ঞেস করছেনা। যারা আগে থেকে আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছেন, তাদের চামড়াই গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে তারা। এতে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এ বছর সারাদেশ থেকে কোরবানি থেকে চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা ৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন। যা থেকে ১৬ কোটি বর্গফুট চামড়া মিলবে। যা গত বছর থেকে ১ কোটি বর্গফুট বেশি।