লিপিকা মন্ডল অর্পিতা
বেতাগী (বরগুনা)।।
কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এ মৃৎ শিল্প। মৃৎ শিল্পের তৈজসপত্র তৈরিতে এক সময় বাকেরগঞ্জের মহেশপুর গ্রামগুলো উপকূলীয় জনপদের মধ্য বিখ্যাত ছিল। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এই মাটির তৈরি নান্দনিক এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর পালপাড়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, গ্রামে নিয়োজিত মৃৎশিল্পীদের মধ্যে অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থ সামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে সনাতন ধর্মের (হিন্দু ধর্ম) বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। এখানে ৪ শতাধিক পরিবারের প্রায় ১ হাজার পাঁচ শ জন লোক এ পেশার সাথে নিয়োজিত রয়েছে।
বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির তৈরি জিনিস পত্রের চাহিদা নেই। এর প্রধান কারণ এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না। এই কারণে অনেক পুরনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোনো একদিন আবারো কদর বাড়বে নান্দনিক মাটির তৈরি এসব পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজো দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। পরিবারগুলো নারী, পুরুষ ও শিশুরাও কাজ করছে। মাটির তৈর বিভিন্ন আকারের কলস, হাড়ি, বাসন, বাটি, শরা , ফুলদানী, টপ, ব্যাংক ঘট, গামলা, চারি, টালী, বদনা, চারা, ইত্যাদি। এছাড়াও বাড়িঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মাটি দিয়ে ফুলদানী, টপ, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, হরিণ, সাপ, বিভিন্ন ধরণের পাখি তৈরি করে থাকে।
এগুলো প্রথমে মাটি দিয়ে তৈরি করে। পরে এক সপ্তাহ শুকানো হয়। এরপর রং করা হয়। রং করার পরে পোড়ানো হয়।
মহেশপুর পালপাড়া গ্রামের বিষ্ণু পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। কিছু দিন আগে মৃৎ পণ্যগুলো নৌকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কম খরচে পাঠানো যেত কিন্তু নৌপথে যোগাযোগ ভালো না থাকায় এখন আর পাঠানো যায় না। যদি পরিবহনে পাঠান হয় তাহলে খরচ বেশি লাগে এবং মাটির জিনিস অনেক সময় ভেঙ্গে যায়। এ কারণে আমাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
বেতাগী পৌর শহরে শনিবার হাটে বিভিন্ন ধরণের মৃৎ শিল্পের তৈরিকৃত সামগ্রি নিয়ে বিক্রি করতে আসেন মহেশপুর গ্রামের ষাটোর্দ্ধ শম্ভু পাল। এসময় তার সাথে এসব তৈরিকৃত পণ্য কথা হয়। শম্ভু পাল বলেন, আমাদের তৈরিকৃত মৃৎ শিল্প ঢাকা জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন অফিসে শোভা পাচ্ছে।’
শম্ভু পাল আরো বলেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাহায্যর জন্য এগিয়ে আসে তাহলে মৃৎশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হবে। ‘
বসুন্ধরা শুভসংঘের উপজেলা সভাপতি আলহাজ্ব কামাল হোসেন খান বলেন,’ মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠোপোষকতা প্রয়োজন।