কক্সবাজার শহরতলীর সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড়ী গ্রাম দরিয়ানগর। শহরের কলাতলী মোড় থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে আড়াই কিলোমিটার পথ গেলেই একটি ব্রীজ; এই ব্রীজটির এপারে পৌরসভা, ওপারে ঝিলংজা ইউনিয়নের একটি ছোট্ট গ্রাম দরিয়ানগর। বড়ছড়া নামের একটি পাহাড়ী খালের পাশে গড়ে ওঠা এ জনপদে এখনও আঁচ লাগেনি করোনার!
কক্সবাজারে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৪ মাস আগে গত বছরের ২৪ মার্চ। আর প্রথম করোনা রোগী মারা যায় ওই বছরের ২৮ এপ্রিল। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৮শ ছাড়িয়েছে। আর মারা গেছে অন্তত ১০০ জন করোনা রোগী।
জেলায় করোনা সংক্রমণের শীর্ষে আছে কক্সবাজার সদর উপজেলা। জেলার অর্ধেক করোনা রোগীই সদর উপজেলার। কিন্তু এই সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের একাংশ নিয়ে গঠিত একটি ছোট্ট গ্রাম দরিয়ানগরে গত ১৪ মাসেও ধরা পড়েনি কোন করোনা রোগী। অথচ ব্রীজের এপারে অবস্থিত ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের বহু সদস্যের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সোলতান বলেন, আমার ইউনিয়নে গত ১৪ মাসে শতাধিক করোনারোগী ধরা পড়েছে। মারা গেছেন ৩/৪ জন। কিন্তু দরিয়ানগর বড়ছড়ার বাসিন্দাদের কারো শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বড়ছড়া আশ্রয়ণ সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, এখানকার মানুষ করোনার আগে যেভাবে চলাচল করত, এখনও সেভাবেই চলাচল করছে। মাস্ক ছাড়াই নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজও আদায় করছে। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ মাস্কও পরেনা। ভিন্ন এলাকার বহু লোকও এই গ্রামে আসে। তবু এই গ্রামের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি, এটা আল্লাহর রহমত। এতে প্রমাণিত হয়, করোনা কারো স্পর্শে ছড়ায় না।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন দরিয়ানগর গ্রীণ ভয়েস সভাপতি পারভেজ মোশাররফ বলেন, হয়ত: কেউ টেস্ট করেনি বলে করোনা ধরা পড়েনি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ বলেন, এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। সর্দি কাঁশি-জ্বরের মতো স্বাভাবিক অসুখে ডাক্তারের কাছে যায় না। তারা স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের ওষুধ খায় আর লবণযুক্ত গরম পানি দিয়ে বার বার গলা ও নাক পরিস্কার করে। এতে সর্দি-কাঁশি দুই-তিনদিনেই সেরে যায়।
কী কারণে দরিয়ানগরে করোনা সংক্রমণ হচ্ছে না জানতে চাইলে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, হয়ত: খোলামেলা পরিবেশ থাকার কারণে দরিয়ানগর গ্রামে করোনা সংক্রমণ হতে পারছে না। এমনিতে গ্রামে করোনা কম ছড়ায়, শহরে বেশি ছড়ায়। যেহেতু বেশি মানুষ একত্রিত হয় শহরে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, কক্সবাজারে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে গত বছরের ২৪ মার্চ চকরিয়ার খুটাখালী গ্রামে, আর মারা যায় ওই বছরের ২৮ এপ্রিল রামুর কাউয়ারখোপ গ্রামে। গত ১৪ মাসে কক্সবাজার জেলায় ১১ রোহিঙ্গাসহ ১০০ জন ব্যক্তি করোনায় মারা গেছেন। এরমধ্যে, গতমাস থেকে শুরু হওয়া করোনার নতুন ধাক্কায় মারা গেছেন ১৭ জন ব্যক্তি।