
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
দখল দূষণে মৃত প্রায় কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী পরিদর্শনে গিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটসহ বিভিন্ন অংশ সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সালাউদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকতা নিলুফা ইয়াসমিন।
এসময় নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভালো হবে যারা দখল করেছেন তারা যদি নিজেরা সরে যান। তাহলে ক্ষতি হবেনা। যেখানে যেখানে আদালতের স্টে অর্ডার আছে সেগুলো ছাড়া বাকিগুলো দখল মুক্ত করবো। এখানে আর কোনো প্রশ্ন নাই। কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীর জায়গা দখল ও প্যারাবন ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা। বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও ৫ আগস্টের পর তা আরো বাড়তে থাকে।
একসময় কক্সবাজারের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কস্তুরাঘাট এখন আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারে নদী বন্দর করা যাচ্ছেনা দখলের কারণ উল্লেখ করে আরো বলেন, “স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে নদীর সীমানা নির্ধারণ করার পর উচ্ছেদ শুর হবে। নদী বন্দর যে করবো তার জন্য নদী লাগবে।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, উপদেষ্টা হওয়ার আগে বাঁকখালী নদীর জন্য পরিবেশকর্মী হিসেবে আসা হতো তখন থেকে এ নদীকে দখল মুক্ত করা কক্সবাজারবাসীর অনেক দিনের দাবী।
তিনি আরো বলেন, যেসব জায়গায় আদালতের স্থিতাবস্থা আছে সেগুলো আইনী ভাবে মোকাবেলা করা হবে। আশাকরি দ্রুতই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবে প্রশাসন। তবে কবে থেকে তা বলবোনা না, এতে করে দখলদাররা বার্তা পেয়ে যাবে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অবস্থা দেখতে গিয়েছেন উল্লেখ করে রেজওয়ানা হাসান জানান, ওখানে যেভাবে করে নির্মাণ কাজ চলছে, এটা যদি লাগাম টেনে না ধরা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের সিবীচ কিন্তু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সিবীচ হয়ে যাবে। এটা হতে দেয়া যাবেনা না।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে বলেন, এই দ্বীপ নিয়ে আগে কথা বলেছি এখন কাজ করছি। বিগত সরকার সোনাদিয়া দ্বীপকে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংকটকে অস্বীকার করে বেজাকে দিয়ে দিয়েছিলো, এখন বেজা বলছে তাদের দরকার নাই। তাই ভূমি মন্ত্রণালয় আর দুই এক দিনের মধ্যে বনকে দিয়ে দেয়া হবে।
এই সরকারের সীমিত সময়ের মধ্যে কক্সবাজার নিয়ে এসমস্ত কাজ গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলেও জানান।
কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী। বাঁকখালী নদীর দুই পাশের প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত স্থাপনা করেছে অবৈধ দখলদাররা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নদীর জমিতে নির্মাণ করেছে খুরুশকুল কস্তুরাঘাট ব্রীজ। নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে পেশকার পাড়া নামে বিশাল পাড়া।
নতুন করে নদী ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে কস্তুরাঘাট পয়েন্টে নতুন নতুন স্থাপনা। ৬ নম্বর ঘাট থেকে উত্তর নুনিয়াছড়া পর্যন্ত প্রায় ২৮টি অবৈধ জেটি রয়েছে বর্তমানে। সবকটিই অনুমোদনহীন। নদী থেকে বালু তুলে রাখার পাশাপাশি সিলেট থেকে পাথর ও বালু এনে বিক্রির জন্য মোট ৫টি সেল সেন্টার করা হয়েছে অবৈধভাবে। কয়েকটি তেলের বার্জও রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বরফকল, কোল্ড স্টোরেজ, ফিশিং অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ডকইয়ার্ড, মাছের আড়ত, শুঁটকির আড়তসহ শত শত বসতঘর।
২০২০ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় নদী দখলদার হিসেবে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, ১৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়। প্রায় ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদীর একসময় প্রশস্ততা ছিল ৯৬ থেকে ১২০ মিটার পযন্ত। কিন্তু দখলের কারণে প্রশস্ততা কমে কক্সবাজার শহরের কোথাও ৫০ মিটার, কোথাও ৬০-৭০ মিটার হয়ে গেছে।