
মো.ইমরান হোসেন হান্নান,
কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি।।
দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত চামড়া শিল্প কয়েক বছর ধরে সিন্ডিকেটের কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সঠিক দাম পাচ্ছে না। ফলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত সহ চামড়ার টাকা গরিব, এতিম, অসহায়, দুস্থ কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যরাও বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ এবং প্রতিবছর এ দেশে ঈদুল আজহায় ত্যাগের মহিমায় লাখ লাখ পশু তথা গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কোরবানি করা হয়। ইসলাম ধর্মের বিধান মোতাবেক, কোরবানিকৃত এসব পশুর চামড়ার টাকা গরিব, এতিম, অসহায়, দুস্থ কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত বছরগুলোয় চামড়ার দাম কমে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পরস্পরকে দায়ী করতে দেখা গেছে। । ট্যানারি ও আড়তদার ছাড়াও এর সঙ্গে সম্প্রতি নতুন একটি সিন্ডিকেট যোগ হয়েছে। সেটি হচ্ছে লবণ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট । দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৬০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহার সময়; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ সময়টাতেই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজি শুরু করে।
পরিসংখ্যানে জানাযায় , গরুর চামড়ার দাম এবছর প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একই চামড়া ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; গত বছর যা ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা; গত বছর যা ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। পাশাপাশি প্রতি বর্গফুট বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ , অসাধু ও শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বেড়াজালে দেশে কয়েক বছর ধরে ঈদের আগেই কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে আসছে। তারল্য সংকট দেখিয়ে চামড়া দাম কমানো হচ্ছে। দুই-তিন বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। গ্রামাঞ্চলে ক্রেতার অভাবে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। গত বছরের মতো এ বছরও যদি চামড়া নিয়ে ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এ খাত বাবদ সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলেন, একটা সময় ৭০-৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরুর চামড়া ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে; কিন্তু বিগত বছর এবং তার আগের বছরে চামড়ার দাম এতটাই নিম্নমুখী ছিল যে, ওই ধরনের গরুর চামড়া ৪-৫শ টাকাতেও বিক্রি হয়নি।দেশে চামড়া বাজারে অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বিক্রেতাদের অনেকেই ৩০ শতাংশ কম মূল্যে পশুর চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে ট্যানারি মালিকসহ এ শিল্পসংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও দেশের গরিব, এতিম ও অসহায় মানুষ তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। চলতি বছর করোনা মহামারির মধ্যে পালিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। করোনার প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই দেশের গরিব, দুঃখীদের অবস্থা আগের তুলনায় অনেকাংশে খারাপ। এর মধ্যে তারা যদি কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা হক হিসেবে একটু বেশি পরিমাণে পান, তাহলে তাদের জন্য সুবিধা হয়। সার্বিক দিক বিচেনায় দেশের চামড়া বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি। চামড়ার বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের জন্য এটিও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। চামড়া বাজারের নেপথ্যে থাকা এসব ‘সিন্ডিকেট’র সঙ্গে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজন শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর দেশব্যাপী চামড়া নিয়ে যে অসন্তোষ দেখা গেছে, তা যেন এ বছর কোনোভাবেই দেখা না যায়, সেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গত দুই বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে লক্ষাধিক পিস পশুর চামড়া ফেলে দেয়, যার অধিকাংশই মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়।