বিশেষ প্রতিবেদক।।
একটু কিছু হলেই মহাসড়ক অবরোধ হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ির ভিতর আটকে থাকা সাধারণ যাত্রী- নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের কথা কেউ ভাবছে না। গত সতের বছর এই আন্দোলন কোথায় ছিলো? প্রশ্ন তুলে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের যাত্রী ইব্রাহিম মোল্লা আরো বলেন- ঢাকা থেকে ভোর পাঁচটায় রওয়ানা দিয়ে দশটায় এসে নেমেছি নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে বরগুনার এই বাসে মির্জাগঞ্জ বাজার পর্যন্ত যাবো। নথুল্লাবাদ থেকে পৌনে ১১টায় বাসটি ছেড়েছে। আমতলা মোড়ে এসেই স্টার্ট বন্ধ করে বসে আছে। সামনে অসংখ্য গাড়ি থেমে আছে। প্রতিটি গাড়িতে ৩০- ৪০জন যাত্রী আছে। হাজারো মানুষকে জিম্মি করে কিসের আন্দোলন? এই জন্যে কি ৫ আগস্ট হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৃদ্ধ ইব্রাহিম। তার সাথে সহমত পোষণ করেন বিসমিল্লাহ পরিবহনের আরো অনেক যাত্রী। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে ৪ নভেম্বর সোমবারও বরিশালে সড়ক অবরোধ করে একঘন্টার কর্মসূচি পালন করেছে বরিশালের আইএইচটি শিক্ষার্থীরা। আহ্বায়ক সুলতান মোঃ আবিদ এর নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মেসী সংগ্রাম পরিষদের ব্যনারে গতদিন রবিবারও ৬ দফা দাবী নিয়ে তারা সড়কে অবস্থান নিয়েছিলো। তবে গতদিন তারা নগরীর ভিতরের সড়ক বান্ধরোডে অবস্থান নেয়। সোমবার চলে এসেছে মহাসড়কে আমতলা মোড়ের তিন রাস্তায়। যে কারণে বরিশাল পটুয়াখালী- কুয়াকাটা- ঝালকাঠি- পিরোজপুর সহ অভ্যন্তরীণ ১৩টি রুট অবরুদ্ধ হয়ে পরে। এসময় অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- শিক্ষার্থীদের কথায় স্পষ্ট তারা ১৪ বছর ধরে বঞ্চিত। গত সতের বছর আওয়ামী লীগের শাসন ছিলো। তখন এসব আন্দোলন করতে পারেনি তারা অথচ সাত মাসের সরকারের কাছে দাবি-দাওয়ার শেষ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও তো সময় দিতে হবে।
শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের ন্যায্য ও অন্যায্য আন্দোলনে অতিষ্ঠ প্রশাসনও। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানার লিখে প্রশাসনকেও স্থবির করে রেখেছে বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তা। নিরবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ হওয়া দেখলেন তারাও। আইএইচটি শিক্ষার্থীরা ঠিক একঘন্টা পর সড়ক ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে মহাসড়কে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এসময় একজন পথচারী বলেন- এদের দাবীতো তবুও যৌক্তিক কিন্তু বরিশালের মানবিক নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী ও তার অটোরিকশা ইজিবাইক ভ্যানচালক সংগ্রাম পরিষদের দাবীতো পুরোটাই অযৌক্তিক। অবৈধ যানবাহনের বৈধতা চেয়ে মিথ্যা আন্দোলন করে সড়ক অবরোধ করে মনীষা। এটার বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন আরো অনেকেই। এমনকি তার সঙ্গের অনেকেই মনে করেন অটোরিকশা পুরোপুরি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এটি শুধু অবৈধ নয়- মারাত্মক বিপদজনক বলে জানান বরিশালের ষাটোর্ধ সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। তিনি আরো বলেন- আইএইচটি বা মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক হলেও বরিশালে তাদের আন্দোলন অযৌক্তিক। কারণ- তাদের ৬ দফার প্রতিটি দাবীই কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
একই কথা বললেন বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি বলেন- আমিতো আগেই বলেছি। এখানে বরিশালের প্রশাসনের করনীয় কিছুই নেই। তাদের দাবীনামায় সুপারিশ করে মহাপরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। অযথাই মহাসড়ক অবরোধ করছেন শিক্ষার্থীরা। বরিশালের প্রশাসনের এখানে আর কিছুই করার নেই বলে জানান তিনি।