
শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
চাঁদাবাজির এক ভিন্ন কৌশলের শিকার হয়ে চার বছর ধরে নিঃস্ব জীবনযাপন করছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার আক্কেল মাহমুদ মুন্সী কান্দির বাসিন্দা আলেকজান বিবি। দীর্ঘ আইনি লড়াই এবং সামাজিক বাধার মুখে পড়ে তিনি নিজের বৈধভাবে ক্রয়কৃত জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ১৮ জুন দলিল নং ১৫০৪ অনুযায়ী ৫৮ নং দাগে ১৮ শতাংশ জমি ক্রয় করেন আলেকজান বিবি ও তাঁর স্বামী মাইন উদ্দিন চৌকিদার। বৈধভাবে রেকর্ড, নামজারি ও খাজনা পরিশোধ করে তারা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন জমি নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকলেও ২০২১ সালে সমস্যার সূত্রপাত হয়, যখন আলেকজান বিবির ছেলে মিজানুর রহমান চৌকিদার সৌদি আরব থেকে ফিরে টিনের ঘর ভেঙে পাকা বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
এ সময় ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হলে স্থানীয় বাসিন্দা আবু কালাম বেপারী, শাহনাজ আক্তার ও লায়লা বেগম দাবি করেন, তাদের মা অজুফা বেগম ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির অংশীদার। তারা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এবং কয়েক দফায় সালিশের মাধ্যমে আলেকজান বিবির ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হয়, কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি।
শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে স্থানীয় সালিশগণ কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানান, অজুফা বেগমের জমির কোনো দাবির ভিত্তি নেই। তবে তাকে শান্তনার স্বরূপ তিন লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আলেকজান বিবি তাতে রাজি হয়ে ৩০ হাজার টাকা বায়না দেন। কিন্তু আবু কালাম বেপারী জমি লিখে দেওয়ার শর্ত দেন, যা অজুফা বেগম ও তার পরিবার মেনে নিতে পারেননি।
এরপর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অজুফা বেগম তার অন্যান্য জমির মামলা (মোকদ্দমা নং ৬৬৮/২১) করতে গিয়ে আলেকজান বিবির জমির দাগ বসিয়ে দেন এবং আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। আলেকজান বিবি যথাযথ কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করলে নিষেধাজ্ঞা বাতিল হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ক্ষান্ত হয়নি; তারা বাড়িতে হামলা চালিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেন এবং আলেকজান বিবি ও তাঁর স্বামীকে মারধর করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিরবতা:
আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও প্রশাসনের সহায়তা পাননি আলেকজান বিবি। ২০২১ সালে থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তৎকালীন ওসি কেবল মৌখিকভাবে জানান, অজুফা বেগমের পরিবারকে বাড়ির কাজে বাধা না দিতে। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিবি অফিসে মিথ্যা অভিযোগ করে পুলিশ এনে পুনরায় কাজ বন্ধ করে দেয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও প্রতিপক্ষ ভুয়া কাগজ তৈরি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে গত চার বছর ধরে বাড়ি নির্মাণ আটকে রেখেছে।
বাড়ি নির্মাণের সরঞ্জাম নষ্ট ও চুরি:
প্রতিপক্ষের টানা বাধার কারণে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে না পেরে আলেকজান বিবির নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। লোহার রড, পানির পাম্প, গুনা, বাঁশ, সিমেন্টের বস্তাসহ বিভিন্ন সামগ্রী একে একে চুরি হয়ে যায়। এমনকি রান্নাঘর নির্মাণ করতেও বাধা দেওয়া হয়। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে কোর্টের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে, সেটি ছিল মিথ্যা; এটি মূলত ভেদেরগঞ্জ থানার দেওয়ানী মিস কেসের সমনের কাগজ, নিষেধাজ্ঞার আদেশ নয়।
চাঁদাবাজির অভিযোগ:
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অজুফা বেগম দেওয়ানী মোকদ্দমায় ৩৭ জনকে বিবাদী করে ৮৫ শতাংশ জমি দাবি করেছেন। তবে শুধুমাত্র দুর্বল পরিবারগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করা যায়। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক সুবিধা আদায় করা।
বিচারের দাবি:
অবশেষে আলেকজান বিবি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন তারা সঠিক তদন্ত করে আইনি সহায়তা দেন। তিনি চান, তার বৈধ জমিতে বাধাহীনভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারুক এবং পরিবারটি দীর্ঘ চার বছর পর ঈদের আনন্দ ফিরে পায়।