
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের জাজিরায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। চলমান এসএসসি পরীক্ষার মাঝে এই মেলা আয়োজনকে ‘অশোভন’ বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা, অভিভাবক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত সেমাবার পহেলা বৈশাখে উপজেলা পরিষদ এলাকায় ১০দিন ব্যাপী মেলা শুরু হয়। মেলার উদ্বোধন করেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায়। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই মেলা চলছে। মেলাটি বসানো হয়েছে দুটি এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রর পাশেই এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাগোয়া এলাকায়।
উচ্চ শব্দে গান, ডিজে সাউন্ড, নৌকা দোলা, খাবারের দোকানের হইহুল্লোড়—এসব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়াবহ পরিবেশ। পরীক্ষার্থীরা পরিক্ষায় মনোযোগ দিতে পারছে না। হাসপাতালের রোগীরাও বিরক্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি।
স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, “একদিকে পরীক্ষার সময়, আরেকদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দিয়ে মেলা? এটা প্রশাসনের কেমন দায়িত্বশীলতা?”
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক জানান, “হাসপাতালের সেবার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোগীরা বিশ্রাম নিতে পারছে না, নার্সদের কাজ করতেও সমস্যা হচ্ছে।”
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি নিয়ে উঠেছে তীব্র আপত্তি। স্থানীয় আলেম সহিদুল ইসলাম বলেন, “ইসলামি ফাউন্ডেশন হচ্ছে ধর্ম প্রচারের কেন্দ্র। তারাই যদি মেলা গান-বাজনার পৃষ্ঠপোষক হয়, তাহলে ধর্মের ভবিষ্যৎ কোথায়?” যদি ইসলামি ফাউন্ডেশন এটা করে থাকে তাহলে আমি বলবো এটা ইসলামি ফাউন্ডেশন নয় এটা হলো ইসলাম বহির্ভূত ফাউন্ডেশন।
আরেকজন মন্তব্য করেন, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে অসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে অপমান করা।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে সেখানে মানুষ নানা ধরনের মন্তব্য করছে মেলা নিয়ে, এতে মানুষ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, “আমার সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছে, আর প্রশাসন বৈশাখী উৎসব করছে, সেটাও ইসলামি ফাউন্ডেশন দিয়ে! এ লজ্জা কার?”
তবে স্থানীয়রা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে মেলা বন্ধ করতে হবে এবং এ আয়োজনের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তারা আরও বলেছেন, শিক্ষা, ধর্ম ও নৈতিকতার উপর এমন অবজ্ঞা করে কোনো আয়োজনই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
জাজিরা উপজেলা ইসলামি ফাউন্ডেশন এর ফিল্ড সুপারভাইজার আবু বকর বলেন, বৈশাখী মেলায় ইউএনও স্যার একটি কমিটি করেছে সেখানে মেলার আইন শৃঙ্খলার দায়ীত্বে আমাকে সসদ্য সচিব রাখা হয়েছে। আমাকে বৈশাখী মেলায় সুষ্ঠু পরিচালনায় সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বৈশাখী মেলা হচ্ছে। আমরা এর কমিটি করে দিয়েছি। এর দায়ীত্বে রয়েছে ইসলামি ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার । ও সদস্য রয়েছে উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম। মেলার কমিটির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন এখন মনে পরছেনা অফিসে আইসেন।