স্টাফ রিপোর্টার- মেহেরপুর।।
মেহেরপুরের গাংনীতে যুবদল নেতা আলমগীর হােসেনকে হত্যা মামলার ৩ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব সদস্যরা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- গাংনী পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ড চৌগাছা গ্রামের রইচ উদ্দীনের ছেলে রবিউল ইসলাম বিপ্লব -৩৬- ১নং ওয়ার্ড বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আব্দুল আউয়ালের ছেলে মফিকুল ইসলাম -৩৯- ও উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের জামাত আলীর ছেলে আলমগীর হােসেন -৪০-।
শুক্রবার -৩ জানুয়ারি- দুপুরের দিকে র্যাব-১২- সিপিসি-৩- মেহেরপুরের কোম্পানী কমান্ডার- এএসপি আশরাফ উল্লাহ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান- গত ২ জানুয়ারি সকালে গাংনী উপজেলার ষােলটাকা ইউনিয়নের সহড়াবাড়ীয়া-কামারখালী ইচিখালীর মাঠে আলমগীর হােসেন -৩৮- নামের এক ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ পড়ে ছিল। লাশটি গাংনী পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের মঈনউদ্দীনের ছেলে ও ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আলমগীর হােসেন বলে তার পরিবার ও এলাকাবাসী নিশ্চিত করে। এ ঘটনায় নিহত আলমগীরের পরিবারের পক্ষ থেকে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা করে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামী রবিউল ইসলাম বিপ্লবকে গাংনী উপজেলা শহরের হামিদ ঘড়ির দােকানের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামী মফিকুলকে গাংনী কাঁচা বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আসামী আলমগীরকে কােদাইলকাটি গ্রামের একটি চায়ের দােকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নিহত আলমগীরের সাথে বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের মফিকুলের ২ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল। প্রায় ৪ বছর আগে আলমগীর মফিকুলের নিকট হতে টাকা ধার নিলেও তা সে পরিশোধ না করে প্রায় দেড় বছর আগে সৌদি আরবে চলে যায়। গত কয়েক মাস পূর্বে আলমগীর দেশে ফেরত আসে। পাওনা টাকার জন্য মফিকুল তার বাড়িতে আসলে টাকা পরিশোধ না করে নানান তালবাহানা করে। বিষয়টি শুরু থেকেই আসামী মফিকুল তার বন্ধু আসামী বিপ্লবকে জানায়। আসামী বিপ্লব এবং আসামী আলমগীর একাধিকবার ভিকটিমের নিকট হতে আসামী মফিকুলের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। গত তিন দিন আগে আসামী মফিকুলের সাথে ভিকটিমের টাকা দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তখন থেকেই আসামীরা ভিকটিমকে মারার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দুই দিন আগে ঘটনাকে অন্য দিকে -পরকীয়া- রুপ দেওয়ার জন্য আসামী বিপ্লবকে গাংনী বাজারের থানা রোডে অবস্থিত তার দোকানে বসে নিজ হাতে একটি চিরকুট লেখে যা ভিকটিমকে হত্যার পর লাশের নিকট রাখার জন্য। গত বুধবার বিকেলে আসামী বিপ্লবের ঘড়ির দোকানে ভিকটিম -আলমগীর- যায় এবং তার সাথে আড্ডা দেয়। পূর্বে ভিকটিম তার বন্ধু আসামী বিপ্লবের নিকট টাকা ধার চেয়েছিল। আসামী বিপ্লব ভিকটিমকে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে গত বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নিজ বাসায় নিয়ে যায়।
আসামী মফিকুল তার মোটরসাইকেলযোগে আসামী বিপ্লব ও ভিকটিম আলমগীরকে গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের মড়কা বাজারে নিয়ে যায়। মড়কা বাজারে পূর্বে থেকে অবস্থানরত আসামী আলমগীর ও তার একজন সঙ্গীকে আলাদা একটি মোটরসাইকেলে করে ভিকটিমসহ মোট পাঁচজন সহড়াবাড়ীয়া মাঠের রাস্তায় যায়। সেখানে আসামীরা মফিকুলের নিকট হতে ধার নেওয়া টাকা কেন ফেরত দিচ্ছে না এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তখন তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আসামী আলমগীর তার শার্টের নিচে লুকিয়ে রাখা রামদা দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে এবং সবাই মিলে ভিকটিমের মুখ ও হাত- পা বাঁধে। আসামী বিপ্লব ও আসামী মফিকুল ভিকটিমকে ধরে রাখে এবং আসামী আলমগীর তার সঙ্গীয় অন্য আসামীসহ ভিকটিমকে দা দিয়ে জবাই করে। পরবর্তীতে তারা লাশ ফেলে রেখে রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে ঘটানাস্থল ত্যাগ করে। ফেরার পথে ঘটনাস্থল হতে আনুমানিক ৪ কিলোমিটার দূরে রাস্তার ঢালে ভিকটিমকে জবাই করার কাজে ব্যবহৃত দা টি ফেলে আসে বলে আসামী বিপ্লব স্বীকার করে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণে ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি থাকার তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায় এবং আসামীদের দেওয়া বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী ও উদ্ধারকৃত আলামতের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গাংনী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।