ইসমাইল ইমন
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -চউক- কর্তৃক -চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প” এর আলোকে ‘মহানগরের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি’ বিষয়ে রবিবার, ২৪ নভেম্বর চউক হল রুমে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন । চউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে সিডিএ বোর্ড সদস্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ এস এম জাইদুল করিম -প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম- এডভোকেট সৈয়দ কুদরত আলী- মো. নজরুল ইসলাম- স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন এবং স্থপতি ফারুক আহমেদ। এছাড়াও চসিক ও চউক হতে যথাক্রমে উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম- চসিক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম এবং চউক সচিব রবীন্দ্র চাকমা- চউক প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -চউক- কর্তৃক প্রণয়ানাধীন -চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প” এর উপর পরিবেশনা প্রদান করেন- প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবু ঈসা আনছারী। উক্ত পরিবেশনায় তিনি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পুকুর- খাল- পাহাড়সহ পরিবেশগত দিকগুলোর সংরক্ষণে চউক ও চসিক এর কাজের সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “চট্টগ্রাম শহরের খাল সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প” এর পরিচালক প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়ন তরান্বিত করতে- খাল পরিষ্কারের ‘টেকসই কার্যক্রম’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও খাল পূণঃ ভরাট প্রতিরোধে চসিকের সহযোগিতা কামনা করেন।
সিডিএ বোর্ড মেম্বার স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন মাস্টারপ্ল্যান এর প্রণয়নের সাথে সাথে তার সঠিক বাস্তবয়নের উপর গুরুত্ব দেন। সিডিএ-এর লোকবল সংকট এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তা সমাধানে অপর বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম মত দেন।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামকে প্রকৃত “গ্রিন, ক্লিন সিটি” হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় মর্মে তিনি মন্তব্য করেন। নগরীর পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা উল্লেখ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প এর মাধ্যমে ‘সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশান- স্থাপনের জন্য চউকের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও, নগরের বাসিন্দাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য -খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান’ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে- এ স্থানগুলোর সুরক্ষা এবং উন্নয়নে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে মর্মে আশ্বাস দেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন- নগরীর মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার নিরসণে জনসচেতনতা প্রয়োজন। আমি বিদেশে গেলে শহরটা পরিষ্কার রাখার জন্য চেষ্টা করি কিন্তু একই মানুষ আমি দেশে আসলে তা করছি না। এই জন্য একটা জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রোগ্রাম আমি এখন স্কুল লেভেল থেকে শুরু করছি। গতকালকে আমি চট্টগ্রামের চাইল্ড স্পেশালিস্টদের একটি দলের সাথে কথা বলেছি এবং তারা ইন্টারেস্টেড এই প্রোগ্র্রাম চালানোর জন্য। আমরা বাচ্চাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তা ধীরে ধীরে সমাজে বড় প্রভাব ফেলবে।
গত ১৮ টি বছর আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম মহানগরের। পরে সভাপতি ছিলাম। এরপরে আহবায়ক ছিলাম। যার কারণে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীরা আছে এবং আমার সাথে তাদের সম্পর্কটা খুবই ভালো। পাশাপাশি সেখানে কিন্তু ওয়ার্ড পেশাজীবীরা আছে। মহল্লা সরদার আছে এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দরাও আছে। তাদের সাথে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে। তাদের নিয়ে যদি আমরা কমিটি গঠন করি তাহলে তারাও এই গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম গড়তে ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিটা ওয়ার্ডের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে প্রায় ৭০, ৮০, ৯০ জন কর্মী আছেন। আমি অলরেডি ওয়ার্ড ওয়ার্ডে গিয়ে কিন্তু তাদেরকে মনিটরিং করছি। আমি ওয়ার্ড ওয়ার্ডে যাচ্ছি তাদেরকে রোল কল করছি। জনগণকে জিজ্ঞেস করছি যে লোক এসব লোক কাজ করছে কীনা। মশা মারতে আরো আধুনিক কোন ঔষধ আনা যায় কী না তার খোঁজও হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক আবু ঈসা আনছারীর, সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকার আয়তন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সমর্থন করে- তিনি সিটি করপোরেশনের পরিষেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন- যা নগরীর সার্বিক উন্নয়ন এবং নাগরিক সেবার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে- সাধারন জনগনের উপস্থিতি নিশ্চিতে- মেয়র মহোদর ওয়ার্ডের মহল্লা কমিটি- জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহায়তা গ্রহণে সহযোগিতা করবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন।
মেয়র তাঁর বক্তব্য আরো উল্লেখ করেন- সিডিএ ও চসিক এর মধ্যে কোনো বিভেদ দেখা গেলে- চট্টগ্রাম উন্নয়নের স্বার্থে তা ভবিষ্যতে আর হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে চউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম আজকের অনুষ্ঠানকে আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয়ের ‘প্রথম’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প বাস্তবায়নে তথ্য ও সম্পদের অবাধ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
মাননীয় সভাপতি তাঁর বক্তব্যে মাননীয় মেয়র ও সিটি করপোরেশন এর কর্মকর্তাগণকে চউক আগমনে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে- চউক ও চসিক এর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন।
সভায় মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক- পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই চট্টগ্রাম মহানগর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।