
পাবনা প্রতিনিধি।।
পাবনার সুজানগর উপজেলায় পদ্মানদীর তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে কৃষি জমি ও বসতবাড়ি।
ভাঙন প্রতিরোধে সরকারি কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চরম আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে স্থানীয় কৃষক ও নদীর পারের মানুষ। এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পরে নষ্ট হয়েছে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল।
নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে চাষযোগ্য কৃষি জমি।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হঠাৎ করেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত- বদলাতে শুরু করেছে নদীর গতিপথ। এরই মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত হয়ে কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকদের পানি থেকে ফসল কেটে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। তবে ফসল ও জমির পাশাপাশি পারের উঁচু ফসলি চর ভেঙে লোকালয়ের দিকে নদী এগিয়ে আসছে।
ফলে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পাবনা জেলার সুনাম রয়েছে সারা দেশে। এ অঞ্চলের প্রায় সব ধরনের ফসল সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।
তবে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া অঞ্চল থেকে শুরু করে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম দিকে প্রায় ২০টি গ্রাম তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে।
পানির নিচ থেকে ফসল তুলে নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনছেন কৃষকেরা। তবে এভাবে ভাঙন হতে থাকলে দ্রুতই নদীপারের বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়বে।
সাতবাড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়- মূল সড়ক থেকে নদীর পানি অল্প কিছুটা দূরে রয়েছে। মূল নদী থেকে শাখা নদী বের হয়ে বসতির দিকে এগিয়ে আসছে। মাঝে রয়েছে চর- যাতে রয়েছে ফসল।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এ নদী ভাঙন দেখছেন এ অঞ্চলের মানুষ। নদীর ওপারে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা। এ দুই জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বিশাল পদ্মানদী। আগে মূল সড়ক ও বসতি থেকে নদী প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ছিল।
কিন্তু ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন লোকালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। শুকনো মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকেরা পদ্মার চরে পেঁয়াজসহ নানা ফসল চাষাবাদ করে থাকেন। সম্প্রতি চরে লাগানো হয়েছিল বাদাম, তিল।
যা গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বাড়া পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধু পানিতে তলিয়েই যায়নি, তিল ও বাদামের ক্ষেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন- এ নদীর ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে বহুবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। অস্থায়ীভাবে কিছু বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকমে টিকে আছি আমরা।
এ এলাকার অনেককে দুই থেকে তিনবার বসতি সরিয়ে নিতে হয়েছে। নদীর তীর রক্ষায় যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেই বাঁধের বাইরের অংশে যাদের বসতি, বিশেষ করে নদীর তীরে যারা বসবাস করছেন- তারা সব সময় ভাঙন আতঙ্কে থাকেন।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন- উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি- তারা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করবেন।
পুরো তথ্য এখনো পাইনি। তবে তেমন ফসল নষ্ট হওয়ার কথা নয়। বাদাম ও তিলসহ কিছু জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমরা কৃষকদের পাশে আছি- থাকব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।
উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল কিছুটা ভেঙেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ওপরের নির্দেশ পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাবনা সুজানগর উপজেলার এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মানদী। সুজানগরের প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশ পদ্মানদীর তীরবর্তী।
বর্তমানে নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রায় ২০টি গ্রাম। পূর্বের নাজিরগঞ্জ অংশ থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্ত তারাবাড়িয়া পর্যন্ত এ ভাঙন রয়েছে।