Dhaka , Friday, 26 December 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
ছোট মেয়ের পর বড় মেয়েও মারা গেল লক্ষ্মীপুরে ঘরে আগুন দেওয়া বিএনপি নেতার লক্ষ্মীপুরে খামারে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তরুণ প্রাণহানি. তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: রূপগঞ্জের ৩০০ ফিটে দিপু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে লাখো জনতার ঢল চট্টগ্রাম নগরীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান আবাসিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ফলপ্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন রূপগঞ্জ পূর্বাচল উপশহরে জনসমুদ্র,, দিপু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তারেক রহমানের সংবর্ধনায় লাখো জনতার ঢল! ঝালকাঠিতে ৫’শত টাকার বাজিতে খালে ১’শত ডুবে প্রাণ গেল কৃষকের নোয়াখালীতে মোটরসাইকেল আটক করে মিলল ৪ হাজার পিস ইয়াবা তারেক রহমানের সংবর্ধনায় আসার পথে দুর্ঘটনায় আহত ৩২ প্রতিবাদী কণ্ঠের প্রতি শ্রদ্ধা: নলছিটি লঞ্চ ঘাটের নতুন নাম শহীদ ওসমান হাদি ঝালকাঠিতে বিদেশি মদসহ প্রাইভেট কার জব্দ, ৪ জন গ্রেপ্তার নরসিংদীর পলাশে নানা আয়োজনে বড় দিন উৎযাপন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল, স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপন সাংবাদিক পরিবাবের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে টেকনাফে মানববন্ধন দল্টা রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যালাামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত পাইকগাছায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন বগুড়ায় দ্যা ব্রিলিয়ান্টস্ ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত বিজিবির বড় সাফল্য: লালমনিরহাটে বিপুল পরিমাণ জিরা ও কাপড়সহ ৩০ লাখ টাকার মাদক ও মালামাল জব্দ চরভদ্রাসনে বাল্কহেড থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে শ্রমিক নি*খোঁ*জ। তারেক রহমানের আগমন ঘিরে ৩’শ ফিটে জনস্রোত তারেক রহমানের সাথে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সৌজন্য সাক্ষাৎ লক্ষ্মীপুরে ঘরে আগুন দিয়ে শিশু হত্যা বিএনপি নেতার মামলা দায়ের টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর – ধনবাড়ী) আসনে এনসিপি’র এমপি প্রার্থী হলেন আপন সিএনজি চালককে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দিল এসআইসহ পুলিশ সদস্যরা বড়দিনে খ্রিস্টান নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌহার্দ্যপূর্ণ সাক্ষাৎ দেশের পথে তারেক রহমান: বিমানবন্দর সড়কে জনস্রোত, তীব্র যানজট মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ১৪ সংসদীয় আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন সংগ্রহ করলেন খন্দকার এম এ হেলাল( সিআইপি) রূপগঞ্জে ব্যবসায়ীর বাড়ির গ্রীল কেটে ৫০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ অর্থ চুরি হালদা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, গ্রেফতার ৬

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সাফল্য

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 07:42:43 pm, Wednesday, 5 October 2022
  • 235 বার পড়া হয়েছে

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সাফল্য

মো. ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।

উপমহাদেশে যে সকল মণিষী বিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছেন ড. মেঘনাদ সাহা তাদের মধ্যে অন্যতম । বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা অধ্যাবসায় খুবই মনোযোগী ছিলেন । এই অধ্যাবসায়ই মেঘনাদ সাহাকে তার যোগ্য আসনে পৌঁছে দিয়েছিল । রশায়ন শাস্ত্র ও পদার্থ বিজ্ঞানে মূল্যবান গবেষনার জন্য তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সংস্থা রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন । নিউক্লিয়ার ফিজিক্স তার অন্যতম কৃতিত্ব ।
বিশ্ব বরেণ্য ড. মেঘনাদ সাহার জন্ম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সেওড়াতলী গ্রামে । তাঁর পিতার নাম জগন্নাথ সাহা এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী সাহা । পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মেঘনাদ সাহা ছিলেন পঞ্চম সনÍান । জগন্নাথ সাহা পেশায় ছিলেন একজন মুদি দোকানদার । খুবই দরিদ্র পরিবারে ১৮৯৩ খ্রি. ৬ অক্টোবর মেঘনাদ সাহার জন্ম । মেঘনাদ সাহা বাল্যকাল হতে লেখাপড়ার প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলেন । জগন্নাথ সাহার অভাবের সংসারে ছিলনা ছেলেকে পড়া-লেখা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ । দরিদ্র সংসারে বিভিন্ন গৃহস্থালী সহ অন্যান্য কাজকর্মের পাশাপাশি আবার দোকানে বসতে হয় । সেই সাথে পড়া-লেখাও করতে হয়েছে । মেঘনাদ সাহা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন
মেঘনাদ সাহা ১২ বছর বয়সে সিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালায় হতে ক্লাস সিক্স (মাইনর ) পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক ৪ টাকায় বৃত্তি লাভ করেন । পিতার প্রবল আপত্তি সত্তেও ১৯০৫ খ্রি. ঢাকা কলেজিয়েট হাই স্কুলে ভর্তি হলেন । ১৬ বছর বয়সে তিনি ১৯০৯ খ্রি. এস.এস,সি (এন্ট্রান্স ) পরীক্ষায় বাংলা , ইংরেজী , অংক ও বিজ্ঞানে পূর্ব-বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন । মেঘনাদ সাহা ১৯১১ খ্রি. ঢাকা কলেজ থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে আই,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ।
মেঘনাদ সাহা ১৯১৫ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফলিত গনিতে এম,এস, সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন । ১৯১৬ খ্রি. মেঘনাদ সাহা প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ ও ফলিত গণিতে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন । অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী মেঘনাদ সাহার উপর ন্যাস্ত হলো কোয়ান্টামবাদ নিয়ে পড়াশুনা করা ।এ জন্য তাকে জার্মানী ভাষা শিখতে হলো । গবেষণায় তিনি সাফল্যের পরিচয় দিলেন । মেঘনাদ সাহা বিশ্বে আইনস্টাইনে “ থিউরি অব রিলেটিভিটি ” প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ করেন ।
ড. মেঘনাদ সাহা আপেক্ষিক তত্ত¡ গবেষণা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ চুম্বকতত্ত¡ আবিস্কার করেন । তার প্রথম গবেষণা ১৯১৭ খ্রি. “ ম্যাকওয়েল স্টীসেস ” ফিলোসফিক্যাল বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় । তিনি নভো পদার্থ বিদ্যা,ডায়নামিক্স ও ইলেকট্রনের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন । ১৯১৮ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মেঘনাদ সাহাকে “ বিদ্যুৎ,চুম্বকতত্ত¡ ও তেজসক্রিয়ায় চাপ ” এর উপর গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য “ ডি.এস.সি ” উপাধিতে ভুষিত করেন । ১৯১৯ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সম্মান ও ডিগ্রি দেওয়া হয় এবং তিনি “ প্রেম চাঁদ , রায় চাদ ও গুরু প্রসন্ন ” বৃত্তি লাভ করে লন্ডন ও বার্লিনে গবেষণার জন্য বিদেশ ভ্রমন করেন । ড. মেঘনাদ সাহা “ তপিয় অয়নতত্ত¡ ,বিকিরন ও তাপ ” আবিস্ককারের ফলে বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন । তার এই তত্ত¡ হতে সূর্য ও নক্ষত্রের পিঠে ও ভিতরে কোন জিনিস এবং কিভাবে আছে তা পাওয়া যায় । ১৯২০ খ্রী. ড. মেঘনাদ সাহার এই সব আবিস্কারের তত্ত¡ লন্ডনের ফিজিউক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ।
ড.মেঘনাদ সাহা ১৯২৩ খ্রি. কলকাতা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন । তিনি এখানে প্রায় ১৫ বছর অধ্যাপনা করেন । ড.মেঘনাদ সাহা মাত্র ৩৪ বছরে অর্থাৎ ১৯২৭ খ্রি. “ ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি ” (এফ.আর.সি) সম্মানে ভুষিত হন ।১৯৩৪ খ্রি. তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন
। ১৯৪৮ খ্রি. তিনি “ ইনষ্টিটিউট অব নিউকিøয়ার ফিজিক্স ” প্রতিষ্ঠা করেন । ড. মেঘনাদ সাহার মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “ সাহা ইনষ্টিটিউট অব নিউ ক্লিয়ার অব ফিজিক্স ” ।
ড. মেঘনাদ সাহা বিভিন্ন গবেষণা ও কর্মব্যস্ততার মাঝে থেকে দাম্পত্য জীবনেও সুখী ছিলেন । ১৯১৮ খ্রি. তিনি কলকাতায় এক সম্ব্রান্ত হিন্দু পরিবারে বিয়ে করেন । তার স্ত্রীর নাম রাধা রাণী সাহা । বিজ্ঞান তার কতটা সাধনার বিষয় ছিল সেটা বুঝা যায় তার ছেলে-মেয়েদের দেখেও । মেঘনাদ সাহার তিন পুত্র –চার কন্যার মধ্যে পাঁচ জনই ফলিত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছে । বড় পুত্র অজিত সাহা পিতার পদাংক অনুসরণ করে সাহা ইনষ্টিটিউটেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন । পিতা ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৩৪ খ্রি. ,এবং পুত্র ১৯৮০ খ্রি. উভয়ই ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন যাহা ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।
বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা “ ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর, “ ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্স কলকাতা , “ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স এলাহাবাদ , প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন । তিনি কলকাতায় সেন্ট্রোল গøাস ও সিরামিক রিচার্জ ইনষ্টিটিউটের সাথেও জড়িত ছিলেন । ১৯৫৫ খ্রি. ড. মেঘনাদ সাহা লন্ডনের হেলেক্সিতে তিন হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন এই সম্মেলনে তিনি পরমাণু হাইড্রোজেন বোমা নিস্ক্রিয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
তিনি পরমাণু বিষয় ছাড়াও সামাজিক ,অর্থনীতি ,কৃষি উন্নয়ন সব বিষয়ে তার রচনা ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ,এর সংখ্যা প্রায় দুইশত । তাঁর উল্লেখযোগ্য রচিত গ্রন্থ : ঞযব চৎরহপরঢ়ধষবং ড়ভ জবষধঃরারঃু , ঞৎবধঃরংব ড়হ ঐধঃব,ঞৎবধঃরংব ড়হ গড়ফবৎহ চযুংরপবং, ঔঁহরড়ৎ ঞবী নড়ড়শ ড়ভ ঐবধফ , ডরঃয গবঃবড়ৎড়ষড়মু . বিশ্বে বিজ্ঞানীর মধ্যে গ্যালিলিওর পরে জ্যোতির বিজ্ঞানী যত আবিস্কার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ১০ টি আবিস্কারের অন্যতম হলো ড. মেঘনাদ সাহার ঞযবড়ৎু ড়ভ ঃযবৎসধষ রড়হরুধঃরড়হ .বা “ তাপীয় আয়নন তত্ত¡ ” আবিস্কার ।
ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৫২ খ্রি. লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস বিরোধী সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলকাতার বড় বাজার আসনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন ড. মেঘনাদ সাহার কর্মময় জীবনের বেশীর ভাগ সময়েই কলকাতায় কাটান । কিন্তু দেশের জন্যও তিনি যথেষ্ট চিন্তা করেছেন । উল্লেখ্য,ড. মেঘনাদ সাহা নিজের জন্মস্থানে নারী শিক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৪০খ্রি. নিজের মায়ের নামে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বলিয়াদী এলাকায় “সেওড়াতলী ভূবনেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ” প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৫৬ খ্রী. ১৬ ফেব্রয়ারীতে দিল্লী লোকসভার অধিবেশনে যাবার পথে হঠাৎ তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং তারপর তিনি মারা যান ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ছোট মেয়ের পর বড় মেয়েও মারা গেল লক্ষ্মীপুরে ঘরে আগুন দেওয়া বিএনপি নেতার

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সাফল্য

আপডেট সময় : 07:42:43 pm, Wednesday, 5 October 2022

মো. ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।

উপমহাদেশে যে সকল মণিষী বিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছেন ড. মেঘনাদ সাহা তাদের মধ্যে অন্যতম । বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা অধ্যাবসায় খুবই মনোযোগী ছিলেন । এই অধ্যাবসায়ই মেঘনাদ সাহাকে তার যোগ্য আসনে পৌঁছে দিয়েছিল । রশায়ন শাস্ত্র ও পদার্থ বিজ্ঞানে মূল্যবান গবেষনার জন্য তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সংস্থা রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন । নিউক্লিয়ার ফিজিক্স তার অন্যতম কৃতিত্ব ।
বিশ্ব বরেণ্য ড. মেঘনাদ সাহার জন্ম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সেওড়াতলী গ্রামে । তাঁর পিতার নাম জগন্নাথ সাহা এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী সাহা । পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মেঘনাদ সাহা ছিলেন পঞ্চম সনÍান । জগন্নাথ সাহা পেশায় ছিলেন একজন মুদি দোকানদার । খুবই দরিদ্র পরিবারে ১৮৯৩ খ্রি. ৬ অক্টোবর মেঘনাদ সাহার জন্ম । মেঘনাদ সাহা বাল্যকাল হতে লেখাপড়ার প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলেন । জগন্নাথ সাহার অভাবের সংসারে ছিলনা ছেলেকে পড়া-লেখা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ । দরিদ্র সংসারে বিভিন্ন গৃহস্থালী সহ অন্যান্য কাজকর্মের পাশাপাশি আবার দোকানে বসতে হয় । সেই সাথে পড়া-লেখাও করতে হয়েছে । মেঘনাদ সাহা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন
মেঘনাদ সাহা ১২ বছর বয়সে সিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালায় হতে ক্লাস সিক্স (মাইনর ) পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক ৪ টাকায় বৃত্তি লাভ করেন । পিতার প্রবল আপত্তি সত্তেও ১৯০৫ খ্রি. ঢাকা কলেজিয়েট হাই স্কুলে ভর্তি হলেন । ১৬ বছর বয়সে তিনি ১৯০৯ খ্রি. এস.এস,সি (এন্ট্রান্স ) পরীক্ষায় বাংলা , ইংরেজী , অংক ও বিজ্ঞানে পূর্ব-বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন । মেঘনাদ সাহা ১৯১১ খ্রি. ঢাকা কলেজ থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে আই,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ।
মেঘনাদ সাহা ১৯১৫ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফলিত গনিতে এম,এস, সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন । ১৯১৬ খ্রি. মেঘনাদ সাহা প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ ও ফলিত গণিতে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন । অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী মেঘনাদ সাহার উপর ন্যাস্ত হলো কোয়ান্টামবাদ নিয়ে পড়াশুনা করা ।এ জন্য তাকে জার্মানী ভাষা শিখতে হলো । গবেষণায় তিনি সাফল্যের পরিচয় দিলেন । মেঘনাদ সাহা বিশ্বে আইনস্টাইনে “ থিউরি অব রিলেটিভিটি ” প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ করেন ।
ড. মেঘনাদ সাহা আপেক্ষিক তত্ত¡ গবেষণা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ চুম্বকতত্ত¡ আবিস্কার করেন । তার প্রথম গবেষণা ১৯১৭ খ্রি. “ ম্যাকওয়েল স্টীসেস ” ফিলোসফিক্যাল বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় । তিনি নভো পদার্থ বিদ্যা,ডায়নামিক্স ও ইলেকট্রনের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন । ১৯১৮ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মেঘনাদ সাহাকে “ বিদ্যুৎ,চুম্বকতত্ত¡ ও তেজসক্রিয়ায় চাপ ” এর উপর গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য “ ডি.এস.সি ” উপাধিতে ভুষিত করেন । ১৯১৯ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সম্মান ও ডিগ্রি দেওয়া হয় এবং তিনি “ প্রেম চাঁদ , রায় চাদ ও গুরু প্রসন্ন ” বৃত্তি লাভ করে লন্ডন ও বার্লিনে গবেষণার জন্য বিদেশ ভ্রমন করেন । ড. মেঘনাদ সাহা “ তপিয় অয়নতত্ত¡ ,বিকিরন ও তাপ ” আবিস্ককারের ফলে বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন । তার এই তত্ত¡ হতে সূর্য ও নক্ষত্রের পিঠে ও ভিতরে কোন জিনিস এবং কিভাবে আছে তা পাওয়া যায় । ১৯২০ খ্রী. ড. মেঘনাদ সাহার এই সব আবিস্কারের তত্ত¡ লন্ডনের ফিজিউক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ।
ড.মেঘনাদ সাহা ১৯২৩ খ্রি. কলকাতা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন । তিনি এখানে প্রায় ১৫ বছর অধ্যাপনা করেন । ড.মেঘনাদ সাহা মাত্র ৩৪ বছরে অর্থাৎ ১৯২৭ খ্রি. “ ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি ” (এফ.আর.সি) সম্মানে ভুষিত হন ।১৯৩৪ খ্রি. তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন
। ১৯৪৮ খ্রি. তিনি “ ইনষ্টিটিউট অব নিউকিøয়ার ফিজিক্স ” প্রতিষ্ঠা করেন । ড. মেঘনাদ সাহার মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “ সাহা ইনষ্টিটিউট অব নিউ ক্লিয়ার অব ফিজিক্স ” ।
ড. মেঘনাদ সাহা বিভিন্ন গবেষণা ও কর্মব্যস্ততার মাঝে থেকে দাম্পত্য জীবনেও সুখী ছিলেন । ১৯১৮ খ্রি. তিনি কলকাতায় এক সম্ব্রান্ত হিন্দু পরিবারে বিয়ে করেন । তার স্ত্রীর নাম রাধা রাণী সাহা । বিজ্ঞান তার কতটা সাধনার বিষয় ছিল সেটা বুঝা যায় তার ছেলে-মেয়েদের দেখেও । মেঘনাদ সাহার তিন পুত্র –চার কন্যার মধ্যে পাঁচ জনই ফলিত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছে । বড় পুত্র অজিত সাহা পিতার পদাংক অনুসরণ করে সাহা ইনষ্টিটিউটেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন । পিতা ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৩৪ খ্রি. ,এবং পুত্র ১৯৮০ খ্রি. উভয়ই ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন যাহা ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।
বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা “ ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর, “ ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্স কলকাতা , “ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স এলাহাবাদ , প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন । তিনি কলকাতায় সেন্ট্রোল গøাস ও সিরামিক রিচার্জ ইনষ্টিটিউটের সাথেও জড়িত ছিলেন । ১৯৫৫ খ্রি. ড. মেঘনাদ সাহা লন্ডনের হেলেক্সিতে তিন হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন এই সম্মেলনে তিনি পরমাণু হাইড্রোজেন বোমা নিস্ক্রিয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
তিনি পরমাণু বিষয় ছাড়াও সামাজিক ,অর্থনীতি ,কৃষি উন্নয়ন সব বিষয়ে তার রচনা ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ,এর সংখ্যা প্রায় দুইশত । তাঁর উল্লেখযোগ্য রচিত গ্রন্থ : ঞযব চৎরহপরঢ়ধষবং ড়ভ জবষধঃরারঃু , ঞৎবধঃরংব ড়হ ঐধঃব,ঞৎবধঃরংব ড়হ গড়ফবৎহ চযুংরপবং, ঔঁহরড়ৎ ঞবী নড়ড়শ ড়ভ ঐবধফ , ডরঃয গবঃবড়ৎড়ষড়মু . বিশ্বে বিজ্ঞানীর মধ্যে গ্যালিলিওর পরে জ্যোতির বিজ্ঞানী যত আবিস্কার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ১০ টি আবিস্কারের অন্যতম হলো ড. মেঘনাদ সাহার ঞযবড়ৎু ড়ভ ঃযবৎসধষ রড়হরুধঃরড়হ .বা “ তাপীয় আয়নন তত্ত¡ ” আবিস্কার ।
ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৫২ খ্রি. লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস বিরোধী সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলকাতার বড় বাজার আসনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন ড. মেঘনাদ সাহার কর্মময় জীবনের বেশীর ভাগ সময়েই কলকাতায় কাটান । কিন্তু দেশের জন্যও তিনি যথেষ্ট চিন্তা করেছেন । উল্লেখ্য,ড. মেঘনাদ সাহা নিজের জন্মস্থানে নারী শিক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৪০খ্রি. নিজের মায়ের নামে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বলিয়াদী এলাকায় “সেওড়াতলী ভূবনেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ” প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৫৬ খ্রী. ১৬ ফেব্রয়ারীতে দিল্লী লোকসভার অধিবেশনে যাবার পথে হঠাৎ তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং তারপর তিনি মারা যান ।