Dhaka , Sunday, 23 November 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
সিএমইউজে’র নতুন সদস্যদের বরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন পাইকগাছায় বিএনপির সেন্টার কমিটি বিষয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কালিয়াকৈরে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত দুর্গাপুরে জনদুর্ভোগ লাঘবে সোমেশ্বরী নদীতে কাঠের সেতু করে দিলেন – ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ধর্মের দোহাই দিয়ে টিকেট বিক্রি করে কাজ হবেনা: তানিয়া রব বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সাবেক ছাত্রদল সভাপতির মৃত্যু লক্ষ্মীপুরে উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্বোধন মধুপুরে টাঙ্গাইল- ১ আসনে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে গণমিছিল সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক ধর্ম ব্যতীত শিক্ষায় মানুষ বিপদগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে:- ধর্ম উপদেষ্টা পাইকগাছায় পাখি সুরক্ষায় মাঠসভা ও ৪০টি পাখির বাসা স্থাপন আওয়ামী লীগের আমলে যারা টাকা লুটপাট করছে এই মানুষগুলিও শিক্ষিত ছিল- -নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনাসভা বর্জন করলো ইবি ছাত্রদল বিজিবি’র মাদকবিরোধী সাড়াশি অভিযান: সীমান্তে গাঁজা ও ইস্কাফ সিরাপসহ ১ মাদক কারবারী গ্রেফতার সেন্টমার্টিনের আব্দুল গণির জালে ধরা পড়লো ৩২ কেজির পোপা মাছ ভূমিকম্পে নরসিংদী হারিয়ে গেল শিশু সহ পাঁচ জীবন, আহত শতাধিক ডেমরায় সাংবাদিকদের সাথে জামায়াতে ইসলামীর মত মতবিনিময় সভা রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগকে আর স্থান দেওয়া হবে না: ইশরাক হোসেন গৌরবময় পথচলার ৪৭ বছর: বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইবি দিবস উদযাপন হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনালের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে উদ্বোধন ও অভিষেক উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত রামুতে ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ প্রাইভেট কার নিয়ে চালক আটক নরসিংদীতে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার বাবা–ছেলের মৃত্যু। অর্জন, প্রাপ্তি ও প্রশ্নে ইবির ৪৭ তম বছরে পদার্পণ  পাইকগাছায় পাখির জন্য বাঁধা মাটির পাত্রে- এবার কাঠবিড়ালির বাসা ফতুল্লা থানা বিএনপি’র গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ নারায়ণগঞ্জে ধানের শীষের পক্ষে বিশাল গণসমাবেশ রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেওয়াল ধসে শিশুর মৃত্যু ॥ আহত ৩ কিশোরগঞ্জের যানজট সমস্যা সমাধান কোথায় হাটহাজারিতে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট,২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড। বেগমগঞ্জে আপন ভাইয়ের দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার রাইসা পোল্ট্রি এন্ড এগ্রো ফার্ম ও তার মালিক

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সাফল্য

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 07:42:43 pm, Wednesday, 5 October 2022
  • 229 বার পড়া হয়েছে

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সাফল্য

মো. ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।

উপমহাদেশে যে সকল মণিষী বিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছেন ড. মেঘনাদ সাহা তাদের মধ্যে অন্যতম । বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা অধ্যাবসায় খুবই মনোযোগী ছিলেন । এই অধ্যাবসায়ই মেঘনাদ সাহাকে তার যোগ্য আসনে পৌঁছে দিয়েছিল । রশায়ন শাস্ত্র ও পদার্থ বিজ্ঞানে মূল্যবান গবেষনার জন্য তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সংস্থা রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন । নিউক্লিয়ার ফিজিক্স তার অন্যতম কৃতিত্ব ।
বিশ্ব বরেণ্য ড. মেঘনাদ সাহার জন্ম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সেওড়াতলী গ্রামে । তাঁর পিতার নাম জগন্নাথ সাহা এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী সাহা । পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মেঘনাদ সাহা ছিলেন পঞ্চম সনÍান । জগন্নাথ সাহা পেশায় ছিলেন একজন মুদি দোকানদার । খুবই দরিদ্র পরিবারে ১৮৯৩ খ্রি. ৬ অক্টোবর মেঘনাদ সাহার জন্ম । মেঘনাদ সাহা বাল্যকাল হতে লেখাপড়ার প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলেন । জগন্নাথ সাহার অভাবের সংসারে ছিলনা ছেলেকে পড়া-লেখা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ । দরিদ্র সংসারে বিভিন্ন গৃহস্থালী সহ অন্যান্য কাজকর্মের পাশাপাশি আবার দোকানে বসতে হয় । সেই সাথে পড়া-লেখাও করতে হয়েছে । মেঘনাদ সাহা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন
মেঘনাদ সাহা ১২ বছর বয়সে সিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালায় হতে ক্লাস সিক্স (মাইনর ) পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক ৪ টাকায় বৃত্তি লাভ করেন । পিতার প্রবল আপত্তি সত্তেও ১৯০৫ খ্রি. ঢাকা কলেজিয়েট হাই স্কুলে ভর্তি হলেন । ১৬ বছর বয়সে তিনি ১৯০৯ খ্রি. এস.এস,সি (এন্ট্রান্স ) পরীক্ষায় বাংলা , ইংরেজী , অংক ও বিজ্ঞানে পূর্ব-বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন । মেঘনাদ সাহা ১৯১১ খ্রি. ঢাকা কলেজ থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে আই,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ।
মেঘনাদ সাহা ১৯১৫ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফলিত গনিতে এম,এস, সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন । ১৯১৬ খ্রি. মেঘনাদ সাহা প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ ও ফলিত গণিতে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন । অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী মেঘনাদ সাহার উপর ন্যাস্ত হলো কোয়ান্টামবাদ নিয়ে পড়াশুনা করা ।এ জন্য তাকে জার্মানী ভাষা শিখতে হলো । গবেষণায় তিনি সাফল্যের পরিচয় দিলেন । মেঘনাদ সাহা বিশ্বে আইনস্টাইনে “ থিউরি অব রিলেটিভিটি ” প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ করেন ।
ড. মেঘনাদ সাহা আপেক্ষিক তত্ত¡ গবেষণা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ চুম্বকতত্ত¡ আবিস্কার করেন । তার প্রথম গবেষণা ১৯১৭ খ্রি. “ ম্যাকওয়েল স্টীসেস ” ফিলোসফিক্যাল বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় । তিনি নভো পদার্থ বিদ্যা,ডায়নামিক্স ও ইলেকট্রনের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন । ১৯১৮ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মেঘনাদ সাহাকে “ বিদ্যুৎ,চুম্বকতত্ত¡ ও তেজসক্রিয়ায় চাপ ” এর উপর গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য “ ডি.এস.সি ” উপাধিতে ভুষিত করেন । ১৯১৯ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সম্মান ও ডিগ্রি দেওয়া হয় এবং তিনি “ প্রেম চাঁদ , রায় চাদ ও গুরু প্রসন্ন ” বৃত্তি লাভ করে লন্ডন ও বার্লিনে গবেষণার জন্য বিদেশ ভ্রমন করেন । ড. মেঘনাদ সাহা “ তপিয় অয়নতত্ত¡ ,বিকিরন ও তাপ ” আবিস্ককারের ফলে বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন । তার এই তত্ত¡ হতে সূর্য ও নক্ষত্রের পিঠে ও ভিতরে কোন জিনিস এবং কিভাবে আছে তা পাওয়া যায় । ১৯২০ খ্রী. ড. মেঘনাদ সাহার এই সব আবিস্কারের তত্ত¡ লন্ডনের ফিজিউক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ।
ড.মেঘনাদ সাহা ১৯২৩ খ্রি. কলকাতা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন । তিনি এখানে প্রায় ১৫ বছর অধ্যাপনা করেন । ড.মেঘনাদ সাহা মাত্র ৩৪ বছরে অর্থাৎ ১৯২৭ খ্রি. “ ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি ” (এফ.আর.সি) সম্মানে ভুষিত হন ।১৯৩৪ খ্রি. তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন
। ১৯৪৮ খ্রি. তিনি “ ইনষ্টিটিউট অব নিউকিøয়ার ফিজিক্স ” প্রতিষ্ঠা করেন । ড. মেঘনাদ সাহার মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “ সাহা ইনষ্টিটিউট অব নিউ ক্লিয়ার অব ফিজিক্স ” ।
ড. মেঘনাদ সাহা বিভিন্ন গবেষণা ও কর্মব্যস্ততার মাঝে থেকে দাম্পত্য জীবনেও সুখী ছিলেন । ১৯১৮ খ্রি. তিনি কলকাতায় এক সম্ব্রান্ত হিন্দু পরিবারে বিয়ে করেন । তার স্ত্রীর নাম রাধা রাণী সাহা । বিজ্ঞান তার কতটা সাধনার বিষয় ছিল সেটা বুঝা যায় তার ছেলে-মেয়েদের দেখেও । মেঘনাদ সাহার তিন পুত্র –চার কন্যার মধ্যে পাঁচ জনই ফলিত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছে । বড় পুত্র অজিত সাহা পিতার পদাংক অনুসরণ করে সাহা ইনষ্টিটিউটেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন । পিতা ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৩৪ খ্রি. ,এবং পুত্র ১৯৮০ খ্রি. উভয়ই ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন যাহা ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।
বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা “ ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর, “ ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্স কলকাতা , “ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স এলাহাবাদ , প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন । তিনি কলকাতায় সেন্ট্রোল গøাস ও সিরামিক রিচার্জ ইনষ্টিটিউটের সাথেও জড়িত ছিলেন । ১৯৫৫ খ্রি. ড. মেঘনাদ সাহা লন্ডনের হেলেক্সিতে তিন হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন এই সম্মেলনে তিনি পরমাণু হাইড্রোজেন বোমা নিস্ক্রিয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
তিনি পরমাণু বিষয় ছাড়াও সামাজিক ,অর্থনীতি ,কৃষি উন্নয়ন সব বিষয়ে তার রচনা ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ,এর সংখ্যা প্রায় দুইশত । তাঁর উল্লেখযোগ্য রচিত গ্রন্থ : ঞযব চৎরহপরঢ়ধষবং ড়ভ জবষধঃরারঃু , ঞৎবধঃরংব ড়হ ঐধঃব,ঞৎবধঃরংব ড়হ গড়ফবৎহ চযুংরপবং, ঔঁহরড়ৎ ঞবী নড়ড়শ ড়ভ ঐবধফ , ডরঃয গবঃবড়ৎড়ষড়মু . বিশ্বে বিজ্ঞানীর মধ্যে গ্যালিলিওর পরে জ্যোতির বিজ্ঞানী যত আবিস্কার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ১০ টি আবিস্কারের অন্যতম হলো ড. মেঘনাদ সাহার ঞযবড়ৎু ড়ভ ঃযবৎসধষ রড়হরুধঃরড়হ .বা “ তাপীয় আয়নন তত্ত¡ ” আবিস্কার ।
ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৫২ খ্রি. লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস বিরোধী সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলকাতার বড় বাজার আসনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন ড. মেঘনাদ সাহার কর্মময় জীবনের বেশীর ভাগ সময়েই কলকাতায় কাটান । কিন্তু দেশের জন্যও তিনি যথেষ্ট চিন্তা করেছেন । উল্লেখ্য,ড. মেঘনাদ সাহা নিজের জন্মস্থানে নারী শিক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৪০খ্রি. নিজের মায়ের নামে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বলিয়াদী এলাকায় “সেওড়াতলী ভূবনেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ” প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৫৬ খ্রী. ১৬ ফেব্রয়ারীতে দিল্লী লোকসভার অধিবেশনে যাবার পথে হঠাৎ তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং তারপর তিনি মারা যান ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সিএমইউজে’র নতুন সদস্যদের বরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সাফল্য

আপডেট সময় : 07:42:43 pm, Wednesday, 5 October 2022

মো. ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।

উপমহাদেশে যে সকল মণিষী বিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছেন ড. মেঘনাদ সাহা তাদের মধ্যে অন্যতম । বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা অধ্যাবসায় খুবই মনোযোগী ছিলেন । এই অধ্যাবসায়ই মেঘনাদ সাহাকে তার যোগ্য আসনে পৌঁছে দিয়েছিল । রশায়ন শাস্ত্র ও পদার্থ বিজ্ঞানে মূল্যবান গবেষনার জন্য তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সংস্থা রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন । নিউক্লিয়ার ফিজিক্স তার অন্যতম কৃতিত্ব ।
বিশ্ব বরেণ্য ড. মেঘনাদ সাহার জন্ম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সেওড়াতলী গ্রামে । তাঁর পিতার নাম জগন্নাথ সাহা এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী সাহা । পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মেঘনাদ সাহা ছিলেন পঞ্চম সনÍান । জগন্নাথ সাহা পেশায় ছিলেন একজন মুদি দোকানদার । খুবই দরিদ্র পরিবারে ১৮৯৩ খ্রি. ৬ অক্টোবর মেঘনাদ সাহার জন্ম । মেঘনাদ সাহা বাল্যকাল হতে লেখাপড়ার প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলেন । জগন্নাথ সাহার অভাবের সংসারে ছিলনা ছেলেকে পড়া-লেখা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ । দরিদ্র সংসারে বিভিন্ন গৃহস্থালী সহ অন্যান্য কাজকর্মের পাশাপাশি আবার দোকানে বসতে হয় । সেই সাথে পড়া-লেখাও করতে হয়েছে । মেঘনাদ সাহা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন
মেঘনাদ সাহা ১২ বছর বয়সে সিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালায় হতে ক্লাস সিক্স (মাইনর ) পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক ৪ টাকায় বৃত্তি লাভ করেন । পিতার প্রবল আপত্তি সত্তেও ১৯০৫ খ্রি. ঢাকা কলেজিয়েট হাই স্কুলে ভর্তি হলেন । ১৬ বছর বয়সে তিনি ১৯০৯ খ্রি. এস.এস,সি (এন্ট্রান্স ) পরীক্ষায় বাংলা , ইংরেজী , অংক ও বিজ্ঞানে পূর্ব-বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন । মেঘনাদ সাহা ১৯১১ খ্রি. ঢাকা কলেজ থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে আই,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ।
মেঘনাদ সাহা ১৯১৫ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফলিত গনিতে এম,এস, সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন । ১৯১৬ খ্রি. মেঘনাদ সাহা প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ ও ফলিত গণিতে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন । অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী মেঘনাদ সাহার উপর ন্যাস্ত হলো কোয়ান্টামবাদ নিয়ে পড়াশুনা করা ।এ জন্য তাকে জার্মানী ভাষা শিখতে হলো । গবেষণায় তিনি সাফল্যের পরিচয় দিলেন । মেঘনাদ সাহা বিশ্বে আইনস্টাইনে “ থিউরি অব রিলেটিভিটি ” প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ করেন ।
ড. মেঘনাদ সাহা আপেক্ষিক তত্ত¡ গবেষণা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ চুম্বকতত্ত¡ আবিস্কার করেন । তার প্রথম গবেষণা ১৯১৭ খ্রি. “ ম্যাকওয়েল স্টীসেস ” ফিলোসফিক্যাল বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় । তিনি নভো পদার্থ বিদ্যা,ডায়নামিক্স ও ইলেকট্রনের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন । ১৯১৮ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মেঘনাদ সাহাকে “ বিদ্যুৎ,চুম্বকতত্ত¡ ও তেজসক্রিয়ায় চাপ ” এর উপর গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য “ ডি.এস.সি ” উপাধিতে ভুষিত করেন । ১৯১৯ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সম্মান ও ডিগ্রি দেওয়া হয় এবং তিনি “ প্রেম চাঁদ , রায় চাদ ও গুরু প্রসন্ন ” বৃত্তি লাভ করে লন্ডন ও বার্লিনে গবেষণার জন্য বিদেশ ভ্রমন করেন । ড. মেঘনাদ সাহা “ তপিয় অয়নতত্ত¡ ,বিকিরন ও তাপ ” আবিস্ককারের ফলে বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন । তার এই তত্ত¡ হতে সূর্য ও নক্ষত্রের পিঠে ও ভিতরে কোন জিনিস এবং কিভাবে আছে তা পাওয়া যায় । ১৯২০ খ্রী. ড. মেঘনাদ সাহার এই সব আবিস্কারের তত্ত¡ লন্ডনের ফিজিউক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ।
ড.মেঘনাদ সাহা ১৯২৩ খ্রি. কলকাতা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন । তিনি এখানে প্রায় ১৫ বছর অধ্যাপনা করেন । ড.মেঘনাদ সাহা মাত্র ৩৪ বছরে অর্থাৎ ১৯২৭ খ্রি. “ ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি ” (এফ.আর.সি) সম্মানে ভুষিত হন ।১৯৩৪ খ্রি. তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন
। ১৯৪৮ খ্রি. তিনি “ ইনষ্টিটিউট অব নিউকিøয়ার ফিজিক্স ” প্রতিষ্ঠা করেন । ড. মেঘনাদ সাহার মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “ সাহা ইনষ্টিটিউট অব নিউ ক্লিয়ার অব ফিজিক্স ” ।
ড. মেঘনাদ সাহা বিভিন্ন গবেষণা ও কর্মব্যস্ততার মাঝে থেকে দাম্পত্য জীবনেও সুখী ছিলেন । ১৯১৮ খ্রি. তিনি কলকাতায় এক সম্ব্রান্ত হিন্দু পরিবারে বিয়ে করেন । তার স্ত্রীর নাম রাধা রাণী সাহা । বিজ্ঞান তার কতটা সাধনার বিষয় ছিল সেটা বুঝা যায় তার ছেলে-মেয়েদের দেখেও । মেঘনাদ সাহার তিন পুত্র –চার কন্যার মধ্যে পাঁচ জনই ফলিত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছে । বড় পুত্র অজিত সাহা পিতার পদাংক অনুসরণ করে সাহা ইনষ্টিটিউটেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন । পিতা ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৩৪ খ্রি. ,এবং পুত্র ১৯৮০ খ্রি. উভয়ই ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন যাহা ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।
বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা “ ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর, “ ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্স কলকাতা , “ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স এলাহাবাদ , প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন । তিনি কলকাতায় সেন্ট্রোল গøাস ও সিরামিক রিচার্জ ইনষ্টিটিউটের সাথেও জড়িত ছিলেন । ১৯৫৫ খ্রি. ড. মেঘনাদ সাহা লন্ডনের হেলেক্সিতে তিন হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন এই সম্মেলনে তিনি পরমাণু হাইড্রোজেন বোমা নিস্ক্রিয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
তিনি পরমাণু বিষয় ছাড়াও সামাজিক ,অর্থনীতি ,কৃষি উন্নয়ন সব বিষয়ে তার রচনা ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ,এর সংখ্যা প্রায় দুইশত । তাঁর উল্লেখযোগ্য রচিত গ্রন্থ : ঞযব চৎরহপরঢ়ধষবং ড়ভ জবষধঃরারঃু , ঞৎবধঃরংব ড়হ ঐধঃব,ঞৎবধঃরংব ড়হ গড়ফবৎহ চযুংরপবং, ঔঁহরড়ৎ ঞবী নড়ড়শ ড়ভ ঐবধফ , ডরঃয গবঃবড়ৎড়ষড়মু . বিশ্বে বিজ্ঞানীর মধ্যে গ্যালিলিওর পরে জ্যোতির বিজ্ঞানী যত আবিস্কার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ১০ টি আবিস্কারের অন্যতম হলো ড. মেঘনাদ সাহার ঞযবড়ৎু ড়ভ ঃযবৎসধষ রড়হরুধঃরড়হ .বা “ তাপীয় আয়নন তত্ত¡ ” আবিস্কার ।
ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৫২ খ্রি. লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস বিরোধী সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলকাতার বড় বাজার আসনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন ড. মেঘনাদ সাহার কর্মময় জীবনের বেশীর ভাগ সময়েই কলকাতায় কাটান । কিন্তু দেশের জন্যও তিনি যথেষ্ট চিন্তা করেছেন । উল্লেখ্য,ড. মেঘনাদ সাহা নিজের জন্মস্থানে নারী শিক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৪০খ্রি. নিজের মায়ের নামে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বলিয়াদী এলাকায় “সেওড়াতলী ভূবনেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ” প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৫৬ খ্রী. ১৬ ফেব্রয়ারীতে দিল্লী লোকসভার অধিবেশনে যাবার পথে হঠাৎ তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং তারপর তিনি মারা যান ।