তিতাস -কুমিল্লা- প্রতিনিধি।।
মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে যেনো এবার বন্যা রূপে দেখা দিলো -রাক্ষুসী গোমতী । বন্যার পানি গোমতীর বিপদ সিমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে “সিদ্দেস্বরি রেগুলেটর গোমতি বেড়ীবাঁধ ।ইতোমধ্যেই গোমতীর ভয়াবহ থাবায় কুমিল্লার তিতাসের ৬০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীর বুকে বিলীন হয়ে গেছে। এসব অঞ্চলে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প গ্রহণের জন্য বহুবার আশ্বাস দিলে গত দেড় যুগে কোন কর্যত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।সরজমিনে গেলে দেখা যায়- নারান্দিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও পূর্বপাড়ের নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ী ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে ৬০টি পরিবার। এছাড়াও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মসজিদ- বৈদ্যুতিক খুটি- হাঁস-মুরগির খামার- অর্ধশতাধিক মাছের খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর তীরবর্তী শত শত পরিবার নদী ভাঙনের আতঙ্কে খোলা আকাশের নীচে রাত জেগে ভাগাভাগি করে পাহারা দিচ্ছেন নারী-পুরুষ।এছাড়াও প্রতিবছর অসংখ্য বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
দিশেহারা হয়ে পড়েছে এখানকার পরিবারগুলো।প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বর্ষার শুরুতে টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গোমতীতে ক্রমশই বাড়ছে স্রোতের গতি। আর স্রোতের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষের স্বপ্নের নীড়গুলো। সর্বক্ষণ ভাঙন আতংকে- অনিদ্রা- অনাহারে প্রহর গুনছেন সহায়- সম্বলহীন মানুষগুলো। ভাঙন থেকে রেহায় পেতে সর্ব মহলের সহায়তা চেয়ে মানববন্ধনও করেছে এখানকার সুশিল সমাজ ও ভুক্তভোগি পরিবারগুলো।স্থানীয়রা জানান- প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবৎ আমরা এই ভাঙ্গা ও গড়ার খেলায় প্রতিদিন হেরে যাচ্ছি। আমরা আর পারছিনা-আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। গত ৫০ বছরে ভাঙনের এই তাণ্ডবে পড়ে হাজারো পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। আমরা আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে অন্যত্র যেতে পারছি না। আমরা দেশবাসীর সহায়তায় বাঁচতে চাই।নারান্দিয়া পুর্বপাড়ের সমাজসেবক গোলাম মহিউদ্দিন জিলানী বলেন- আমাদের এই অঞ্চলে দীর্ঘ ৩০বছরে ভাঙন শুরু হয়। গত ৬- ৭বছরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ও ব্লক এলেও সঠিক জায়গায় স্থাপন হয়নি। তাই নারান্দিয়া গ্রামকে বাঁচাতে হলে দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়া সাবেক মেম্বার মফিজুল ইসলাম বলেন-আমাদের নারান্দিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া এলাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা-বাড়িঘর-প্রাইমারি স্কুলসহ গোমতীর নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক মৎসপ্রকল্প। এমতাবস্থায় মসজিদ-মাদ্রাসা এবং নারান্দিয়া বেড়িবাঁধসহ যেসব ভিটে মাটি এখনো সুরক্ষিত আছে সেগুলো রক্ষার্থে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টকে অনুরোধ করবো। যেনো দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।এ ব্যাপারে তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিন বলেন, আমরা সর্বদাই তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাছাড়া তাদের ঘরে ঘরে ত্রাণ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের লিস্ট করেছি সরকারি বরাদ্দ এলে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব এবং তাদের থাকার ব্যাপারে কোন সমস্যা হলে তাদের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলো খোলা আছে। সেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবে।