মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ
সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার।।
ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ চলার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে। তবে মজুরি বৃদ্ধির দাবি তুলে কিছু কারখানার শ্রমিকরা নতুন করে অসন্তোষ সৃষ্টির পায়তারা করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও ৪টি কারখানা সাধারন ছুটি ঘোষণা করেছেন মালিকপক্ষ।
রবিবার -২২ সেপ্টেম্বর- বিকালে প্রতদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
এদিকে সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে- কারখানার অভ্যন্তরে নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে ‘পঁচিশ- পঁচিশ’ বলে স্লোগানও দিয়েছেন। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। এঘটনায় আশপাশের খোলা রাখা কারখানাগুলোর সামনে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের পর শনিবার পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আজ -রবিবার- সকাল থেকে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এছাড়া ১৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও ৪টি কারখানা সাধারন ছুটি ছিল। ডেকো গার্মেন্টস- এনভয় গার্মেন্টস- সেতারাসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এসময় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ৪টি কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারন ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলেও পুলিশ ও যৌথ বাহিনী তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেন।
এদিকে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা কমিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি সম্পৃক্ত করা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের। শ্রমিক ও শিল্প রক্ষায় শ্রমিকদের সচেতন করতে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতারা। আজ সকালে ঢাকা-১৯-(সাভার-আশুলিয়া-আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুর নেতৃত্বে দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা বিভিন্ন কারখানা ঘুরে কথা বলেন শ্রমিকদের সঙ্গে। শোনেন তাদের নানা অভিযোগ। মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে মীমাংসার মাধ্যমে সমঝোতার কথা বলেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন-জামগড়া থেকে জিরাবোর দিকে ডেকো গার্মেন্টস- ভার্চুয়াল- ইউফোরিয়াসহ কিছু ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। অনেক ফ্যাক্টরিতেই ছুটি ঘোষণা করেছে- শ্রমিকরা রাস্তাতেও আসার চেষ্টা করছে। কোনও কোনও ফ্যাক্টরির ভিতরে শ্রমিকদের সাথে মারামারিও হয়েছে। তবে শুনেছি বেতন ২৫ হাজার টাকার দাবি করছে শ্রমিকরা। আবার কেউ কেউ ২৫ পারসেন্ট ইনক্রিমেন্টের দাবিও তুলছে।
তিনি আরও বলেন- এই শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যেও পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টসের ৭৫ জন শ্রমিককে অসন্তোষ সৃষ্টির অভিযোগে বৃহস্পতিবার টারমিনেশন- চাকরি থেকে অব্যাহতি- করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বন্ধ কারখানাগুলো নিয়েই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে অন্যান্য কারখানা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় মাসকট গার্মেন্টসের মূল ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ নিয়ে উত্তেজনার রেশ ধরে সংঘর্ষে মারা যান কারখানার সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর রোকেয়া বেগম।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন- নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবি তুলে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। শিল্পাঞ্চলে আজও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ -১- ধারায় কমফিট কম্পোজিট লিমিটেড- নাসা সুপার কমপ্লেক্স লিমিটেড- সেতারা গ্রুপ- শিন শিন অ্যাপারেল্স লিমিটেড- জেনারেশন নেক্সট- ভিনটেজ গার্মেন্টস লিমিটেড- আঞ্জুমান ডিজাইনার্স লিমিটেডসহ ১৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল এবং ৪টি কারখানায় সাধারণ ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।