তৌহিদ বেলাল
কক্সবাজার অফিস।।
পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের কলাতলি সড়কের হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় অসহায় পরিবারের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি জবরদখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। দুর্ধর্ষ জালিয়াত এই চক্রটি মালিকপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রকৃত ওয়ারিশদের বঞ্চিত করতে নানা অপকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী মালিকপক্ষ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আর এতে করে সমাধানের আশায় বুক বেঁধেছেন ভুক্তভোগী রবিউল। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার মধ্যম বাহারছড়ার মৃত আবুল কাশেমের পুত্র। বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কলাতলির আদর্শ গ্রামে বসবাস করেন তিনি।
দায়ের করা ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- কক্সবাজার পৌরসভার ঝিলংজা মৌজার বন্দোবস্তি মামলা নং ২১২- ১৯৪৫-৪৬ মূলে বন্দোবস্তি খতিয়ান নং ১২২৪- ২৯২ এর ১.৫০ একর জায়গার মালিক হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের মধ্যম বাহারছড়ার আবুল কাশেম ও তার অন্য ভাইবোন। আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর তার ছেলেমেয়েরা ওই জমি থেকে আনুপাতিকহারে প্রায় ৬ গণ্ডা জায়গার মালিক হন। মালিকপক্ষের দাবি, বর্তমানে ওই জমির বাজারমূল্য প্রায় একশো কোটি টাকা। এখান থেকে রবিউল পাবেন ০.০১৯২ শতক জমি।
ওয়ারিশদের দাবি- আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর তাদের অংশের জমি চাচা গিয়াসউদ্দিন জালিয়াতির মাধ্যমে জবরদখল ও অন্যত্র বিক্রির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন। এ লক্ষে তিনি বিভিন্ন জাল দলিলও বানিয়েছেন।
আবুল কাশেমের ছেলে রবিউল জানান- তার চাচা গিয়াসউদ্দিন বিভিন্ন জাল দলিল তৈরি করে তাদের অংশসহ পুরো জমিটা ভোগদখলের জোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য গিয়াসউদ্দিন বিভিন্ন সন্ত্রাসী ভাড়া ও গণপূর্ত অধিদফতরকে ব্যবহার করে পুরো জমি গ্রাস করার নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া গিয়াসউদ্দিনের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা তাদের নিকট থেকে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে বলেও অভিযোগ তাদের। তা না হলে ওই জমিতে রবিউলদের প্রবেশ করতে দেবেনা বলেও প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
জানা যায়- বিরোধীয় জমিটির বিষয়ে রয়েছে হাইকোর্টের সিভিল রিভিশন মামলা ৫৫৭-২০১৯ ও ১৬১৮-২০১৮- যেটি আদার স্যুট ১৪৭-২০১১ হতে উদ্ভূত হয়েছে। উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর ওই জমির প্রকৃত মালিক রবিউলদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।
রবিউলের দাবি- তারা নির্মাণকাজ করতে গেলে তাদের চাচা গিয়াসউদ্দিন ও তার ছেলেরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অস্ত্রধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদের অপহরণ- খুন- গুমসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে ও নানানভাবে হয়রানি করে আসছে।
জানা যায়- নিজেদের পৈত্রিক জমি থেকে উচ্ছেদ ও জবরদখল বিষয়ে আইনি প্রতিকার ও নিজেদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা চেয়ে রবিউল গেল ৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই বিষয়ে তিনি ইতোপূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটও লিখিত অভিযোগ দেন।
জানা গেছে- ওই অভিযোগের ভিত্তিতে গেল ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখার সহকারী কমিশনার মুনমুন পাল স্বাক্ষরিত এক আদেশে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারকে -ভূমি- অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেন।
জানা যায়- নিজেদের ওই জমির নামজারি করতে মালিক রবিউল গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে নামজারির আবেদন ফি জমা দেন। আবেদনের সঙ্গে তিনি মালিকানার সপক্ষে সকল কাগজপত্র দাখিল করেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, নালিশি ওই জমির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট -এডিএম- আদালতে এমআর মামলা ২০২০-২০২২ দায়ের করা হলেও তাতে গিয়াসউদ্দিন হাজির হননি। এছাড়া সরেজমিনে তদন্ত করে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার -ভূমি- ‘র নিকট থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। কিন্তু চাচা গিয়াসউদ্দিন টাকার জোরে ওই তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে করে নিয়েছেন বলে দাবি রবিউলদের। ফলে এসিল্যান্ডের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এডিএম কোর্টে নারাজি আবেদন জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী রবিউলের দাবি- তাদের চাচা গিয়াসউদ্দিন মোটা অংকের বিনিময়ে আদালতে তার পক্ষের আইনজীবী ও সহকারীদের বশে নিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও প্রতারণা করছেন।
রবিউল বলেন- ইতোপূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে আদেশ দেন’।
এবিষয়ে অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন বলেন- ‘আমার পিতার ৬ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের সকলেই ওই জমি দলিলমূলে হস্তান্তর করে ফেলেছে। সুতরাং এখন আমরা কেউ আর জমিটির মালিক নই।