আরিফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক।।
এখনো স্বাভাবিক হয়নি বরিশাল তথা বাংলাদেশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়া ট্রাফিক পুলিশও দেখা যায়নি বরিশাল নগরীর কোথাও। সাধারণ মানুষের দাবী সন্ধ্যার পর কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়না সড়কে। আর ট্রাফিক সদস্যরা বলছেন- কি দাঁড়াবো ভাই? কেউই তো কথা শোনেনা। উল্টো বলে আপনার কাজ করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরই ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানালেন ট্রাফিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এদিকে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার করে এ নিয়ে জরুরী বৈঠক করা হবে বলে জানালেন বরিশালের সমন্বয়করা।
সরজমিনে বরিশালের আমতলা মোড়- বাংলা বাজার তিনমাথা, জেলা স্কুল ও বাঁধ রোড এলাকার ব্যস্ত মোড়গুলোতে কোনো ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি ২৬ আগস্ট সোমবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত। হেঁটে হেঁটে নগরীর কাকলীর মোড়ে এসে দু’জন ট্রাফিক কনস্টেবল ও একজন সাব ইন্সপেক্টরের দেখা পাওয়া গেল। এখানে সদর রোডে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ ছিলো আগে। এখন অনায়াসে তা চলাচল করতে দেখা গেছে। গতদিনও এখানে দুজন সাব ইন্সপেক্টর একজন ইন্সপেক্টর ছাড়াও চারজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সোমবার দায়িত্বে আছেন মাত্র চারজন। কম কেন? উত্তরে একজন কনস্টেবল তৌহিদুল জানালেন, আমাদের লোকবল এই মুহূর্তে খুবই কম। তারউপর বেশিরভাগ রিকশাচালক ও অটোচালক কথা শোনেনা এখন আর। যেখানে সেখানে যত্রতত্র পার্কিং করলেও আমরা কিছু বললে উল্টো ধমক দেয় তারা। কনস্টেবল তৌহিদুল এর বক্তব্য শেষ হতে না হতেই তার কথার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেল একজন থ্রী – হুইলার অটোচালকের আচরণে। ঠিক ট্রাফিক বক্সের বিপরীতের মোড়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং যাত্রী ওঠানামা করার পরও দাঁড়িয়ে থাকলো নতুন যাত্রীর অপেক্ষায়। পিছনে তখন তিন-চারটি অটোরিকশায় যানজট তৈরি হয়েছে। সাব ইন্সপেক্টর সবুজ এগিয়ে গিয়ে তাকে সরতে বলার সাথে সাথে সে এমন অঙ্গভঙ্গি করলো যে প্রতিবেদকেরই মনে হলো এজন্য তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত। বিনয়ের সাথে থ্রী – হুইলার চালককে সরিয়ে দিয়ে সার্জেন্ট সজীব বললেন, ট্রেনিং সম্পন্ন করে গত ৩ আগস্ট বরিশালে দায়িত্ব পালনে এসেছি। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন আসলে এখনো কঠিন। নানারকম ভয় কাজ করে। যে কারণে সন্ধ্যার পর থাকাটা নিরাপদ মনে হয়না আমাদের। যদিও গতদিন অফিসিয়াল নির্দেশনা এসেছে রাত আটটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য।
এ চিত্র শুধু বরিশালের নয়- বরিশাল বিভাগের ছয়জেলাসহ সারা বাংলাদেশের চিত্র এমনই বলে জানালেন বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ষাটোর্ধ সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন- বরিশাল নগরীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কম হলেও ১৩ জন সার্জেন্ট ছাড়াও ৪৮ জন ট্রাফিক কনস্টেবল প্রয়োজন। নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, রূপাতলী বাস টার্মিনালে আরো বেশি হলেই ভালো। কিন্তু আমি নিজেই দেখেছি- একজন রিকশাচালকও এখন উল্টো মেজাজে কথা বলে ট্রাফিক পুলিশের সাথে। রাস্তা আটকে দরজা খুলে রাখায় বাধা দিতে এলে একজন প্রাইভেট গাড়ির চালক একজন সার্জেন্টকে বলে- আপনার কাজ করেন গিয়ে। এমন সমস্যার সমাধান খুব জরুরী।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে সমন্বয়ক লেভেলের শিক্ষার্থীদের এসে কয়েকদিন ট্রাফিক পুলিশের পাশে থাকতে হবে। স্কুল কলেজের ফাস্ট ইয়ার পড়ুয়া নয়- বড়রা এসে সমস্যার সমাধান করতে পারে। অন্যথায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা- রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমন্বয়কদের একটা বৈঠক জরুরী বলে মনে করেন কাজী মিজানুর রহমান।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত বললেন- স্বাভাবিক হতে আরেকটু সময়তো লাগবেই। সকলের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। শিক্ষার্থী বা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ আচরণের আতঙ্কও রয়েছে। তবে রাত আটটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে ট্রাফিক। ইতিমধ্যেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বরিশালের সদর রোডে অটোরিকশা ও ইজিবাইক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বরিশালের ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে বৈঠক জরুরী বলে মনে করেন তানভীর আরাফাত।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ববি সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আর ট্রাফিকে দেয়া হবে না- তাদের নিয়ে অনেকে অনেক অভিযোগ করেছেন। তাই আমরা সমন্বয়করা এ নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলবো। চেষ্টা করবো জরুরী একটা সমাধান বের করতে।