Dhaka , Sunday, 27 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
এলএলবি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন কক্সবাজার আইনজীবী সহকারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বিএন”পি পালিয়ে যাওয়ার দল নয়- রক্ত ঝরাইছি তবুও হাসিনার সাথে আপোষ করি নাই “শহিদুল ইসলাম বাবুল। মধুপুরে  উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে এসইডিপি পুরস্কার বিতরণ জাতির প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও দূর্যোগ মোকাবিলায় শহীদ জিয়া সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ———– কাজী মনিরুজ্জামান মনির রূপগঞ্জে এলাকাবাসীর চাপে মুচলেকা দিয়ে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার ৭ মাদক ব্যবসায়ীর ‎মির্জাপুরে ছেলের হাতে মা খুন; আটক ছেলে ইউনুস মন্ডল বেতাগীতে আগুনে পুড়ে তিন বসতঘর ছাই-দিলেন অর্থিক অনুধান চরভদ্রাসনে জামায়েত ইসলামের সরোওয়ার হোসেনের গণসংযোগ। রূপগঞ্জে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ্য রামগঞ্জের পাউবোর  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দেশসেরার স্বীকৃতি গ্রহণ করলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন  মাইলস্টোন ট্র‍্যাজেডিতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দুর্গাপুরে দোয়া মাহফিল নোয়াখালীতে পুকুরের পানিতে ভাসছিল নারীর মরদেহ আত্ম-নিয়ন্ত্রণ: ক্ষণিকের ভুলে দীর্ঘস্থায়ী আক্ষেপ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে মাদক কারবারীকে যাবজ্জীবন: পুলিশের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ কালিয়াকৈরে বোয়ালী বিএনপির হিন্দু সমর্থকদের আলোচনা সভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত  কানাডা সফর শেষে চট্টগ্রাম ফিরলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মধুপুরে যুবককে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত- মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি লিজা, সম্পাদক তাসলিমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত রূপগঞ্জে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে অস্ত্রসহ দুই ডাকাত গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জর রূপগঞ্জে রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন- মো. বেলাল (৩৫), মো. রোমান (২০) ও মো. রাব্বানী (৩৫)। রামগঞ্জের পাউবোর  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ রামগঞ্জে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা  মাইলস্টোন  কলেজের  নিহত ও  আহতদের স্মরণে রামগঞ্জে দোয়া অনুষ্ঠিত   মাহেরিন চৌধুরীর সমাধিতে বিমান বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধা  শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে বিমান বাহিনী ও ডিসি-এসপির শ্রদ্ধা  সিলেটে বিজিবি গত এক মাসে ৪৬ কোটি ও ২৪ ঘণ্টায় ৪ কেটি টাকার চোরাচালান জব্দ করেছে  নগরীর পাঁচলাইশ থানার খুনসহ ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার  নামেই ২৫০ শয্যা, জনবল ১০০ শয্যারও কম: চিকিৎসক সংকটে ধুঁকছে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল

বান্দরবান পাহাড় ও মেঘের সাথে দুইদিন – যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল বন্ধুমহল

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 02:41:15 am, Tuesday, 22 February 2022
  • 717 বার পড়া হয়েছে

বান্দরবান পাহাড় ও মেঘের সাথে দুইদিন - যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল বন্ধুমহল

 

দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক।।

প্রকৃতির নীলাভূমি বান্দরবান। কোনো একসময় এ অঞ্চলে বানরের বসবাস ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পানি পার হয়ে পাহাড় থেকে লবণ খেতে আসত বানরের দল। ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর পাহাড়ে ফেরত যাওয়ার সময় তারা একে অপরের হাত ধরে পানি পার হতো। তা দেখতে অনেকটা বাঁধের মতোই দেখাত। সেখান থেকেই লোকমুখে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় বান্দরবান। বান্দরবানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাতে কমপক্ষে পাঁচ-ছ’দিন সময় রাখতে হবে। মাত্র দুয়েকদিনের সফরে বান্দরবান ঘুরে শেষ করা সম্ভব নয়। মেঘলা, নীলাচল, নাফাখুম, দেবতাখুম, কেওক্রাডং, ডিম পাহাড়, স্বর্ণমন্দির, থানচি, চিম্বুক, বগালেক, শৈলপ্রপাত, তিন্দু, মারায়ন তং, নীলগিরি, টাজিংডং, সাকা হাফ লং সহ আরো অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের অবস্থান বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

আমরা (২৪) চব্বিশ বন্ধু গিয়েছিলাম ঢাকা থেকে। বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল কাউন্সিল বাস টার্মিনাল থেকে রাত ১১.৩০ টায় সেন্টমার্টিন হুনডাই এসি বাস রিজার্ভ  করে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ভোর ৬.০০ টায় আমরা বান্দরবান পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখান থেকে  আমরা সবাই হোটেল গার্ডেনে উঠি। পরে তিনটি চান্দের গাড়ি কিংবা মাহিন্দ্রা নিয়ে যাওয়া হয় নীলগিরি। আমরা যেহেতু দুইদিনের জন্য গিয়েছিলাম, তাই সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখা ছিল খুবই জরুরি । তিনটি চান্দের গাড়ি সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম।

 

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল নীলগিরি। দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। একই রাস্তা দিয়েই থানচি এবং রুমা যেতে হয়। রুমার রাস্তা ধরেই বগালেকের ঠিকানা খুঁজতে হয়। নীলগিরির পথে দু’বার চেকপোস্ট পড়বে। একবার মিলনছড়িতে পুলিশ চেকপোস্ট এবং আরেকবার সায়রুর আগে সেনাবাহিনী চেকপোস্টে নিজেদের নাম ঠিকানা সব জানাতে হবে। বান্দরবান ভ্রমণে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে আসবেন। অবৈধ কোনো বস্তু, বিশেষ করে মাদক নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে না।

 

মিলনছড়ি চেকপোস্টে আকাশ ও মেঘের মিতালী আপনাকে আবেগতাড়িত হতে বাধ্য করবে। শুভ্র মেঘে পাহাড় ঢেকে যাওয়া দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ক্যামেরায় এই দৃশ্যগুলো বন্দী করতে ভুলবেন না, যদিও ক্যামেরার চেয়েও খালি চোখে হাজারগুণ সুন্দর। দূর থেকে দেখে মনে হবে, কোনো চিত্রশিল্পী তার রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন পাহাড়ের বুকে মেঘের খেলা। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি অপরূপভাবে ধরা পড়ে সেখানে।

 

মিলনছড়ি থেকে পুলিশ চেকের পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। সায়রুতে সেনাবাহিনীর চেকের পর মাঝরাস্তায় স্বেচ্ছায় আরেকবার দাঁড়িয়েছিলাম নিজেদের ফটোশ্যুটের জন্য। রাস্তের দু-ধারেই পাহাড়, পাহাড়ের বুকে অসংখ্য কলাগাছের চাষ হয়। সায়রু হিল রিসোর্টের পর বিশাল একটা রাস্তা, নেই কোনো রিসোর্ট বা জনবসতি। খাঁ খাঁ করে পুরো এলাকা। পথিমধ্যে পরিশ্রমী পাহাড়ি মানুষদের দেখা যায়, যারা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে যায়, যখন গাড়ি তাদের অতিক্রম করে যায়। অনেকেই পাহাড়ে চাষবাস করে, তাই দা-কোদাল হাতে তাদের দেখা যায়। এতে ভয় পাবার কিছু নেই।

 

এক লেনের রাস্তায় তীব্র গতিতে ছুটে যায় চান্দের গাড়ি। আপনার গাড়িকে অতিক্রম করার সময় এতই দ্রুত এগিয়ে যাবে, মনে হবে এই বুঝি আপনাকে ফেলে দিল ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে নিচে। পাহাড়ি রাস্তা থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট নিচের চোখ ধাঁধানো মোলায়েম সবুজ দৃশ্য আপনার ভ্রমণে ভিন্ন আনন্দ যোগ করবে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি ৪৬ কিলোমিটার দূরের ভ্রমণ। দু ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয় সেখানে পৌঁছাতে। ১০০ টাকা টিকেট কেটে নীলগিরি মূল স্পটে পৌঁছানোর পর মনে হবে, পাহাড় ও মেঘের মাঝখানে দু হাজার ফুট উপরে আপনার ভ্রমণে আক্ষেপ তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 

নীলগিরিতে বেলা ১১টার পর মেঘ চোখের সামনে কুয়াশার মতো উড়তে শুরু করেছিল। শরীর অতিক্রম করার সময় মনে হবে, হালকা শিরশিরে অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করবে, হাতের মুঠোয় করে কিংবা পকেটে ভরে এক টুকরো মেঘ বন্দী করে নিয়ে আসতে। পাহাড়ের বুকে মেঘের ভেলায় সাঁতার কাটার আগ্রহ জাগাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, এই মেঘগুলো শুধু চোখে দেখা এবং অনুভূতিতে করেই রাখা যায়। একদম স্বচ্ছ একটা পরিবেশের সাক্ষী হওয়ার জন্য বান্দরবান যাওয়া উচিত। নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে সীতা পাহাড়ের উপর তৈরী আসনগুলোয় বসে কয়েকটা ছবি অবশ্যই তুলবেন- সত্যিই আপনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার ফুট উপরে আছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

নীলগিরি থেকে চিম্বুক পাহাড়ের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সবাই আগে চিম্বুক পাহাড়ে ভ্রমণ করলেও আমরা প্রথমে নীলগিরি গিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের দুই দিনের সফরে মূল লক্ষ্যই ছিলো নীলগিরি দর্শন। যা-ই হোক, চিম্বুক পাহাড়ে ওঠার সময় পুরো এলাকা মেঘের আবরণে ঢেকে গিয়েছিলো। ভিডিও কিংবা ছবিতে অনেকেই কুয়াশা ভেবে ভুল করতে পারেন। মেঘ একদম দৃষ্টি সীমানার নিকটে অবস্থান করায় টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। এই বৃষ্টির মাঝে কিছুটা আতংক কাজ করলেও, দুয়েক মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর আপনি তা উপভোগ করতে শুরু করবেন। আমাদের সাথেও ঠিক তাই ঘটেছিল।

চিম্বুক পাহাড় থেকে আমাদের যাত্রা আবার শহরের দিকে। ঘড়িতে তখন প্রায় দুপুর দুটো বাজে। শহরে পৌঁছাতে আনুমানিক সাড়ে তিনটার কাছাকাছি বেজে থাকবে। পথে শৈলপ্রপাত পড়লেও তাতে এখন আর কিছুই নেই দেখার মতো। শীতকালে এই প্রপাত পানিবিহীন থাকে।

শহরে ফেরত যাওয়ার পথে ক্লান্তি নেমে এসেছিলো সবার মাঝে। একটু একটু করে ঝিমাচ্ছিলাম। পুরো রাস্তা জুড়েই মেঘ আমাদের সাথী হয়ে ছিল। মেঘের ভেতর দিয়েই আমাদের গাড়ি এগোচ্ছিলো। শহরে পৌঁছানোর পর আমাদের যাত্রা স্বর্ণমন্দিরের দিকে। পথেই সাঙ্গু নদীর অবস্থান। শীতকাল হওয়ায় সম্ভবত পানি একদম কম ছিল। স্বর্ণমন্দিরে জুতা পায়ে এবং হাফ প্যান্ট পরে ঢোকা নিষেধ। নাম স্বর্ণমন্দির হলেও সেখানে কোনো মূর্তি কিংবা স্থাপনায় স্বর্ণের ছিটেফোঁটাও নেই। অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে সেখানে। প্রতিটির উপরে সৌরজগতের গ্রহের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া ছিল।

মূল মূর্তির কাছে পূজারী ব্যতীত কারোই প্রবেশাধিকার নেই। মূর্তির স্থিরচিত্র নেওয়ার অনুমতি থাকলেও ভিডিও করার অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। কোনো তথ্য জানার থাকলেও সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভিক্ষুরা কিছুই জানায়নি। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের জবাবে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছিল। তবে মন্দিরের উপর থেকে শহরের দৃশ্যটা বেশ দারুণ চোখে আসছিল। বান্দরবানে শহরের বালাঘাটায় ছোলামুড়ির আয়োজন ছিল রাস্তার উপর। আমরা সবাই এই ছোলামুড়ির ভক্ত, তাই না খেয়ে থাকতে পারিনি। বান্দরবান শহর অনেকটাই মফস্বল ধাঁচের। আমি যেন আমার শৈশবে ফেরত চলে গিয়েছিলাম।

পরের দিন সকালে হোটেল থেকে চান্দের গাড়ি করে রওনা দিলাম নীলাচলের উদ্দেশ্যে। নীলাচল শহর থেকে মাত্র চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর উচ্চতায় ১৬০০-১৭০০ ফুট উপরে অবস্থিত।  নামার পূর্বমূহূর্তে নীলাচল পুরো নীল আকাশে ছিল সাদা মেঘের আনাগোনা। মেঘের অবস্থান এতটাই ঘন ছিল যে নীলাচলের দূরের প্রকৃতি খালি চোখে ধরা পড়ছিল না।

নীলাচলের দূরের আকাশ যতটুকু নজরে আসছিলো, মনে হচ্ছিল, মেঘ কোনো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো নতুন করে জেগে উঠছে। সবমিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ঘন্টাখানিক আগেই আমাদের সফর শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাহিন্দ্রা গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল করিম ভাইয়ের আতিথেয়তা ছিলো অসাধারণ। দারুণ একজন মানুষ তিনি। নীলাচল থেকে ফিরে বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে আমাদের সবাইকে চা খাইয়েছিলেন তিনি। তার আমরা সকল বন্ধু হোটেলে যাই, রিজার্ভ করা বাস আধঘণ্টা আগেই এসে পরেছে। ক্লান্ত শরীরে মাতুয়াইলের বন্ধুমহল হোটেল থেকে মালামাল গুছিয়ে বাসে বসে পরলো। তখন আমাদের বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

 

যাই হোক, বান্দরবান ভ্রমণ আয়োজনকারী বন্ধুমহলের জুয়েল মোল্লা, পাপ্পু, মাসুম মোল্লা , রুবেল, মামুন, ওয়াসীম, পালসার সুমন, নুরইসলাম, জুয়েল, জনি, সাইদুর, মনির সহ সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

দিনশেষে অনুভূতি ছিলো- দীর্ঘদিন পর স্বচ্ছ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিয়ে অনেকদিনের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো। প্রতি বছর তাই অন্তত কয়েকবার এমন ভ্রমণ জরুরি। ভ্রমণবিহীন আপনি আপনার ভেতরের সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে পারবেন না। আপনার দৃষ্টি ও মেধাশক্তিকে সর্বোচ্চ প্রখর করতে পারবেন না। আপনি যত বেশি ঘুরে বেড়াবেন, ততো বেশি আপনার আত্মবিশ্বাস দৃঢ়তর হবে।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

এলএলবি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন কক্সবাজার আইনজীবী সহকারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম

বান্দরবান পাহাড় ও মেঘের সাথে দুইদিন – যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল বন্ধুমহল

আপডেট সময় : 02:41:15 am, Tuesday, 22 February 2022

 

দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক।।

প্রকৃতির নীলাভূমি বান্দরবান। কোনো একসময় এ অঞ্চলে বানরের বসবাস ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পানি পার হয়ে পাহাড় থেকে লবণ খেতে আসত বানরের দল। ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর পাহাড়ে ফেরত যাওয়ার সময় তারা একে অপরের হাত ধরে পানি পার হতো। তা দেখতে অনেকটা বাঁধের মতোই দেখাত। সেখান থেকেই লোকমুখে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় বান্দরবান। বান্দরবানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাতে কমপক্ষে পাঁচ-ছ’দিন সময় রাখতে হবে। মাত্র দুয়েকদিনের সফরে বান্দরবান ঘুরে শেষ করা সম্ভব নয়। মেঘলা, নীলাচল, নাফাখুম, দেবতাখুম, কেওক্রাডং, ডিম পাহাড়, স্বর্ণমন্দির, থানচি, চিম্বুক, বগালেক, শৈলপ্রপাত, তিন্দু, মারায়ন তং, নীলগিরি, টাজিংডং, সাকা হাফ লং সহ আরো অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের অবস্থান বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

আমরা (২৪) চব্বিশ বন্ধু গিয়েছিলাম ঢাকা থেকে। বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল কাউন্সিল বাস টার্মিনাল থেকে রাত ১১.৩০ টায় সেন্টমার্টিন হুনডাই এসি বাস রিজার্ভ  করে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ভোর ৬.০০ টায় আমরা বান্দরবান পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখান থেকে  আমরা সবাই হোটেল গার্ডেনে উঠি। পরে তিনটি চান্দের গাড়ি কিংবা মাহিন্দ্রা নিয়ে যাওয়া হয় নীলগিরি। আমরা যেহেতু দুইদিনের জন্য গিয়েছিলাম, তাই সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখা ছিল খুবই জরুরি । তিনটি চান্দের গাড়ি সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম।

 

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল নীলগিরি। দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। একই রাস্তা দিয়েই থানচি এবং রুমা যেতে হয়। রুমার রাস্তা ধরেই বগালেকের ঠিকানা খুঁজতে হয়। নীলগিরির পথে দু’বার চেকপোস্ট পড়বে। একবার মিলনছড়িতে পুলিশ চেকপোস্ট এবং আরেকবার সায়রুর আগে সেনাবাহিনী চেকপোস্টে নিজেদের নাম ঠিকানা সব জানাতে হবে। বান্দরবান ভ্রমণে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে আসবেন। অবৈধ কোনো বস্তু, বিশেষ করে মাদক নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে না।

 

মিলনছড়ি চেকপোস্টে আকাশ ও মেঘের মিতালী আপনাকে আবেগতাড়িত হতে বাধ্য করবে। শুভ্র মেঘে পাহাড় ঢেকে যাওয়া দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ক্যামেরায় এই দৃশ্যগুলো বন্দী করতে ভুলবেন না, যদিও ক্যামেরার চেয়েও খালি চোখে হাজারগুণ সুন্দর। দূর থেকে দেখে মনে হবে, কোনো চিত্রশিল্পী তার রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন পাহাড়ের বুকে মেঘের খেলা। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি অপরূপভাবে ধরা পড়ে সেখানে।

 

মিলনছড়ি থেকে পুলিশ চেকের পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। সায়রুতে সেনাবাহিনীর চেকের পর মাঝরাস্তায় স্বেচ্ছায় আরেকবার দাঁড়িয়েছিলাম নিজেদের ফটোশ্যুটের জন্য। রাস্তের দু-ধারেই পাহাড়, পাহাড়ের বুকে অসংখ্য কলাগাছের চাষ হয়। সায়রু হিল রিসোর্টের পর বিশাল একটা রাস্তা, নেই কোনো রিসোর্ট বা জনবসতি। খাঁ খাঁ করে পুরো এলাকা। পথিমধ্যে পরিশ্রমী পাহাড়ি মানুষদের দেখা যায়, যারা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে যায়, যখন গাড়ি তাদের অতিক্রম করে যায়। অনেকেই পাহাড়ে চাষবাস করে, তাই দা-কোদাল হাতে তাদের দেখা যায়। এতে ভয় পাবার কিছু নেই।

 

এক লেনের রাস্তায় তীব্র গতিতে ছুটে যায় চান্দের গাড়ি। আপনার গাড়িকে অতিক্রম করার সময় এতই দ্রুত এগিয়ে যাবে, মনে হবে এই বুঝি আপনাকে ফেলে দিল ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে নিচে। পাহাড়ি রাস্তা থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট নিচের চোখ ধাঁধানো মোলায়েম সবুজ দৃশ্য আপনার ভ্রমণে ভিন্ন আনন্দ যোগ করবে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি ৪৬ কিলোমিটার দূরের ভ্রমণ। দু ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয় সেখানে পৌঁছাতে। ১০০ টাকা টিকেট কেটে নীলগিরি মূল স্পটে পৌঁছানোর পর মনে হবে, পাহাড় ও মেঘের মাঝখানে দু হাজার ফুট উপরে আপনার ভ্রমণে আক্ষেপ তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 

নীলগিরিতে বেলা ১১টার পর মেঘ চোখের সামনে কুয়াশার মতো উড়তে শুরু করেছিল। শরীর অতিক্রম করার সময় মনে হবে, হালকা শিরশিরে অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করবে, হাতের মুঠোয় করে কিংবা পকেটে ভরে এক টুকরো মেঘ বন্দী করে নিয়ে আসতে। পাহাড়ের বুকে মেঘের ভেলায় সাঁতার কাটার আগ্রহ জাগাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, এই মেঘগুলো শুধু চোখে দেখা এবং অনুভূতিতে করেই রাখা যায়। একদম স্বচ্ছ একটা পরিবেশের সাক্ষী হওয়ার জন্য বান্দরবান যাওয়া উচিত। নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে সীতা পাহাড়ের উপর তৈরী আসনগুলোয় বসে কয়েকটা ছবি অবশ্যই তুলবেন- সত্যিই আপনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার ফুট উপরে আছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

নীলগিরি থেকে চিম্বুক পাহাড়ের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সবাই আগে চিম্বুক পাহাড়ে ভ্রমণ করলেও আমরা প্রথমে নীলগিরি গিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের দুই দিনের সফরে মূল লক্ষ্যই ছিলো নীলগিরি দর্শন। যা-ই হোক, চিম্বুক পাহাড়ে ওঠার সময় পুরো এলাকা মেঘের আবরণে ঢেকে গিয়েছিলো। ভিডিও কিংবা ছবিতে অনেকেই কুয়াশা ভেবে ভুল করতে পারেন। মেঘ একদম দৃষ্টি সীমানার নিকটে অবস্থান করায় টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। এই বৃষ্টির মাঝে কিছুটা আতংক কাজ করলেও, দুয়েক মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর আপনি তা উপভোগ করতে শুরু করবেন। আমাদের সাথেও ঠিক তাই ঘটেছিল।

চিম্বুক পাহাড় থেকে আমাদের যাত্রা আবার শহরের দিকে। ঘড়িতে তখন প্রায় দুপুর দুটো বাজে। শহরে পৌঁছাতে আনুমানিক সাড়ে তিনটার কাছাকাছি বেজে থাকবে। পথে শৈলপ্রপাত পড়লেও তাতে এখন আর কিছুই নেই দেখার মতো। শীতকালে এই প্রপাত পানিবিহীন থাকে।

শহরে ফেরত যাওয়ার পথে ক্লান্তি নেমে এসেছিলো সবার মাঝে। একটু একটু করে ঝিমাচ্ছিলাম। পুরো রাস্তা জুড়েই মেঘ আমাদের সাথী হয়ে ছিল। মেঘের ভেতর দিয়েই আমাদের গাড়ি এগোচ্ছিলো। শহরে পৌঁছানোর পর আমাদের যাত্রা স্বর্ণমন্দিরের দিকে। পথেই সাঙ্গু নদীর অবস্থান। শীতকাল হওয়ায় সম্ভবত পানি একদম কম ছিল। স্বর্ণমন্দিরে জুতা পায়ে এবং হাফ প্যান্ট পরে ঢোকা নিষেধ। নাম স্বর্ণমন্দির হলেও সেখানে কোনো মূর্তি কিংবা স্থাপনায় স্বর্ণের ছিটেফোঁটাও নেই। অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে সেখানে। প্রতিটির উপরে সৌরজগতের গ্রহের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া ছিল।

মূল মূর্তির কাছে পূজারী ব্যতীত কারোই প্রবেশাধিকার নেই। মূর্তির স্থিরচিত্র নেওয়ার অনুমতি থাকলেও ভিডিও করার অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। কোনো তথ্য জানার থাকলেও সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভিক্ষুরা কিছুই জানায়নি। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের জবাবে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছিল। তবে মন্দিরের উপর থেকে শহরের দৃশ্যটা বেশ দারুণ চোখে আসছিল। বান্দরবানে শহরের বালাঘাটায় ছোলামুড়ির আয়োজন ছিল রাস্তার উপর। আমরা সবাই এই ছোলামুড়ির ভক্ত, তাই না খেয়ে থাকতে পারিনি। বান্দরবান শহর অনেকটাই মফস্বল ধাঁচের। আমি যেন আমার শৈশবে ফেরত চলে গিয়েছিলাম।

পরের দিন সকালে হোটেল থেকে চান্দের গাড়ি করে রওনা দিলাম নীলাচলের উদ্দেশ্যে। নীলাচল শহর থেকে মাত্র চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর উচ্চতায় ১৬০০-১৭০০ ফুট উপরে অবস্থিত।  নামার পূর্বমূহূর্তে নীলাচল পুরো নীল আকাশে ছিল সাদা মেঘের আনাগোনা। মেঘের অবস্থান এতটাই ঘন ছিল যে নীলাচলের দূরের প্রকৃতি খালি চোখে ধরা পড়ছিল না।

নীলাচলের দূরের আকাশ যতটুকু নজরে আসছিলো, মনে হচ্ছিল, মেঘ কোনো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো নতুন করে জেগে উঠছে। সবমিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ঘন্টাখানিক আগেই আমাদের সফর শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাহিন্দ্রা গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল করিম ভাইয়ের আতিথেয়তা ছিলো অসাধারণ। দারুণ একজন মানুষ তিনি। নীলাচল থেকে ফিরে বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে আমাদের সবাইকে চা খাইয়েছিলেন তিনি। তার আমরা সকল বন্ধু হোটেলে যাই, রিজার্ভ করা বাস আধঘণ্টা আগেই এসে পরেছে। ক্লান্ত শরীরে মাতুয়াইলের বন্ধুমহল হোটেল থেকে মালামাল গুছিয়ে বাসে বসে পরলো। তখন আমাদের বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

 

যাই হোক, বান্দরবান ভ্রমণ আয়োজনকারী বন্ধুমহলের জুয়েল মোল্লা, পাপ্পু, মাসুম মোল্লা , রুবেল, মামুন, ওয়াসীম, পালসার সুমন, নুরইসলাম, জুয়েল, জনি, সাইদুর, মনির সহ সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

দিনশেষে অনুভূতি ছিলো- দীর্ঘদিন পর স্বচ্ছ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিয়ে অনেকদিনের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো। প্রতি বছর তাই অন্তত কয়েকবার এমন ভ্রমণ জরুরি। ভ্রমণবিহীন আপনি আপনার ভেতরের সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে পারবেন না। আপনার দৃষ্টি ও মেধাশক্তিকে সর্বোচ্চ প্রখর করতে পারবেন না। আপনি যত বেশি ঘুরে বেড়াবেন, ততো বেশি আপনার আত্মবিশ্বাস দৃঢ়তর হবে।