
মাকসুদুল হোসেন তুষার স্টাফ রিপোর্টার,
রূপগঞ্জে ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা-গুলি, যুবলীগ
নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যবসায়ী তানভীর হোসেন মিলন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় যুবলীগ নেতা রায়হান কবির সুমনের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। গত ২০ মার্চ ব্যবসায়ী তানভীর হাসান মিলন বাদী হয়ে তার বাড়িতে যুবলীগ নেতা রায়হান সুমন তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের বিরুদ্ধে বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর ও গুলি বর্ষণের অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জন-নিরাপত্তা বিভাগে একটি লিখিত আবেদন করেন। পরে গত ৫ মে অভিযোগটি আমলে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় গত ৫ মে উক্ত ঘটনার আইনগত ব্যাবস্থা নিতে পুলিশের আইজিপিকে একটি লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় ব্যবসায়ী তানভীর হাসান মিলনের অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তদন্তের নির্দেশের পরও মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম আজাদ চার্জশীট থেকে যুবলীগ নেতা রায়হান কবীর সুমন ও তার বাবা জাহাঙ্গীর কবির ভুইয়ার নাম বাদ দিয়ে দেন। যুবলীগ নেতার নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার খাদুন এলাকার জাহাঙ্গীর কবির ভূইয়ার বড় ছেলে রায়হান কবির ভূইয়া সুমন জাপানে বসবাস করেন। সে জাপান শাখা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সুমন সেখানে হুন্ডি ব্যবসা করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এছাড়া মোটা টাকার মাধ্যমে আওয়ামীলীগের সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের কাছের মানুষ বনে যান যুবলীগ নেতা সুমন। গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতিটি নির্বাচনের মোটা অংকের অর্থের যোগানদাতা ছিলো সুমন। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে সুমন দেশে চলে এসে গাজী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহন করতো। সুমন ও তার পরিবারের লোকজনের অত্যাচারের খাদুন এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়ে। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঝেও সুমন দেশে চলে আসেন। দেশে এসেই ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অর্থের যোগান দিতে থাকে। ৫ ই আগষ্ট সরকার পতনের পরও থামেনা সুমন ও তার পরিবারের লোকজনের বর্বরতা। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর সুমন ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ব্যবসায়ী তানভীর হাসান মিলনের জমি দখল করতে যায়। এসময় মিলন ও তার লোকজন বাঁধা প্রদান করলে সুমন ও তার লোকজন মিলনের বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও তাকে হত্যা করতে কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। এ ঘটনায় তানভীর হাসান মিলন বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা সুমনসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার হওয়ার এক সপ্তাহের মাঝে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সুমন। মামলাটির তদন্তের দেওয়া হয় এসআই আবুল কালাম আজাদকে।
এ ব্যাপারে তানভীর হাসান মিলন অভিযোগ করে বলেন, যুবলীগ নেতা সুমন জোর পূবর্ক আমার বাড়ি জমি সন্ত্রাসী দিয়ে দখল করতে চায়। বর্তমানে সে আমাকে নতুন কোন ঘটনায় ফাঁসানোর জন্যে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাদের সাথে আমার ছবি এডিট করে প্রচার করছে এবং আমার নামে মিথ্যা প্রোপাকান্ডা ছড়ানো হচ্ছে অথচ আমি বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মদলের রূপগঞ্জ থানার কমিটির সহ-সভাপতি। আমি ন্যায় বিচার পেতে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আবেদন করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আমার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিলেও তদন্ত ছাড়াই মামলার চার্জশীট থেকে সুমনের নাম বাদ দিয়ে দেন। এ ঘটনার পূর্ন তদন্ত ও আওয়ামীলীগের ফ্যাসিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলা তদন্ত করে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাইনি। এ কারণে তাদের নাম চার্জশীটে দেওয়া হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ ব্যাপারে ’গ’ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই তাদের নাম চার্জশীট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।