
মো: আব্দুর রহিম শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরে কালোজিরার মধু আহরণ ও মৌবাক্সের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মৌ খামারিরা। ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় অন্যান্য মধুর চাইতে কালোজিরার মধুর বাজার দাম ভালো পাচ্ছেন মৌ চাষিরা। আর জমির পাশে মৌ বাক্স বসানোয় বেড়েছে ফসলের উৎপাদন। এতে খুশি স্থানীয় কৃষক ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌ চাষিরা। উদ্যোক্তারা বলছেন মৌ খামারি ও কৃষি অধিদপ্তরের সমন্বয় ঘটনা গেলে জেলা থেকে ১০০ কোটি টাকা মধু আহরণ সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা কলোজিরা চাষের জন্য বিখ্যাত। জেলার ৬ টি উপজেলায় কম বেশি কালোজিরা চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ এখন কালোজিরার আবাদ করা হচ্ছে। আর কালোজিরার ফুলকে উপলক্ষ করে জমিগুলোর পাশেই বসানো হয়েছে সারি সারি মৌবাক্স। ফুলের পাপড়ির মাঝে রেনু থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি, আর মৌ চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌবাক্সের পরিচর্যা আর মধু আহরণে। চলতি মৌসুমে কালোজিরার মধু আহরণের জন্য ২ হাজার ১০ টি মৌবাক্স বসানো হয়েছে। এ থেকে মধু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৯ হাজার ৬৫০ কেজি। কালোজিরার মধু আহরণ ভালো হওয়ায় আর তুলনামূলক দাম বেশি পাওয়ায় খুশি বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌ খামারিরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের অন্তত ৮ টি স্থানে চলছে কালোজিরার মধু আহরণ। এছাড়াও জেলার সেনেরচড়, বড় গোপালপুর, পালেরচর, জয়নগর, বিলাশপুর, নড়িয়ার চাকধ এলাকায় রয়েছে কালোজিরার আবাদ ও মৌয়ালদের বিচরণ। এসব জায়গায় মধু আহরণের জন্য সাতক্ষীরা, মাগুরা, খুলনা, সিলেট, শেরপুর, দিনাজপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মৌ খামারিরা এসে আস্তানা গেড়েছেন।
জাজিরার কয়েকটি মৌ খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালোজিরা খেতের পাশে সারি সারি মৌবাক্স বসানো হয়েছে। শ্রমিক মৌমাছিরা মধু আহরণ করে মৌবাক্সগুলোর ছিদ্রপথ দিয়ে ঢুকছে জমা করার জন্য। জমা করে আবার বের হয়ে যাচ্ছে মধু সংগ্রহ করার জন্য, তারা বিরামহীনভাবে চালাচ্ছে তাদের এই মধু আহরণের কর্মযজ্ঞ। মৌচাষিরাও ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে মৌবাক্সগুলোর দেখাশোনা করছেন। প্রত্যেকটি খামারে ১৫০ থেকে ২০০ টি মৌবাক্স রয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে জাজিরায় টিন্ডটি এলাকায় কালোজিরার মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন তরুণ খামারী তরুণ কুমার মন্ডল। গত ৫ বছর ধরে বিভিন্ন জেলায় মধু সংগ্রহের কাজ করে আসছেন তিনি। কালোজিরার মৌসুম এলে শরীয়তপুরের এই এলাকা ঘাটি গাড়েন তিনি। অন্যান্য মধুর চাইতে কালোজিরার মধুর দাম ভালো পাওয়ায় খুশি এই মৌ চাষি।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালোজিরার জন্য শরীয়তপুর বিখ্যাত। এখানে কালোজিরার অনেক ভালো মধু পাওয়া যায়। প্রতি মৌসুমে আমরা এখানে কালোজিরার মধু সংগ্রহ করতে আসি। এ বছর আমরা তিনজন এখানে এসেছি। আমি ১৫০ টি বাক্স বসিয়েছি
যা থেকে প্রত্যেকদিন দশ কেজি করে মধু পাই। বর্তমান বাজারে এ মধুর চাহিদা অনেক বেশি। কাস্টমারের তুলনায় মধু দিতে হিমশিম খাই। এ মধু পাইকারি হাজার টাকা কেজি। এতে আমরা অনেক লাভবান।
মৌমাছির পদচারণায় আগের তুলনায় ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় কৃষক মান্নান মাদবর বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে এভাবে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করতে দেখিনি। মৌ খামারিরা প্রথম প্রথম যখন বাক্স নিয়ে আসলে আমরা ভেবেছিলাম মৌমাছি ফুলে বসলে ফসলের ক্ষতি হবে। এখন দেখি আমাদের ক্ষতি হয় না আরও ফসল ভালো হয়। এখন মৌ খামারিরা আমাদের এলাকায় আসলে তাদের নিরাপদে বসার ব্যবস্থা করে দেই।
মৌ খামারী শাহীদুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে কালোজিরা চাষ বেশি হওয়ায় পরিমাণে বেশি মধু পাওয়া যায়। অন্যান্য মধুর চাইতে কালোজিরার মধু উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে পারি। তাই প্রতি মৌসুমে আমরা শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় মৌ বাক্স স্থাপন করি। কালোজিরার মধু সংগ্রহ শেষ হলে আমরা দিনাজপুরে লিচু ফুলের মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রওনা করবো।
তিনি আরোও বলেন, কালোজিরার মধুকে জেলার ব্রান্ডি পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষি অফিস ও খামারিদের সমন্বয় ঘটানো গেলে জেলা থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকায় মধু উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন মধু আহরণকারী প্রতিষ্ঠান হাজকা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী শাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শরীয়তপুরে উৎপাদিত কালোজিরার মধুতে অধিক পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। এজন্য চিকিৎসকরা এই মধুকে খাওয়ার জন্য প্রেফার করে। এখানকার মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাইলে বহিঃবিশ্বে রপ্তানি সম্ভব। এছাড়াও খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ঘটানো গেলে অন্তত ১০০ কোটি টাকার মধুর আহরণ সম্ভব।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, জেলায় কালোজিরা থেকে বেশ ভালো মধু আহরণ হয়। আমরা সব সময় ফসলের আবাদ বাড়াতে মৌয়ালদের ফসলি জমির পাশে বসতে দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ করে যাচ্ছি।