আবু তালেব
লালপুর -নাটোর -প্রতিনিধি।।
নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে ভেজাল গুড় উৎপাদন। উপজেলার লালপুর- বালিতিতা ইসলামপুর- রায়পুর- হাগরাগাড়ি- ওয়ালিয়া- কেশবপুর- মোহরকয়া ও ঈশ্বরপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য গুড় তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় চিটাগুড়- চিনি- কাপড়ে ব্যবহৃত রং- ময়দা- হাইড্রোজ- পাথরের চুন ও ফিটকিরি ব্যবহার করে খেজুরের পাটালি গুড় তৈরি করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- এই ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ. কে. এম. শাহাব উদ্দীন বলেন- ভেজাল গুড় খেলে আলসার- ডায়রিয়া- কলেরাসহ পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কেমিক্যালযুক্ত গুড় নিয়মিত খেলে কিডনি- হার্ট- ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেজাল গুড় উৎপাদন বন্ধে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হলেও তাতে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান- গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ মিশিয়ে খেজুরের গুড় নামে বাজারজাত করছে। উৎপাদিত এই ভেজাল গুড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ- চট্টগ্রাম- খুলনা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও- মেহেদী হাসান জানান- দোকান বা আড়তে অভিযান চালিয়ে ভেজাল শনাক্ত করা কঠিন। এজন্য নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ টেস্টিং ল্যাব প্রয়োজন। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বাড়ি ও কারখানাগুলোতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গুড় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা সাব্বির আহমেদ বলেন- আমি খাঁটি গুড় তৈরি করছি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছি। কিন্তু ভেজাল গুড় কম দামে বাজারে আসায় আমাদের বিক্রি কমে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা মনে করেন- আড়তদারদের সহযোগিতা ছাড়া ভেজাল গুড় উৎপাদন সম্ভব নয়। তাদের মতে- কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় নিজেরাই এসব কারখানা স্থাপন করেছেন। স্থানীয়দের দাবি- শুধুমাত্র কারখানার শ্রমিক ও মালিক নয়- আড়তদারদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
লালপুর ঐতিহ্যবাহী গুড় উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। -ঐতিহ্য ও সম্ভাবনায় ভরপুর- চিনি-গুড়ে সুবাসিত উষ্ণতম লালপুর– এই স্লোগান নিয়ে গর্বিত এই অঞ্চলের গুড় আজ ভেজালের কারণে তার সুনাম হারাচ্ছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা- প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে লালপুরের ঐতিহ্যবাহী গুড় আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।