অরবিন্দ রায়
স্টাফ রিপোর্টার।।
বুধবার ২ অক্টোবর ২০২৪ শুভ মহালয়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ভোরে শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠে মর্ত্যলোকে দেবী দূর্গাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। শুরু হবে দেবীপক্ষ। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ তিথিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মহালয়ার দিন কৈলাসে শ্বশুরালয় ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পৃথিবীতে আসেন দেবী দুর্গা। এ দিন থেকে দুর্গাপূজার ক্ষনগণনাও শুরু হয়।
মহালয়া হল পিতৃপক্ষ এবং দেবী পক্ষের সন্ধিক্ষণ। মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গাপূজার সূচনা হয়। দেবী দুর্গা এই দিনে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন বলে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ বিশ্বাস করেন।
মহালয়া শব্দটির অর্থ মহান যে আলয় বা আশ্রয়। মহালয়া স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মহালয়ার দিনে পিতৃপক্ষের অবসান হয় ও আমাবস্যার অন্ধকার দূর হয়ে আলোকময় দেবিপক্ষে শুরু হয়।
পুরানে বলা আছে মহালয়ার দিন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান । ব্রক্ষার বরপ্রাপ্ত কোনো মানুষ বা দেবতার পক্ষে মহিষাসুরকে বধ করা সম্ভব ছিল না। অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর তার ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত হয়ে ওঠে । একে একে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। ব্রক্ষা, বিষ্ণু ও শিব এয়ী তখন বাধ্য হয়ে মিলিতভাবে মহামায়া রূপে অমোঘ নারী শক্তি সৃষ্টি করলেন। দেবতাদের দান করা ১০ টি অস্ত্রে সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা সুসজ্জিত হয়ে উঠেন। ৯ দিন ব্যাপী ঘোরতর যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন।
মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা এই মর্ত্যে অবতরণ করেছেন বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন। পিতৃপুরুষের অবসান দেবীপক্ষের সূচনার দিনটিকেই মহালয়া হিসেবে উদযাপন করা হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গঙ্গায় গিয়ে তিন পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় জল ও তেল দিতে হয়। মহালয়া থেকে শুরু হয় প্রতিবদ, প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, এরপর থেকে দেবীর অকাল বোধন।
পুরাণ অনুযায়ী- জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন।
স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্হানে অবস্হিত।
পিতৃলোকের শাসক হলেও মৃত্যু দেবতা যম।
পরবর্তী প্রজন্মে একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। পরমাত্মা নীল হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রদ্ধানুষ্ঠানের উর্ধ্বে উঠে যান।
পুরান মতে, ব্রক্ষার নির্দেশে পিতৃপুরুষেরা ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। সত্যি এজন্য গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ ও মাননের তর্পন করা হয়।
মহিষাসুরকে বধ করে অশুভ শক্তি ও শুভ শক্তি আরাধনায় মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহালয়া মানে তিন পুরুষের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ দিন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর অধীর আগ্রহে মহালয়ার দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
বিশ্বের সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির উদয় হোক। সবাইকে শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।